বন্দিত্ব, নির্যাতন আর মুক্তিপণ; রেমিট্যান্সে স্বস্তি মিললেও দালাল চক্র থেকে প্রবাসীদের মুক্তি মেলেনি
২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম ১০ মাস ১১ দিনে দেশে রেমিট্যান্স প্রবাহ ২৫ বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করেছে, যা এখন পর্যন্ত কোনো একক অর্থবছরে রেমিট্যান্স আয়ের সর্বোচ্চ রেকর্ড। অর্থবছর শেষ হওয়ার আগেই এ মাইলফলক অর্জন হয়েছে। যদিও প্রবাসীদের অবস্থা আগে যেমন ছিল পরিস্থিতি দিনে দিনে আরও ভয়ঙ্কর হয়ে উঠেছে। অবৈধ অভিবাসন, দালাল চক্রের ফাঁদে পড়ে কেউ ফিরে আসছে, কেউ নিখোঁজ হচ্ছে আবার কারো জীবন-লীলা সাঙ্গ হচ্ছে।
বিশ্বাস করে নিঃস্ব
উন্নত জীবনের আশায় ইতালি যাওয়ার স্বপ্ন দেখছিলেন ফরিদপুরের সালথার দুই ভাই আলমগীর সরদার ও ফারুক সরদার। সেই স্বপ্নের সুযোগ করে দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে পার্শ্ববর্তী হরিনা গ্রামের দালাল নিরব কুমার সরকার ওরফে নিবিড়ের হাতে তুলে দেন ৩০ লাখ টাকা। কিন্তু টাকা নেওয়ার পর ওই দালাল পাড়ি জমান সৌদি আরবে। ভুক্তভোগী দুই ভাই মাঝারদিয়া ইউনিয়নের বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. আতিকুর রহমান সরদারের সন্তান। দালাল নিবিড় একই ইউনিয়নের মৃত ননী গোপাল সরকারের ছেলে।
মুক্তিযোদ্ধা বাবার সঙ্গে ভুক্তভোগী দুই ভাই আলমগীর ও ফারুক
ফারুক সরদার বলেন, “পেটের দায়ে জীবনের ২৭ বছর কাটিয়েছি মালয়েশিয়ায়। ভাই আলমগীরও ১৬ বছর ছিল বিদেশে। সারা জীবনের কষ্টে অর্জিত ৩০ লাখ টাকা জমিয়ে দেশে ফিরি। তখনই পুরনো পরিচিত নিবিড় আমাদের ইতালিতে পাঠানোর প্রস্তাব দেয়। সে জানায়, ৯০ হাজার টাকা বেতনে চাকরি হবে সেখানে। নিবিড়ের কথায় আস্থা রেখে কয়েক দফায় তাকে ৩০ লাখ টাকা দিই। এর মধ্যে ২০ লাখ টাকা ব্যাংক অ্যাকাউন্টে পাঠানো হয়েছে, যার প্রমাণ আমাদের কাছে আছে। তবে টাকা নেওয়ার পর থেকেই দালাল নানা অজুহাতে সময়ক্ষেপণ করতে থাকে। শেষ পর্যন্ত সৌদি আরব চলে যায়। বাধ্য হয়ে দুই ভাই আলাদাভাবে নিবিড় ও তার দুই ভাইয়ের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করেন।
আলমগীরের বাবা বীর মুক্তিযোদ্ধা আতিকুর রহমান সরদার বলেন, আমার দুই ছেলে আজ নিঃস্ব। মামলা করার পর নিবিড় বিদেশ থেকে ভুয়া ফেসবুক আইডি খুলে আমাদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে, হুমকি দিচ্ছে। আমি থানায় অভিযোগ করেছি। প্রধানমন্ত্রীর কাছে অনুরোধ, যেন আমার ছেলেদের টাকা ফেরত পাই।
পরিকল্পনা ছিল ইতালি, বাস্তবতা বন্দি শিবির
