আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ই-কমার্স খাতের আড়ালে গ্রাহকদের কাছ থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ করার পর ইভ্যালি, আলেশা মার্ট, এবং ই-অরেঞ্জের মতো প্রতিষ্ঠানগুলো কার্যত বিলীন হয়ে গেছে। এসব প্রতিষ্ঠানের কোনো আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম নেই এবং তাদের শীর্ষ কর্মকর্তাদের অবস্থানও অজানা। ক্ষতিগ্রস্ত গ্রাহকদের অর্থ ফেরত দিতেও তারা তালবাহানা করছে।
কেন্দ্রীয় ই-কমার্স সেলের তথ্যমতে, ২০২৫ সালের নভেম্বর পর্যন্ত ইভ্যালি তাদের ১২,৯৪০ জন গ্রাহককে মাত্র ১৫ কোটি টাকা ফেরত দিয়েছে। আলেশা মার্ট ফেরত দিয়েছে প্রায় ৪০ কোটি টাকা, যা মাত্র ২,২৯৬ জন গ্রাহকের। তবে, এই দুটি প্রতিষ্ঠানের গ্রাহকদের প্রায় ৬,০০০ কোটি টাকার লেনদেনের সঠিক হিসাব মেলেনি।
আলেশা মার্টের বিভিন্ন ব্যাংক অ্যাকাউন্টে ৫৬টি হিসাবের সন্ধান পেয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এতে প্রায় ২,০০০ কোটি টাকার লেনদেনের প্রমাণ মিললেও, সেই অর্থ তোলা হয়ে গেছে। বর্তমানে মাত্র ২ কোটি ৭ লাখ টাকা অ্যাকাউন্টে অবশিষ্ট রয়েছে। অন্যদিকে, ইভ্যালি মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে ৪,০০০ কোটি টাকার বেশি লেনদেন করেছে, যার সঠিক হিসাবও পাওয়া যায়নি।
ই-কমার্স সেলের তথ্য অনুযায়ী, ৬৫,৮৭৯ জন গ্রাহক মোট ৪২৩ কোটি ৪১ লাখ টাকা ফেরত পেয়েছেন। এর মধ্যে কিউকম ৪৪,০১৮ জন গ্রাহককে ৩৪৩ কোটি ১৫ লাখ টাকা পরিশোধ করেছে। তবে, ইভ্যালি এবং আলেশা মার্টের মতো বড় প্রতিষ্ঠানগুলোর ফেরতের অঙ্ক প্রকৃত লেনদেনের তুলনায় নগণ্য।
শীর্ষ কর্মকর্তাদের অনুপস্থিতি এবং কেলেঙ্কারির ধারাবাহিকতা
অনেক ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা গ্রেপ্তার হয়ে জেলে থাকলেও কেউ কেউ জামিনে ছাড়া পেয়ে গা-ঢাকা দিয়েছেন। রাজনৈতিক অস্থিরতার সুযোগ নিয়ে কেলেঙ্কারির দায়ে অভিযুক্ত শীর্ষ কর্মকর্তারা বিদেশে পালিয়ে যাচ্ছেন। যেমন, ই-অরেঞ্জের পৃষ্ঠপোষক বনানী থানার পরিদর্শক সোহেল রানা আগেই ভারতে পালিয়ে গেছেন।
ইভ্যালি একটি নতুন পরিকল্পনার কথা জানিয়ে বলেছিল, ২০২৬ সালের মধ্যে ব্যবসা পরিচালনার মাধ্যমে গ্রাহকদের পাওনা ফেরত দেবে। তবে, প্রতিষ্ঠানটি এখন আর কোনো কার্যক্রম চালাচ্ছে না। এমডি মোহাম্মদ রাসেলের ফোন বন্ধ, এবং তিনি ফেসবুক পেজ ছাড়া আর কোথাও সক্রিয় নন।
ইভ্যালির ফেসবুক পেজে এক গ্রাহক প্রশ্ন করেন, "২০২৫ সাল হয়ে গেল, পূর্বের অর্ডার বা টাকা ফেরতের কোনো শিডিউল কি করেছেন?" আরেকজন মন্তব্য করেন, "এরা কি আবার নতুন কোনো চক্রান্ত করছে?"
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, ইভ্যালি তাদের পরিকল্পনায় জানিয়েছে যে, তারা পেমেন্ট গেটওয়েতে আটকে থাকা ২৫ কোটি টাকা ফেরত দিচ্ছে। তবে ক্ষতিগ্রস্ত গ্রাহকদের পাওনার পূর্ণাঙ্গ হিসাব এবং সেটি পরিশোধের কার্যকর উদ্যোগ এখনও অনুপস্থিত।
ইভ্যালি, আলেশা মার্ট ও অন্যান্য ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের কর্মকাণ্ডে যে আর্থিক কেলেঙ্কারি হয়েছে, তা দেশের ই-কমার্স খাতের প্রতি আস্থা দুর্বল করেছে। গ্রাহকের অর্থ ফেরত ও দায়বদ্ধতার প্রশ্নে সরকার এবং সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের কার্যকর উদ্যোগ এখন সময়ের দাবি।
You Must be Registered Or Logged in To Comment লগ ইন করুন?