clock ,

দুর্নীতিবিরোধী শুদ্ধি অভিযানে ৯ মাসে চাকরি হারাল ১১ কর্মকর্তা

দুর্নীতিবিরোধী শুদ্ধি অভিযানে ৯ মাসে চাকরি হারাল ১১ কর্মকর্তা


দুর্নীতিবিরোধী শুদ্ধি অভিযান জোরদার করায় জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) অভ্যন্তরে চলছে তীব্র আলোড়ন। গত মাসে এনবিআরের কাস্টমস আয়কর ক্যাডারের অন্তত ১১ জন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাকে চাকরিচ্যুত বা বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, এদের অনেকেই দীর্ঘদিন ধরে নানা ধরনের অনিয়মে জড়িত ছিলেন। তবে এই অভিযানের প্রেক্ষাপটে এখন আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে এনবিআরের মাঠপর্যায়ে। কারণ, দুর্নীতিবাজদের পাশাপাশি এখন অপেক্ষাকৃত সৎ নিরীহ কর্মকর্তারাও অভিযোগের মুখোমুখি হচ্ছেনযার পেছনে রয়েছে ব্যক্তিস্বার্থ হাসিল কিংবা বেআইনি সুবিধা আদায়ের অভিযোগ।


চলতি এপ্রিল মাসেই মাত্র এক সপ্তাহের ব্যবধানে চারজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়েছে। সর্বশেষ গত ২৩ এপ্রিল বরখাস্ত হন দুই কমিশনারমোহাম্মদ মাহমুদুজ্জামান মো. শফিকুল ইসলাম আকন্দ। তার ঠিক এক সপ্তাহ আগে অবসরে পাঠানো হয় এনবিআরের সদস্য আবু সাঈদ মোস্তাক ট্যাক্স কমিশনার গোলাম কবীরকে। উল্লেখ্য, আবু সাঈদ মোস্তাক সাবেক রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদের জামাতা। সরকারি চাকরি বিধিমালার ৪৫ ধারা অনুসারে, ২৫ বছর চাকরির অভিজ্ঞতাসম্পন্ন কর্মকর্তাদের জনস্বার্থে, কোনো ব্যাখ্যা ছাড়াই অবসরে পাঠানো যায়এই ধারাই ব্যবহৃত হয়েছে এসব সিদ্ধান্তে।


চট্টগ্রামে এস আলম গ্রুপের কালো টাকা বৈধ করার সুযোগ করে দেওয়ার অভিযোগে বরখাস্ত করা হয় অতিরিক্ত কমিশনার সাইফুল আলম, যুগ্ম কমিশনার কে এম শামসুজ্জামান সহকারী কমিশনার আমিনুল ইসলামকে। একইভাবে, প্রতীক গ্রুপের চেয়ারম্যান এসএম ফারুকি হাসানের শত কোটি টাকার রেমিট্যান্স করমুক্ত দেখানোর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অভিযোগে পদচ্যুত হন আবু সাঈদ মোস্তাক গোলাম কবীর।


এনবিআর সূত্র জানিয়েছে, দুর্নীতির অভিযোগে অভিযুক্ত আরও অন্তত ৩০ জন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে। এই অনুসন্ধানে এনবিআরের ইনকাম ট্যাক্স ইন্টেলিজেন্স অ্যান্ড ইনভেস্টিগেশন ইউনিট ছাড়াও কাজ করছে একাধিক সরকারি গোয়েন্দা সংস্থা। চেয়ারম্যান আবদুর রহমান খান সম্প্রতি সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, “আপনারা ইতিমধ্যে কিছুটা টের পেয়েছেন। ভবিষ্যতেও সেটি দেখতে পাবেন।একইসঙ্গে তিনি প্রমাণসহ অভিযোগ দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন দুর্নীতিবিরোধী পদক্ষেপ জোরদারের লক্ষ্যে।


যদিও এই অভিযান স্বাগত জানালেও, এনবিআরের একাধিক কর্মকর্তা অভিযোগ করছেন, এখন সৎ কর্মকর্তারাও ভুয়া বা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত অভিযোগের শিকার হচ্ছেন। এমনকি কেউ কেউ সাংবাদিক পরিচয়ে বা অখ্যাত গণমাধ্যমের দোহাই দিয়ে রিপোর্ট প্রকাশের হুমকি দিয়ে বেআইনি সুবিধা আদায়ের চেষ্টা করছেন বলেও অভিযোগ উঠেছে।

এই পরিস্থিতিতে অনেক অভিজ্ঞ কর্মকর্তা মাঠপর্যায়ের বড় দায়িত্ব বা অভিযান থেকে নিজেদের গুটিয়ে নিচ্ছেন, যার ফলে এনবিআরের রাজস্ব আদায় কার্যক্রমে ধীরগতি দেখা যাচ্ছে।


ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক . ইফতেখারুজ্জামান বলেনএনবিআর এমন একটি প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে, যারা সততার সঙ্গে কর দিতে চায়, তাদের জন্য হেল (নরক), আর যারা কর ফাঁকিবাজতাদের জন্য হেভেন (স্বর্গ) এই সংস্কৃতি ভাঙতেই বর্তমান প্রশাসনের শুদ্ধি অভিযান জরুরি। তিনি আরও বলেন, “শুধু হাতেগোনা কিছু কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিলে চলবে না, এনবিআরকে চাইলে পুরো কাঠামোগত সংস্কারের পথে যেতে হবে।


সাবেক চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমানতুল মুনিমের সময় দায়িত্ব পালন করা একাধিক কর্মকর্তা জানান, তাদের সময়ে এত বড় পরিসরের শুদ্ধি অভিযান হয়নি। এক সময়কার ব্যক্তিগত সচিব মোহাম্মদ নাইরুজ্জামান বলেন, আমাদের সময়ও কিছু ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল, কিন্তু এত ব্যাপক ছিল না।


শুদ্ধি অভিযান নিঃসন্দেহে এনবিআরের জবাবদিহিতা স্বচ্ছতা ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ। তবে অনিয়ম রোধে দৃঢ় অবস্থানের পাশাপাশি নিরীহ সৎ কর্মকর্তাদের রক্ষায় পর্যাপ্ত নজরদারি যাচাই-বাছাই প্রক্রিয়া গড়ে তোলা জরুরিনা হলে সারা বিভাগের ওপরই এর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।

 

You Must be Registered Or Logged in To Comment লগ ইন করুন?

আমাদের অনুসরণ করুন

জনপ্রিয় বিভাগ

সাম্প্রতিক মন্তব্য