প্রায় এক কোটি ২৮ লাখ টাকা খরচ করেও ইউরোপের স্বপ্নপূরণ হয়নি শরীয়তপুরের দুই যুবকের। বরং দালালের ফাঁদে পড়ে লিবিয়ায় আটকে রেখে ভয়াবহ নির্যাতনের শিকার হয়ে অবশেষে দেশে ফিরেছেন তারা। ভেদরগঞ্জ উপজেলার ছয়গাঁও ইউনিয়নের মনুয়া গ্রামের আলতাফ হোসেন ছৈয়াল (৩০) ও আইজারা গ্রামের আহসান উল্লাহ বলি (৩০) দালালদের মাধ্যমে লিবিয়া হয়ে ইতালি যাওয়ার চেষ্টা করছিলেন। বর্তমানে তারা শারীরিক ও মানসিকভাবে বিপর্যস্ত অবস্থায় বাড়িতে অবস্থান করছেন। আলতাফ হোসেনের পরিবার জানায়, স্থানীয় দালাল হারুন লস্করের মাধ্যমে ইতালিতে ভালো চাকরির আশায় গত বছরের ১৬ সেপ্টেম্বর আলতাফ রওনা হন। ভারতের পথে শুরু হয়ে শ্রীলঙ্কা, মিশর হয়ে পৌঁছান লিবিয়ায়। বিভিন্ন পর্যায়ে দালালদের হাতে মোট ৬৪ লাখ টাকা তুলে দেয় পরিবার। লিবিয়ায় পৌঁছানোর পর থেকেই শুরু হয় বন্দিজীবন। একের পর এক ক্যাম্পে আটকে রাখা হয় আলতাফকে। পরে এক নাটকীয় কায়দায় তাকে লিবিয়ার পুলিশের হাতে তুলে দেয় চক্রটি। এরপর আবার তাকে ‘উদ্ধার’ করে নিজেদের হেফাজতে নিয়ে শুরু করে অকথ্য নির্যাতন। পরিবারকে ভয় দেখিয়ে ফোনে মুক্তিপণের দাবি জানাতে বাধ্য করা হয় আলতাফকে। পরিবারের দেওয়া তথ্যে জানা যায়, আলতাফকে তিন দফায় সমুদ্রে পাঠানো হয় ‘ইতালির পথে’ বলে। প্রতিবারই চক্রটি তাকে সাগর থেকে উদ্ধার করে ফের বন্দি করে এবং আরও অর্থ দাবি করে। মোট ৬৪ লাখ টাকার বেশি আদায় করে তারা।
হোসেন ছৈয়াল ও আহসান উল্লাহ বলি
আরেক ভুক্তভোগী আহসান উল্লাহ বলির অভিজ্ঞতা ছিল আরও ভয়ংকর। লিবিয়ায় পৌঁছেই তার পাসপোর্ট কেড়ে নেয়া হয়। অন্ধকার কক্ষে আটকে রেখে নিয়মিত মারধর করা হতো। বৈদ্যুতিক শক, প্লাস দিয়ে নখ উপড়ে ফেলা, বৈদ্যুতিক তার দিয়ে পেটানো এবং অনাহারে রাখা ছিল তার নিত্যদিনের অভিজ্ঞতা। গত ৭ মে মুমূর্ষু অবস্থায় দেশে ফেরেন আহসান। তার পরিবারের পক্ষ থেকে জানানো হয়, চক্রটি তাদের কাছ থেকে আদায় করেছে মোট ৬৫ লাখ টাকা। আহসান উল্লাহ বলি ভেদরগঞ্জ থানায় ছয়গাঁও বাংলাবাজার এলাকার হারুন লস্কর, তার ছেলে পাপ্পু লস্কর ও ইমন লস্করের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ছয়গাঁও ইউনিয়ন থেকেই লিবিয়া হয়ে ইতালি যাওয়ার পথে গত দুই মাসে আরও অন্তত ১১ জন যুবক নিখোঁজ রয়েছেন।
কানাডার স্বপ্ন, সৌদি আরবে মৃত্যু
সৌদি আরবের দাম্মাম শহরের একটি ফ্ল্যাটে দুই বাংলাদেশি প্রবাসী ভাই নির্মমভাবে খুন হয়েছেন। নিহতরা হলেন গাজীপুর মহানগরের উত্তর ভুরুলিয়ার আদর্শপাড়ার কামরুজ্জামান কাকন (২৬) ও কামরুল ইসলাম সাগর (২২)। সম্পর্কে তারা আপন ভাই। গত ২১ মে সৌদি পুলিশের বরাতে জানা যায়, দাম্মামের একটি বাসায় সকালে প্রবেশের পর ওই দুই ভাইয়ের মরদেহ উদ্ধার করা হয় দুপুরে, যখন ফ্ল্যাটের দরজার নিচ দিয়ে রক্ত গড়িয়ে পড়তে দেখে পুলিশকে খবর দেন ফ্ল্যাট মালিক। ঘটনার সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে একজন বাংলাদেশি যুবক ‘মঞ্জু’কে শনাক্ত করেছে পুলিশ, যাকে সন্দেহ করা হচ্ছে হত্যাকাণ্ডের মূল সহযোগী হিসেবে।
