clock ,

ড. ইউনূস-তারেক রহমান বৈঠক: 'টার্নিং পয়েন্ট' হওয়ার সম্ভাবনা দেখছে বিএনপি

ড. ইউনূস-তারেক রহমান বৈঠক: 'টার্নিং পয়েন্ট' হওয়ার সম্ভাবনা দেখছে বিএনপি

লন্ডনে প্রধান উপদেষ্টা . মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বৈঠক বাংলাদেশের চলমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে 'টার্নিং পয়েন্ট' হতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। গতকাল মঙ্গলবার (১০ জুন, ২০২৫) রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এই মন্তব্য করেন। মির্জা ফখরুল বলেন, "বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে এটি একটি বড় ইভেন্ট। যদি সবকিছু সঠিকভাবে চলে, তাহলে নিঃসন্দেহে এটি একটি বড় টার্নিং পয়েন্ট হতে পারে।"

গত কয়েকদিন ধরেই আলোচনা চলছিল যে, . ইউনূস লন্ডন সফরের সময় তারেক রহমানের সঙ্গে বৈঠক করবেন। পরে সরকারি তরফেও এমন বৈঠকের সত্যতা নিশ্চিত করা হয়। গত সোমবার রাতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে সভাপতিত্বকালে তারেক রহমান জানান যে, তাকে সরকারের পক্ষ থেকে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকের জন্য আনুষ্ঠানিক আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।

বৈঠকের স্থান সময়ের বিষয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, আগামী শুক্রবার (১৩ জুন, ২০২৫) লন্ডন সময় সকাল ৯টা থেকে ১১টার মধ্যে বৈঠকটি হবে। লন্ডন সফরকালে . ইউনূস যে হোটেলে উঠেছেন, সেখানেই বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হবে। বিএনপির স্থায়ী কমিটির পক্ষ থেকে এই বৈঠককে স্বাগত জানানো হয়েছে।

মির্জা ফখরুল বলেন, "জাতীয় আন্তর্জাতিকভাবেও বৈঠকটির গুরুত্ব অনেক বেশি। ইতোমধ্যে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে বহু আলোচনা চলছে। এর মধ্যে এই বৈঠক হলে অনেক সমস্যার সমাধান হতে পারে, অনেক কিছু সহজ হয়ে আসতে পারে। নতুন ডাইমেনশন সৃষ্টি হতে পারে, সম্ভাবনাও অনেক।" তিনি আরও বলেন, "এখন এটি নির্ভর করবে আমাদের নেতাদের (. ইউনূস তারেক রহমান) ওপর, তারা কীভাবে সেই সম্ভাবনার দিকে নিয়ে যাবেন। আমরা দলের পক্ষ থেকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানকে সম্পূর্ণ অথরিটি দিয়েছি। তাঁর সাফল্য প্রার্থনা করেছি।"

বিএনপির একাধিক সূত্র জানিয়েছে, তারেক রহমানের সঙ্গে লন্ডন সফরে . ইউনূসের বৈঠকের বিষয়ে সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় থেকে যোগাযোগ করা হয়। প্রথম দিকে বিএনপির পক্ষ থেকে বৈঠকের ব্যাপারে ততটা আগ্রহ ছিল না। তবে নির্বাচনের দিনক্ষণ নিয়ে আলোচনা হতে পারে, সে ভাবনা থেকে দলটি শেষ পর্যন্ত বৈঠকে সম্মতি দেয়।

এই বৈঠকের মধ্য দিয়ে ডিসেম্বরে নির্বাচন হওয়ার সম্ভাবনা প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেন, "আমরা তো বলেছি, আপনি যদি ইলেকশন কালকে করতে পারেন, আমরা কালকেই রেডি। আমরা কোনো বিপ্লবী দল নই, আমরা নির্বাচন করেই জনগণের ভোটের মাধ্যমে ক্ষমতায় যেতে চাই। যখন সবাই চাইবে, একমত হবে, তখন নির্বাচন হবে, অসুবিধা নেই।"

এপ্রিলে নির্বাচন হতে পারেজামায়াতে ইসলামীর এমন বক্তব্য প্রসঙ্গে তিনি বলেন, "গণতন্ত্রের মূল কথা হচ্ছে পরস্পরের ভিন্নমত থাকবে। এটাই গণতন্ত্রের সৌন্দর্য। কিন্তু তাই বলে একে অপরকে শত্রু, দেশদ্রোহী বা গণতন্ত্রবিরোধী মনে করা যাবে না।"

