হাজার মাইল দূরে থেকেও দেশ ও পরিবারের টান যেন ঈদের সকালে আরও প্রবল হয়ে ধরা দেয় প্রবাসীদের মনে। স্বজনহীনতা, দায়িত্বের চাপ ও কর্মঘণ্টার বেড়াজালে প্রবাসীদের ঈদ যেন শুধুই এক নিঃসঙ্গ অপেক্ষা—স্মৃতি, ত্যাগ আর তীব্র আবেগের দিন।
গ্রিসের রাজধানী এথেন্সের বাংলাদেশি অধ্যুষিত ওমোনিয়া এলাকায় এক রেস্টুরেন্টে শুক্রবার (৭ জুন) ঈদের দিনে দেখা গেল, কয়েকজন প্রবাসী বাংলাদেশি কর্মস্থলের ফাঁকে ভিডিও কলে পরিবারের সঙ্গে কথা বলছেন। কারও চোখে অশ্রু, কারও মুখে চাপা হাসি, আবার কারও হৃদয়ে কষ্টের ভার। প্রবাসী রফিকুল ইসলাম বলেন, “এ নিয়ে ১০টা ঈদ কাটালাম পরিবারের বাইরে। ঈদের সকালে নামাজ পড়ে আব্বা-আম্মার জন্য দোয়া করি। চোখ ভিজে যায়। মনে হয়, কেন এত দূরে এলাম?”
আরেক প্রবাসী জুবায়ের আহমেদ বলেন, “কখনো কখনো ঈদের দিনেও কাজে থাকতে হয়। জামাতে নামাজ পড়ার সুযোগও হয় না। মা ফোনে কান্না করে বলেন, ‘তুই ঈদের নামাজ পড়লি তো?’ আমি তখন কিছুই বলতে পারি না। প্রবাসের ঈদ মানুষকে আরও একা করে তোলে।”
অলিউর রহমান নামের এক প্রবাসী একটি দ্বীপে রেস্টুরেন্টে কাজ করেন। তবে এবারের ঈদে রাজধানী এথেন্সে এসে বাংলাদেশিদের সঙ্গে জামাতে অংশ নিয়েছেন। তিনি বলেন, “হাজারো মানুষের মাঝেও ঈদের দিন নিজেকে সবচেয়ে একা লাগে। এমনও দিন গেছে, কেউ এসে বলে না ‘ঈদ মোবারক।’”
নারী প্রবাসীদের অনুভূতিও ভিন্ন নয়। পর্তুগাল প্রবাসী তন্নী আক্তার, যিনি এক বছর আগে পারিবারিক ভিসায় দেশ ছাড়েন, বলেন, “নারী হয়ে প্রবাসে থাকা এমনিতেই কঠিন, ঈদের দিনটা আরও বেশি কষ্ট দেয়। মা ও বোন ভিডিও কলে বলল—‘তুমি না থাকলে ঈদ ভালো লাগে না।’ তখন আর চোখের পানি ধরে রাখতে পারিনি।”
এমন অসংখ্য গল্প মিলে মিশে তৈরি হয় প্রবাসীদের ঈদ, যেখানে আনন্দ যেমন থাকে, তেমনি থাকে না বলা অভাব আর অশ্রুসিক্ত অনুভব।
এদিকে, এদিন এথেন্সের বোটানি এলাকার সরকার অনুমোদিত জামে মসজিদে অনুষ্ঠিত হয় ঈদুল আজহার জামাত। সেখানে বাংলাদেশি প্রবাসীদের পাশাপাশি নানা দেশের মুসলিম প্রবাসীরা অংশ নেন। পুরুষ ও নারীদের জন্য ছিল আলাদা নামাজের ব্যবস্থা। নারী ও শিশুদের অংশগ্রহণ ছিল চোখে পড়ার মতো। সকাল থেকে ঘণ্টার ব্যবধানে একাধিক জামাত অনুষ্ঠিত হয়।
বাংলাদেশ
কমিউনিটি ও বিভিন্ন প্রবাসী
সংগঠনের নেতারা সেখানে নামাজ আদায় করেন এবং
প্রবাসীদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন।
প্রবাসীদের ঈদ মানে শুধু
উৎসব নয়, বরং তা
একদিকে দায়িত্বের বোঝা, অন্যদিকে স্বজন হারানোর হাহাকার। ফোনের স্ক্রিনে সন্তানের মুখ, মায়ের অশ্রু
আর মনে চাপা কষ্ট—এই নিয়েই প্রবাসে
কাটে ঈদের দিন।
You Must be Registered Or Logged in To Comment লগ ইন করুন?