রানা প্লাজা ধসের ভয়াবহতা এখনও অনেকের মনে তাজা দুঃস্বপ্নের মতো। সেই করুণ ইতিহাসকে কেন্দ্র করে নির্মিত হয়েছে তথ্যচিত্র "একটি সূতার জবানবন্দী", যা এবার মুক্তি পেয়েছে চরকি ওটিটি প্ল্যাটফর্মে। এই সিনেমার ইংরেজি নাম "Testimony of a Thread"।
পরিচালক কামার আহমাদ সাইমন বলেন, ২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল সাভারের রানা প্লাজা ধসের ঘটনায় তিনি গভীরভাবে মানসিকভাবে আঘাতপ্রাপ্ত হন। সেই অভিজ্ঞতা থেকেই জন্ম নেয় সিনেমাটি। তার ভাষায়, "একজন সচেতন নাগরিক হিসেবে দায়বদ্ধতা থেকেই এই ছবি নির্মাণ করেছি।"
তথ্যচিত্রটি নির্মাণ করা হয় ২০১৫ সালে এবং প্রথম প্রদর্শনী হয় ২০১৬ সালে। কিন্তু এবারই প্রথম এটি সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত হলো, তাও বিনামূল্যে।
এই ৫২ মিনিটের মনোলগ-স্টাইলের চলচ্চিত্রটি অনুপ্রাণিত হয়েছে জাপানি পরিচালক আকিরা কুরোসাওয়ার কালজয়ী ছবি Rashomon থেকে। এতে রানা প্লাজা ধসের ঘটনা ও তার পরবর্তী প্রেক্ষাপট চারটি ভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে তুলে ধরা হয়েছে পোশাকশিল্প সংগঠক নাজমা আক্তার, বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি রুবানা হক, চিত্রশিল্পী দিলারা বেগম জলি, এবংঅর্থনীতিবিদ ও অধ্যাপক এম এম আকাশ।
২০১৩ সালে এই সিনেমার স্ক্রিপ্টের জন্য কামার আহমাদ সাইমন ‘দ্য এশিয়ান পিচ’ পুরস্কার লাভ করেন।তথ্যচিত্রটির নির্মাণ পেছানোর কারণ সম্পর্কে তিনি বলেন "এই সিনেমাটা খুব ডিমান্ডিং ছিল, সম্ভবত সময়ের আগেই বানানো। তখনকার চলচ্চিত্র পরিবেশে এই ধরনের কাজের কোনো জায়গা ছিল না। তবে এখন যখন এর প্রশ্নগুলো আবার প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছে, তখনই মনে হলো জনপরিসরে মুক্তি দেওয়ার এটাই সময়। বাংলাভাষী দর্শকদের কাছে পৌঁছাতে এর চেয়ে ভালো মাধ্যম নেই। এখনকার অধিকাংশ সিনেমা যেখানে অতিনাটকীয়তায় ভরা, সেখানে আমি দেখতে চাই, দর্শক কীভাবে এই ধরনের গাম্ভীর্যপূর্ণ সিনেমা নেয়। সামনে আমার আরেক ছবি ‘অন্যদিন’ আসছে, তার আগেই দর্শকের সাড়া বোঝাও জরুরি।"
সারাহ আফরীনের প্রযোজনায় কামার আহমাদ সাইমনের লেখা ও পরিচালনায় নির্মিত এই মনোলগ কোলাজটি যৌথভাবে প্রযোজনা করেছে এশিয়ার চারটি বৃহৎ সম্প্রচারমাধ্যম— জাপানের এনএইচকে, কোরিয়ার কেবিএস, তাইওয়ানের পিটিএস এবং সিঙ্গাপুরের মিডিয়াকর্প।
২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল, সাভারে বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন রানা প্লাজা নামে একটি ১০ তলা ভবন ধসে পড়ে। ওই ভবনে অন্তত পাঁচ হাজার শ্রমিক কাজ করছিলেন। ধ্বংসস্তূপ থেকে উদ্ধার করা হয় ১ হাজার ১৩৬ জনের মৃতদেহ এবং জীবিত উদ্ধার করা হয় প্রায় ২ হাজার ৪৩৮ জনকে, যাদের মধ্যে দুই হাজারের বেশি মানুষ আহত বা পঙ্গু হয়ে যান।
You Must be Registered Or Logged in To Comment লগ ইন করুন?