সরকারি কর্মচারীদের দ্বৈত নাগরিকত্ব খুঁজছে মন্ত্রণালয়

বাংলাদেশ ব্যতীত ভিন্ন দেশের পাসপোর্ট গ্রহণ ও ব্যবহার করছেন— এমন তথ্যের ভিত্তিতে সরকারি কর্মচারীদের দ্বৈত নাগরিকত্বের সন্ধানে নেমেছে মন্ত্রণালয়গুলো। ইতোমধ্যে বিভিন্ন দপ্তর ও সংস্থায় এ সংক্রান্ত চিঠি পাঠানো হয়েছে।

গত ৬ জানুয়ারি, দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) থেকে সব মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ও সচিবদের কাছে সরকারি কর্মচারীদের দ্বৈত নাগরিকত্ব ও পাসপোর্ট সংক্রান্ত তথ্য চেয়ে চিঠি পাঠানো হয়। এর আগে, ১ জানুয়ারি, ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তর, বাংলাদেশ পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চ ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগেও একই বিষয়ে চিঠি দেওয়া হয়।

দুদকের চিঠিতে বলা হয়, কিছু অসাধু সরকারি কর্মচারী তথ্য গোপন করে ভিন্ন দেশের পাসপোর্ট গ্রহণ ও ব্যবহার করছেন এবং আইনগত পদক্ষেপ এড়াতে বিদেশে অবস্থান করছেন। এসব কর্মকাণ্ড সরকারি চাকরি আইন, ২০১৮-এর ৪০ ধারার সম্পূর্ণ পরিপন্থী।

দুদকের অনুসন্ধানে জানা গেছে, সরকারি কর্মচারীদের বহু পাসপোর্ট নেওয়ার অন্যতম উদ্দেশ্য হচ্ছে, দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত অবৈধ সম্পদ গোপন করে বিদেশে পাচার করা। এতে দেশে দুর্নীতি বৃদ্ধি ও অর্থনীতির ক্ষতি হচ্ছে। এছাড়া, বিদেশি নাগরিকত্ব গ্রহণের পর সরকারি কর্মচারীদের দায়িত্ব পালনে অনাগ্রহ পরিলক্ষিত হয়, যা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।

দুদক চিঠিতে উল্লেখ করেছে, সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা পাবলিক সার্ভেন্ট হিসেবে বিবেচিত হন, তাই তাদের দ্বৈত নাগরিকত্বের তথ্য পর্যালোচনা করা জরুরি। সচিবদের উদ্দেশে বলা হয়েছে, আপনার মন্ত্রণালয়ের অধীনে দ্বৈত নাগরিকত্ব গ্রহণ করা পাবলিক সার্ভেন্টদের পাসপোর্ট ও অন্যান্য তথ্য পাঠানোর অনুরোধ করা হচ্ছে।

তথ্য সংগ্রহে তৎপর মন্ত্রণালয়গুলো

দুদকের চিঠির পর মন্ত্রণালয়গুলো তাদের অধীন দপ্তর ও সংস্থায় সরকারি কর্মচারীদের দ্বৈত নাগরিকত্ব বা পাসপোর্ট সংক্রান্ত তথ্য চেয়ে চিঠি পাঠিয়েছে।

বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের পদক্ষেপ:

২১ জানুয়ারি:প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় → জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো, ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ড, প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক।সব কর্মকর্তা-কর্মচারী ও তাদের পোষ্যদের দ্বৈত নাগরিকত্ব বা পাসপোর্ট থাকলে, পাঁচ কর্মদিবসের মধ্যে তথ্য পাঠানোর নির্দেশ।

২৭ জানুয়ারি:গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় → রাজউক, জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ, গণপূর্ত অধিদপ্তর। দ্বৈত নাগরিকত্ব পাওয়া কর্মচারীদের তালিকা চেয়ে নির্দেশ

একই দিন:মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় → মৎস্য অধিদপ্তর, প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর ও সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় → বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি

সরকারি চাকরি আইন, ২০১৮-এর ৪০ নম্বর ধারা অনুযায়ী, কোনো সরকারি কর্মচারী বিদেশি কোনো রাষ্ট্রের নাগরিকত্ব নিতে পারবেন না। আইন লঙ্ঘন করলে সংশ্লিষ্ট কর্মচারীর চাকরি অবসানের আদেশ দেওয়া হবে, এবং এ ক্ষেত্রে বিভাগীয় তদন্ত প্রয়োজন হবে না।

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, সরকারি কর্মচারীদের মধ্যে যারা অন্য দেশের নাগরিকত্ব নিয়েছেন, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

তথ্য সংগ্রহের পর এটি দুদকে পাঠানো হবে এবং আইন অনুযায়ী শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে।