বাংলাদেশের শিল্প আন্দোলনের এক অনন্য পথিকৃত শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিনের জীবনসঙ্গিনী জাহানারা আবেদিন আর নেই (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। বৃহস্পতিবার (২৪ এপ্রিল) দুপুরে রাজধানীর একটি হাসপাতালে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। বয়স হয়েছিল ৯৪ বছর।
জাহানারা আবেদিন কেবল শিল্পাচার্যের স্ত্রীই ছিলেন না, ছিলেন তাঁর ছায়াসঙ্গিনী। ১৯৪৬ সালে যখন জয়নুল আবেদিন ছিলেন শিল্পচর্চায় নিবেদিতপ্রাণ, তখনই তাঁরা বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। সেই সময় থেকেই শিল্পাচার্যের আঁকাআঁকি, শিল্প শিক্ষা আন্দোলন এবং ব্যক্তিজীবনের প্রতিটি ধাপে জাহানারা আবেদিন ছিলেন নিরব কিন্তু অটুট সহযোগী।
স্বামীর প্রয়াণের প্রায় পাঁচ দশক পরেও তিনি থেকে গেছেন তাঁর স্মৃতির পাহারাদার হয়ে। ১৯৭৬ সালে জয়নুল আবেদিনের মৃত্যু হয়। তারপর থেকে রাজধানীতে তাঁদের স্মৃতিজড়িত বাড়িতে এক নিঃশব্দ জীবন কাটিয়েছেন জাহানারা আবেদিন।
মৃত্যুকালে তিনি রেখে গেছেন তিন ছেলে—ময়নুল আবেদিন মিতু, খায়রুল আবেদিন ও সারোয়ার আবেদিনসহ অসংখ্য গুণমুগ্ধ।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমদ খান এক শোকবার্তায় বলেন, “শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিনের সাফল্যের পেছনে জাহানারা আবেদিনের অসাধারণ অবদান রয়েছে। তিনি শিল্পাচার্যের জীবনে শুধু সঙ্গীই ছিলেন না, ছিলেন প্রেরণা, শক্তি এবং এক নির্ভরযোগ্য সহযাত্রী।”
উপাচার্য মরহুমার রুহের মাগফেরাত কামনা করেন এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।
শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিনকে ঘিরে বাংলাদেশের শিল্প আন্দোলনের যে ভিত রচিত হয়েছিল, তাতে অনেকটাই অবদান ছিল এই নিঃশব্দ, প্রচারবিমুখ নারীর। তিনি নিজে কখনো আলোকচিত্রের সামনে আসেননি, বরং আড়াল থেকেই শক্ত হাতে ধরেছিলেন এক শিল্পীর সংসারের হাল।
আজ তাঁর মৃত্যুতে শেষ হলো এক অধ্যায়—যেখানে শিল্প, ভালোবাসা এবং আত্মত্যাগ একসঙ্গে জড়িত ছিল।
You Must be Registered Or Logged in To Comment লগ ইন করুন?