তিনি আরও বলেন, " ব্যাপারে (এপ্রিলে নির্বাচন) আমরা দলীয়ভাবে সিদ্ধান্ত নিইনি। আশা করছি, সরকার বাস্তবতার পরিপ্রেক্ষিতে এটি বিবেচনা করবে। সময়টা (এপ্রিল) নির্বাচনের জন্য ঠিক নয়। রোজা (ফেব্রুয়ারি-মার্চ) শেষে ঈদের কয়েকদিন পর নির্বাচন। রোজায় প্রার্থী কর্মীদের কী অবস্থা হবে? আমি নিজেই এখন চিন্তিত, প্রতিদিনই আমাকে ইফতার পার্টি করতে হবে। ইটস নো জোক, এটি বিরাট ব্যাপার। প্রার্থীদের ব্যয় দ্বিগুণ হয়ে যাবে। আমরা চিৎকার করিঅর্থ ব্যয় কমাতে হবে। কিন্তু ওই সময় নির্বাচন হলে তো ব্যয় বাড়বে। শুধু তাই নয়, ওই সময় প্রচণ্ড গরম থাকবে, ঝড়বৃষ্টি আছে। ফলে দিনের বেলা নির্বাচনী জনসভায় লোকজন আনাই মুশকিল হবে। রোদের মধ্যে কে আসবে? রাতে মিটিংগুলো করতে হবে। এদেশে বেশিরভাগ নির্বাচন নভেম্বর থেকে জানুয়ারির মধ্যে হয়েছে। দু'বার বোধহয় হয়েছে ভিন্ন সময়ে, দুই ইলেকশনই ঝামেলা ছিল।"

তিনি আরও বলেন, "এই নির্বাচনটা বেশি প্রয়োজন। অনেকে আবার আমাকে ভুল বুঝবেন, সংস্কার চাই না, নির্বাচন চাই। এই যে আমাদের বিরুদ্ধে প্রোপাগান্ডা অপপ্রচার, এর কোনো যুক্তি নেই। আমরা তো বহু আগেই সংস্কারের কথা বলেছি। ব্যবস্থার পরিবর্তনে খালেদা জিয়া ভিশন-২০৩০ দিয়েছেন। আমরা ২৭ দফা দিয়েছিলাম। সব শেষে যুগপৎ আন্দোলনের রাজনৈতিক শরিকদের সঙ্গে কথা বলে ৩১ দফা দিয়েছি।"

নির্বাচিত সরকার ছাড়া ব্যবসায়ীরা বিনিয়োগে আগ্রহী নন বলেও মন্তব্য করেন বিএনপি মহাসচিব। শরিকদের আসন ছাড়-সংক্রান্ত প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, "এটি তো সংসদীয় রাজনীতিতে খুবই স্বাভাবিক। এটিই হওয়া উচিত। আমরা আগে থেকে কমিটেড, নির্বাচনের পর আমরা একটি জাতীয় সরকার করব।"

জামায়াতে ইসলামী জাতীয় নাগরিক পার্টিকেও সমঝোতায় আসন দেওয়া হবেরাজনৈতিক অঙ্গনে এমন আলোচনার বিষয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, " ধরনের কোনো আলোচনা হয়েছে বলে আমার জানা নেই। তবে রাজনীতি সংসদীয় গণতন্ত্রে শেষ কথা বলতে কিছু নেই।"

আওয়ামী লীগের সঙ্গে সমঝোতা হতে পারে কিনা প্রশ্নে তিনি বলেন, "আওয়ামী লীগ তো নেই।" জাতীয় পার্টির বিষয়ে বিএনপির কী অবস্থানএমন প্রশ্নে বিএনপি মহাসচিব বলেন, "যে দলগুলোর কথা বলছেন, সেগুলোর সঙ্গে সবচেয়ে বড় বিরোধ বিএনপির। আওয়ামী লীগ আমলে অত্যাচার-নির্যাতন-নিপীড়ন ফ্যাসিবাদের সবচেয়ে বড় ভুক্তভোগী বিএনপি। একইভাবে জাতীয় পার্টির কাছেও আমরা বছর নির্যাতিত-নিপীড়িত হয়েছি। আমরা তো একমত হয়েছি আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের বিষয়ে। আমরা বিশ্বাস করি, গণতন্ত্রকে গণতন্ত্রের মতো চলতে দেওয়া উচিত।"

তারেক রহমানের দেশে ফেরার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, "তারেক রহমান নিশ্চয়ই দেশে ফিরবেন, শিগগির ফিরবেন।" সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা তুলে ধরে মির্জা ফখরুল বলেন, "তিনি আগের চেয়ে শারীরিক দিক থেকে বেশ ভালো বলে মনে হয়। ডাক্তাররাও তাই বলেছেন।"

 এদিকে, . ইউনূসের সঙ্গে তারেক রহমানের বৈঠকের বিষয়ে গতকাল লন্ডনে বাংলাদেশ হাইকমিশন ভবনে সংবাদ সম্মেলনে কথা বলেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, "১৩ জুন অনুষ্ঠেয় ওই বৈঠকে নির্দিষ্ট কোনো এজেন্ডা নেই। তারেক রহমান মুহূর্তে বাংলাদেশের বড় রাজনৈতিক দলের নেতা এবং . ইউনূস অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান। উনারা যখন বসবেন, তখন দেশের যে কোনো বিষয়ে আলোচনা হতে পারে। আলোচনায় বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি, আগামী জাতীয় নির্বাচন, জুলাই চার্টার (জুলাই সনদ) এগুলোর যেকোনো বিষয়ে আলাপ হতে পারে।"

 

You Must be Registered Or Logged in To Comment লগ ইন করুন?

আমাদের অনুসরণ করুন

জনপ্রিয় বিভাগ

সাম্প্রতিক মন্তব্য