পরিবার সূত্রে জানা যায়, বড় ছেলে কাকন ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করে চাকরির খোঁজে ছিলেন। এ সময় ঢাকার সামিয়া ইন্টারন্যাশনালের পরিচালক বাহার উদ্দিন কাকনকে কানাডা পাঠানোর প্রস্তাব দেন এবং অগ্রিম ৩ লাখ টাকা নেন। কিন্তু কানাডায় না পাঠিয়ে পরে ছোট ছেলে সাগরকে সৌদি পাঠানোর কথা বলেন, যার জন্য নেওয়া হয় ৪ লাখ ৩০ হাজার টাকা। সৌদিতে পৌঁছানোর পর সাগরকে আটকে রেখে আরও ৪ লাখ টাকা দাবি করা হয়। পরে বড় ছেলে কাকনকেও ৫ লাখ ৩০ হাজার টাকায় সৌদিতে নেওয়া হয়, মদিনা ইউনিভার্সিটিতে চাকরির আশ্বাস দিয়ে। কিন্তু বাস্তবে দুই ভাইকেই আটকে রেখে খাবার ডেলিভারির মতো শ্রমিকের কাজে লাগানো হয়, অনাহারে-অর্ধাহারে এক ঘরে বাস করতে বাধ্য করা হয়।
কামরুজ্জামান কাকন ও কামরুল ইসলাম সাগর
নিহতদের বাবা মোশারফ হোসেন জানান, তার ছেলেদের আটকে রেখে প্রতারক বাহার উদ্দিন একাধিকবার টাকা আদায় করেন। এমনকি মোশারফ হোসেনকে উমরা ভিসায় সৌদি নিয়ে গিয়ে নিজের সঙ্গে একটি ‘ব্যাগ’ নিয়ে আসতে বলেন, যা ঢাকার ইমিগ্রেশনে তল্লাশিতে ধরা পড়ে। পরে বাহার দাবি করেন, ব্যাগে ছিল ১৩ লাখ টাকার স্বর্ণ, যা ফেরত না দিলে ছেলেদের মেরে ফেলার হুমকি দেন।
পরবর্তীতে বাংলাদেশে ফিরে মোশারফের পরিবারের ওপর চক্রের সদস্যরা হামলা চালায়, অস্ত্র উঁচিয়ে তার বৃদ্ধ বাবাকে জিম্মি করে। এ ঘটনায় গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের সদর থানায় সাধারণ ডায়েরি করা হয়।
দালালের আশ্বাস, মৃত্যুর ফাঁদ
ইতালি যাওয়ার স্বপ্ন নিয়ে দেশ ছেড়েছিলেন চুয়াডাঙ্গার এক তরুণ। কিন্তু লিবিয়ায় গিয়ে মানবপাচারকারী ও মাফিয়া চক্রের হাতে পড়েন তিনি। দীর্ঘ ১৬ মাসের বন্দিদশা, চরম নির্যাতন এবং মুক্তিপণের দাবির পর অবশেষে মারা গেলেন ১৯ বছর বয়সী জুনায়েদ হাসান প্লাবন। নিহত প্লাবন চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা উপজেলার নাগদাহ ইউনিয়নের খেজুরতলা গ্রামের দিনমজুর দমসের আলীর ছেলে। গত ১৪ মে তার মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছে পরিবার।
পরিবার জানায়, পাশের বেলগাছি গ্রামের লিবিয়া প্রবাসী সাগরের সঙ্গে চুক্তি হয় যেভাবেই হোক প্লাবনকে ইতালিতে পৌঁছে দেওয়া হবে। সাগরের সহায়তায় প্রথমে প্লাবনকে দুবাই পাঠানো হয়, পরে সেখান থেকে লিবিয়ায়। তবে লিবিয়ায় নামার পরপরই চক্রের হাতে জিম্মি হন তিনি। প্লাবনকে একটি বন্দিশালায় আটকে রেখে চক্রটি প্রথমে ১৫ লাখ টাকা দাবি করে। টাকা দেওয়া হলেও আরও ১০ লাখ টাকা মুক্তিপণ চাওয়া হয়। এসব টাকার জন্য পরিবার ভিটেমাটি বিক্রি করে দালালদের হাতে তুলে দেয়। এরপরও নির্যাতন থেমে থাকেনি। চক্রটি ফের ১৬ লাখ টাকা দাবি করে। টাকা দিতে না পারায় চরম নির্যাতনের শিকার হন প্লাবন। ১৩ মে বন্দিশালায় তার মৃত্যু হয় বলে জানায় পরিবার।
প্লাবনের বড় বোন স্বপ্না খাতুন জানান, আমাদের কাছ থেকে ধার করে, সুদে টাকা এনে কয়েক দফায় টাকা দেয় দালাল সাগরের চাচাতো ভাই জিম, তার বাবা ঠান্ডু ও মা বেদেনা খাতুনের মাধ্যমে। ভিডিও কলে দেখিয়ে দেখিয়ে ভাইকে মারত। ২০ দিন আগে আমাদের চোখের সামনে ভাইয়ের মাথায় আঘাত করে ওরা। ঘটনার দিন সকালে ভাইয়ের মৃতদেহ আর গ্রামের জুয়েলের ওপর নির্যাতনের দৃশ্য ভিডিও কলে দেখিয়ে আবার টাকা চায়।
