কাশ্মীর আবারো রণক্ষেত্রের আবহ নিচ্ছে। জম্মু ও কাশ্মীরের নিয়ন্ত্রণরেখায় (LoC) ফের গুলি বিনিময়ে মুখোমুখি হয়েছে ভারত ও পাকিস্তান সেনাবাহিনী। যুদ্ধবিরতির শর্ত লঙ্ঘন করে একাধিক স্থানে গুলি ছোড়ে পাকিস্তান, পাল্টা জবাব দেয় ভারত।
সেনা প্রধানের সফরের দিনেই উত্তেজনা
ঘটনাটি ঘটেছে এমন এক দিনে, যেদিন ভারতীয় সেনাপ্রধান জেনারেল উপেন্দ্র দ্বিবেদী কাশ্মীর সফরে রয়েছেন। তিনি শ্রীনগর ও উদমপুরে অবস্থানরত জ্যেষ্ঠ সেনা কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন এবং নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করেন। এই গুলিবিনিময় সেনাবাহিনীর ওপর বাড়তি চাপ তৈরি করেছে বলে মনে করছেন নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা।
নতুন করে যুদ্ধবিরতি চুক্তির প্রশ্ন
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সামরিক সূত্র পিটিআইকে জানায়, “নিয়ন্ত্রণরেখার কিছু এলাকায় পাকিস্তানের দিক থেকে হালকা অস্ত্র দিয়ে গুলিবর্ষণের ঘটনা ঘটে। এর সঠিক ও কঠোর জবাব দেওয়া হয়েছে।”
বিশ্লেষকদের মতে, এটি ২০২১ সালে স্বাক্ষরিত যুদ্ধবিরতির চুক্তির সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হতে পারে।
পহেলগাম হামলার প্রতিক্রিয়ায় টানটান উত্তেজনা
এই সামরিক উত্তেজনার পেছনে মূল কারণ হিসেবে দেখা হচ্ছে পহেলগাম শহরের পর্যটক শিবিরে সম্প্রতি ঘটে যাওয়া ভয়াবহ হামলাকে, যেখানে প্রাণ গেছে অন্তত ২৬ জনের।
দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট নামের একটি কাশ্মীরি জঙ্গিগোষ্ঠী হামলার দায় স্বীকার করলেও ভারত সরাসরি পাকিস্তানের মদদে এই হামলার পরিকল্পনার অভিযোগ তুলেছে।
ভারতের পাল্টা পদক্ষেপ: পানি ও কূটনীতি বন্ধের পথে
পহেলগাম হামলার পর পরই ভারত যে প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে, তা বহুদিনের সম্পর্ককে নতুন এক সংঘাতের দিকেই ঠেলে দিয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে নিরাপত্তা বিষয়ক মন্ত্রিসভা কমিটির (CCS) জরুরি বৈঠকের পর কয়েকটি তাৎপর্যপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেয় দিল্লি । সিন্ধু পানি চুক্তি স্থগিত করা হয়েছে। এটি দক্ষিণ এশিয়ায় পানি বণ্টনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক চুক্তিগুলোর একটি। আটারি সীমান্তে ইন্টিগ্রেটেড চেকপোস্ট বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে, যা ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে সীমিত বাণিজ্য ও চলাচলের প্রধান পথ।
পাকিস্তানের পাল্টা হুঁশিয়ারি
ভারতের এই কড়া অবস্থানের প্রতিক্রিয়ায় ইসলামাবাদও চুপ থাকেনি। বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে পাকিস্তান জানায় আটারি-ওয়াঘা সীমান্ত পথ বন্ধ করা হয়েছে। সিমলা চুক্তি স্থগিত করা হয়েছে। ভারতীয় কূটনীতিকদের বহিষ্কার করার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। আকাশপথ ও বাণিজ্য সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করে দেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়েছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, ২০১৯ সালের পুলওয়ামা হামলা পরবর্তী পরিস্থিতির সঙ্গে এখনকার অবস্থা অনেকাংশেই সাদৃশ্যপূর্ণ। যদিও এখন পর্যন্ত উভয় দেশই সরাসরি যুদ্ধ ঘোষণা করেনি, তবে কূটনৈতিক এবং সামরিক উত্তেজনা ক্রমেই বাড়ছে।
আন্তর্জাতিক মহল গভীর উদ্বেগে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে। ভারতের পানি চুক্তি স্থগিত এবং পাকিস্তানের সিমলা চুক্তি থেকে সরে আসা, এই দুটি সিদ্ধান্ত ভবিষ্যতে দুই দেশের সম্পর্কের গতিপথ আমূল বদলে দিতে পারে বলে মত বিশ্লেষকদের।
You Must be Registered Or Logged in To Comment লগ ইন করুন?