তুরস্কে সরকারবিরোধী বিক্ষোভ ক্রমেই তীব্র হয়ে উঠছে। ইস্তানবুলের মেয়র একরেম ইমামোগলুর গ্রেফতারের পর থেকে প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোগান চরম রাজনৈতিক সংকটের মুখে পড়েছেন। দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে ক্ষমতায় থাকা এরদোগান এবার সবচেয়ে কঠিন চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন। এর আগে ২০১৬ সালে সামরিক অভ্যুত্থানের চেষ্টা ব্যর্থ করেছিলেন তিনি, তবে এবারের পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ রূপ নিতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
বিশেষ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভে সক্রিয় ভূমিকা রাখছে। সরকার কঠোর দমননীতি গ্রহণ করলেও আন্দোলন থামানো যাচ্ছে না। ইস্তানবুল, আঙ্কারা, ইজমির ও আদানায় পুলিশের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের সংঘর্ষ হয়েছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেলে এটি গণ-অভ্যুত্থানে রূপ নিতে পারে।
বিরোধী দল রিপাবলিকান পিপলস পার্টি (সিএইচপি) অভিযোগ করছে, ইমামোগলুকে গ্রেফতার করা হয়েছে তাকে ২০২৮ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের লড়াই থেকে সরিয়ে দিতে। রাজনৈতিকভাবে জনপ্রিয় এই নেতার গ্রেফতার এরদোগানের সরকারের জন্য বড় ঝুঁকি তৈরি করেছে।
এরদোগান বিরোধীদের বিক্ষোভকে ‘অভিনয়’ হিসেবে অভিহিত করেছেন এবং তাদের ‘আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটানোর’ অভিযোগ এনেছেন। তবে ইস্তানবুলের সিটি হলের বাইরে সিএইচপি নেতা ওজগুর ওজেল প্রতিবাদকারীদের সমর্থন জানিয়ে সরকারের বিরুদ্ধে কঠোর বক্তব্য দিয়েছেন।
ইমামোগলুর গ্রেফতার দেশটির অর্থনীতিতেও বড় প্রভাব ফেলেছে। তুর্কি লিরার অবমূল্যায়ন ও স্টক মার্কেটে ব্যাপক দরপতন ঘটেছে। ক্যাপিটাল ইকোনমিকসের বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, এই পরিস্থিতি তুরস্কের অর্থনৈতিক ভবিষ্যৎকে আরও অনিশ্চিত করে তুলেছে।
এরদোগান ইউরোপ ও ন্যাটোর সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের চেষ্টা করছিলেন, যা এখন ইমামোগলুর গ্রেফতারের ফলে হুমকির মুখে পড়তে পারে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এই ঘটনার ফলে এরদোগান দেশ-বিদেশে চাপে পড়বেন এবং তার শাসন ব্যবস্থার স্থিতিশীলতা প্রশ্নবিদ্ধ হবে।
তুরস্কের মানবাধিকার কর্মীরা মনে করছেন, বিরোধীদের দমন-পীড়নের অংশ হিসেবে আরও গ্রেফতার হতে পারে। তবে জনগণের প্রতিক্রিয়ার কারণে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠতে পারে। সব মিলিয়ে, রাজনৈতিক সংকট আরও গভীর হলে এটি এরদোগান সরকারের পতনের কারণও হয়ে উঠতে পারে।
You Must be Registered Or Logged in To Comment লগ ইন করুন?