পরিবারের অভিযোগ, মালিতাপাড়ার জান্টু মেম্বারের ছেলে সাগর দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশ থেকে তরুণদের লিবিয়ায় নিয়ে গিয়ে মাফিয়া চক্রের কাছে বিক্রি করে দেন। মুক্তিপণের টাকা আদায় করেই থেমে থাকেন না শেষমেশ বন্দিদের ওপর পাশবিক নির্যাতন চালিয়ে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেন। পরে লাশ লুকানোর চেষ্টাও করেন।
ভুক্তভোগী প্লাবন ও তার পরিবার
বৈধ রিক্রুটিং এজেন্সি নেই, প্রতারকদের ফাঁদে শত তরুণ!
অবৈধ এজেন্সি আর দালালদের প্রলোভনে পড়ে শত শত যুবক প্রতিনিয়তই হচ্ছেন প্রতারিত। গত বছরের ১৭ আগস্ট সার্বিয়া যাওয়ার জন্য খুলনার এক এজেন্সিকে টাকা দেন। ৩ মাসের মধ্যে ভিসা ও বিদেশ পাঠানোর চুক্তি করা হয় স্টাম্পে। তবে নানা অজুহাতে দফায় দফায় হয়রানির শিকার হন। ৮ মাস পর গত এপ্রিল মাসে প্রতারণার বিষয়টি কাগজপত্রসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তুলে ধরেন। তাতেই বাধে বিপত্তি। ২০ এপ্রিল খুলনার সোনাডাঙ্গায় সাধারণ ডায়েরি করে ওই এজেন্সি প্রতিষ্ঠান। এখন উল্টো ডায়েরির জবাব দিতে প্রায় ৫০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে ছুটে আসেন থানায়। মুচলেখা দিয়ে কোনো মতে রেহাই পান এই দফায়। তবে কবে ফেরত পাবেন টাকা তার উত্তর জানেন না তিনি।
খুলনার দিঘলিয়া লকপুর এলাকার রাজিব মোল্লার অভিজ্ঞতা আরও ভয়াবহ। মালয়েশিয়ায় পাঠানোর কথা বলে তাকে নিয়ে যাওয়া হয় কম্বোডিয়ার গভীর জঙ্গলে। সেখানে ১৭ দিন আটকে থাকার পর কোনও মতে প্রাণ নিয়ে দেশে ফেরেন তিনি। আজও সেই আতঙ্ক তাকে তাড়া করে।
প্রতারণার শিকার আরেক যুবক মাহবুব শেখ বলেন, খুলনার তেঁতুলতলা মোড়ের এক এজেন্সিকে টাকা দিয়ে প্রায় ৯ মাস ধরে ঘুরছি। আজ কাল করে সময় নষ্ট করছে। আর টাকাও ফেরত দিচ্ছে না। আমি গত ১৭ এপ্রিল খুলনার জেলা প্রশাসক বরাবর ওই প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ করেছি।
মানবপাচার বন্ধে বাংলাদেশের হস্তক্ষেপ চায় মালয়েশিয়া
দীর্ঘ এক বছরের বন্ধ্যাত্ব কাটিয়ে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার আবারও খুলতে যাচ্ছে বাংলাদেশিদের জন্য। তবে এর পেছনে রয়েছে এক সুস্পষ্ট বার্তা মানবপাচার ও অবৈধ রিক্রুটমেন্ট বন্ধ না হলে এই বাজার স্থায়ী হবে না। গত ২১ মে অনুষ্ঠিত বৈঠকে দুই দেশের উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিরা অংশ নেন। বৈঠক শেষে প্রধান উপদেষ্টার আন্তর্জাতিক সম্পর্কবিষয়ক বিশেষ দূত ড. লুৎফে সিদ্দিকী জানান, গত বছর বন্ধ হয়ে যাওয়া শ্রমবাজারের কারণে যারা যেতে পারেননি, প্রথম ধাপে তাদের মধ্য থেকে প্রায় আট হাজার কর্মী সরকারি ব্যবস্থাপনায় বোয়েসেলের মাধ্যমে পাঠানো হবে।
