দেশের ব্যাংকগুলো থেকে কৌশলে নেওয়া ঋণের টাকা বিদেশে পাচার করে আশিকুর রহমান লস্কর গড়ে তুলেছেন বিপুল সম্পদ। পুরোনো জাহাজ আমদানির আড়ালে তিনি এই অর্থ পাচারের কাজ করেছেন দীর্ঘদিন। দুবাইয়ের ব্যয়বহুল এলাকায় রয়েছে তাঁর ৬২টি বিলাসবহুল অ্যাপার্টমেন্ট ও ভিলা, যা বাংলাদেশিদের মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সম্পত্তির মালিকানা। শুধু দুবাই নয়, কানাডায়ও তাঁর নামে তিনটি অ্যাপার্টমেন্ট রয়েছে।
অর্থ পাচারের কৌশল
সমকাল-এর অনুসন্ধানে উঠে এসেছে, তিনি প্রথমে অর্থ পাচারের উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ দেশ ব্রিটিশ ভার্জিন আইল্যান্ড, পানামা, লাইবেরিয়া এবং সেন্ট কিটস অ্যান্ড নেভিসে নিবন্ধিত বিভিন্ন কোম্পানিতে টাকা স্থানান্তর করেন। সেখান থেকে সেই অর্থ চলে যায় দুবাই ও কানাডায়। এবি ব্যাংকের কিছু কর্মকর্তার সহায়তায় এই অর্থ পাচার সম্ভব হয়। ব্যাংকের খেলাপি ঋণ মামলায় গ্রেপ্তার এড়াতে তিনি ২০২৩ সালে কানাডায় পালিয়ে যান।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও বাণিজ্যিক ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, কানাডায় পালানোর আগে আশিকুর রহমান লস্কর প্রতারণা ও জালিয়াতির মাধ্যমে প্রায় ১৯০ মিলিয়ন ডলার বা ২ হাজার কোটি টাকা পাচার করেছেন। বর্তমানে বিভিন্ন ব্যাংকের কাছে তাঁর খেলাপি ঋণের পরিমাণ প্রায় ২,৪৬৪ কোটি টাকা। অথচ বন্ধক রাখা সম্পত্তির বাজারমূল্য ৫০-৬০ কোটি টাকার বেশি নয়।
২০১৮ সালে বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) তাঁর অর্থ পাচারের বিষয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনকে (দুদক) একটি প্রতিবেদন দেয়। এতে উল্লেখ করা হয়, তাঁর মালিকানাধীন মাহিন এন্টারপ্রাইজ ও গ্র্যান্ড ট্রেডিংয়ের মাধ্যমে পুরোনো জাহাজ আমদানির নামে বারবার বিদেশে টাকা পাঠানো হয়েছে। এবি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ শীর্ষ কর্মকর্তাদের যোগসাজশে ব্যাংকের নিয়ম ভেঙে অনুমোদন নেওয়া হয়েছে। তবে আশ্চর্যের বিষয়, অর্থ পাচারের এত বিশাল অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও এখনো কোনো সরকারি তদন্তে তাঁর নাম নেই।
আশিকুর রহমান লস্করের বাবা আতিউর রহমান লস্কর মেরিন সার্ভেয়ার ছিলেন। ব্যবসায়িক সুবিধা না পেয়ে তিনি জাহাজভাঙা ব্যবসায় আসেন। পরে তাঁর ছেলে আশিকুর রহমান লস্কর ব্যবসার দায়িত্ব নেন এবং ভুয়া নথিপত্র তৈরি করে অর্থ আত্মসাতের কৌশল শিখে ফেলেন। এবি ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান ফয়সাল মোরশেদ খানের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক থাকায় তিনি ঋণ নেওয়ার সুবিধা পেতেন।
বিদেশে সম্পদের তথ্য ফাঁস
যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তা গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর অ্যাডভান্সড ডিফেন্স স্টাডিজের (সিফোরএডিএস) প্রতিবেদন অনুযায়ী, দুবাই ভূমি বিভাগের রেকর্ড বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ২০২০ ও ২০২২ সালের তথ্য অনুযায়ী তিনি দুবাইয়ে ৬২টি সম্পত্তির মালিক। অনুসন্ধানী সাংবাদিকদের সংগঠন ওসিসিআরপি ‘দুবাই আনলকড’ শিরোনামে এই তথ্য প্রকাশ করেছে।
You Must be Registered Or Logged in To Comment লগ ইন করুন?