অবৈধ পথে যাওয়া শ্রমিকদের নিয়ে মালয়েশিয়া আন্তর্জাতিকভাবে সমালোচনার মুখে পড়ছে। বৈঠকে মালয়েশিয়ান প্রতিনিধিরা অভিযোগ করেন, বাংলাদেশে মানবপাচার ও মানি লন্ডারিংয়ের অভিযোগে রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোর বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলা ‘হয়রানিমূলক’। এসব মামলা মালয়েশিয়ার অভিবাসন ব্যবস্থার স্বচ্ছতা নিয়ে আন্তর্জাতিক পরিসরে প্রশ্ন তুলছে। মামলাগুলো দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য তারা অনুরোধ জানিয়েছে।
এদিকে মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠানোর নামে প্রতারণার অভিযোগে একটি রিক্রুটিং কোম্পানি ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করেছেন ৩৩ বাংলাদেশি শ্রমিক। আদালতের কাছে তারা ১.৭২ মিলিয়ন রিংগিত ক্ষতিপূরণ দাবি করেছেন। তারা অভিযোগ করেছেন, কাজের ভুয়া প্রতিশ্রুতি দিয়ে তাদের থেকে প্রায় সাড়ে ৬ লাখ টাকা করে নেওয়া হয়। পরে মালয়েশিয়ায় পৌঁছেও তারা কাজ না পেয়ে মানবেতর জীবনযাপন করেন। মামলা চলাকালীন তাদের যেন গ্রেপ্তার না করা হয় সে অনুরোধও জানিয়েছেন তারা।
বকেয়া বেতনের দাবিতে মালয়েশিয় কোম্পানির সামনে বাংলাদেশিদের বিক্ষোভ
অন্যদিকে মালয়েশিয়ার মেডিসেরাম কোম্পানির অনিয়ম নিয়ে উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুলের কাছে অভিযোগ করায় এক বাংলাদেশি কর্মীর ভিসা বাতিল করে তাকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। কোম্পানিটি আরও ৬০ জনের নামের তালিকা করে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার হুমকি দিয়েছে, যা শ্রমিকদের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে।
বাংলাদেশ ও ইতালির মধ্যে গত ৬ মে একটি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) সই হয়েছে। নতুন এ চুক্তির আওতায় ইতালি বিভিন্ন খাতে বাংলাদেশি কর্মী নিয়োগে আগ্রহ দেখিয়েছে। অভিবাসন সংশ্লিষ্টদের মতে, এই চুক্তির ফলে ইউরোপগামী কর্মী পাঠানোর ক্ষেত্রে নতুন সম্ভাবনার দ্বার খুলবে। এ ধরনের উদ্যোগ শুধু কর্মসংস্থানের সুযোগই তৈরি করছে না, বরং বৈদেশিক আয় বাড়ানোর মাধ্যমে দেশের অর্থনীতিকে আরও শক্তিশালী করবে। পাশাপাশি ইউরোপে বৈধ পথে অভিবাসনের সুযোগ বাড়বে এবং মানবপাচারের ঝুঁকিও কমবে। বৈদেশিক শ্রমবাজারের সুফল পেতে হলে বাংলাদেশকে অভ্যন্তরীণ দুর্নীতি, সিন্ডিকেট চক্র ও মামলার জটিলতা নিরসনে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে, অবৈধ অভিবাসন আর দালালদের ফাঁদে নতুন করে বিদেশগামী তরুণদের যেন বন্দিত্ব, নির্যাতন আর মুক্তিপণের শিকার হয়ে অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে যেতে না হয় সে লক্ষ্যে কঠোর আইন প্রণয়ন ও অপরাধীদের শাস্তির আওতায় আনতে হবে। এগুলো নিশ্চিত করা না হলে শ্রমবাজার আবারও অনিশ্চয়তার মুখে পড়বে তেমনি রেমিট্যান্সেও লাগবে ভাটার টান।
You Must be Registered Or Logged in To Comment লগ ইন করুন?