মেহেরপুরের নাজমুল ইসলাম সম্প্রতি হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আসেন তার সৌদি প্রবাসী ভাই ডিটলকে নিতে। দীর্ঘ অপেক্ষার সময় কাটানোর জন্য তিনি বিমানবন্দরের বহুতল পার্কিংয়ের কাছে অবস্থিত নতুন ওয়েটিং লাউঞ্জে বসেন। প্রচণ্ড গরমের মধ্যে শীতল ও আরামদায়ক পরিবেশে বসে ড্রাইভারের সঙ্গে আলাপচারিতায় মেতে ওঠেন তিনি।
নাজমুল বলেন, “শাহজালাল বিমানবন্দরে দুটি লাউঞ্জ চালুর খবর ফেসবুকে দেখেছিলাম। তখনই ভেবেছিলাম, এবার ভাই আসার সময় বাইরে দাঁড়িয়ে থাকতে হবে না, লাউঞ্জে বসে অপেক্ষা করবো। এখন এখানে বসতে পেরে খুব ভালো লাগছে। এই উদ্যোগ নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়।”
শুধু নাজমুলই নন, কাতার প্রবাসী লক্ষ্মীপুরের নাজিমও ওয়েটিং লাউঞ্জে বসে বিশ্রাম নিচ্ছিলেন। তিনি বলেন, “আমার ফ্লাইট সন্ধ্যা ৭টায়, কিন্তু সকাল ১০টায় বিমানবন্দরে পৌঁছেছি। এতক্ষণ বাইরে অপেক্ষা করা কঠিন, তাই এখানে এসে বিশ্রাম নিচ্ছি।”
একইসঙ্গে তিনি বলেন, “বিমানবন্দরে প্রবাসীদের জন্য লাউঞ্জের ব্যবস্থা সত্যিই প্রশংসনীয়। এখানে বসে বিশ্রাম নেওয়া যাচ্ছে, অনেকে ঘুমাচ্ছেন, এমনকি খাবারও খাওয়া যাচ্ছে। এই উদ্যোগের জন্য সরকারকে ধন্যবাদ।”
২০২৩ সালের ১১ নভেম্বর হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে চালু হয় দুটি বিশেষ লাউঞ্জ—একটি ‘প্রবাসী লাউঞ্জ’ এবং অন্যটি ‘ওয়েটিং লাউঞ্জ’। প্রবাসীরা এখানে বিশ্রাম নেওয়া, খাবার খাওয়া এবং নামাজ পড়ার সুযোগ পাচ্ছেন। লাউঞ্জে নারীদের জন্যও পৃথক বিশ্রাম ও নামাজের ব্যবস্থা রয়েছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, লাউঞ্জে অপেক্ষমান যাত্রী ও স্বজনরা বসে আছেন, অনেকে বিশ্রাম নিচ্ছেন, কেউ কেউ নামাজ আদায় করছেন, আবার কেউ গল্পে মেতে উঠেছেন। বিমানবন্দরের বাইরে প্রচণ্ড গরম থাকলেও লাউঞ্জের শীতল পরিবেশ সবাইকে স্বস্তি দিচ্ছে।
ভাইকে নিতে আসা হারুনুর রশিদ বলেন, “এই লাউঞ্জ হাজার হাজার প্রবাসীর উপকার করছে। বাইরে প্রচণ্ড রোদ, তাই আমরা এখানে আশ্রয় নিয়েছি। বিশেষ করে যেসব যাত্রীদের সঙ্গে ছোট শিশুরা আছে, তাদের জন্য এটি অনেক সুবিধাজনক।”
লাউঞ্জের মধ্যেই খাবারের দোকান রয়েছে, যেখানে বিএমইটি (ব্রুরো অব ম্যানপাওয়ার, এম্প্লয়মেন্ট অ্যান্ড ট্রেনিং) কার্ডধারী কর্মীরা ৩০ শতাংশ কম মূল্যে খাবার কিনতে পারেন।
খাবারের দোকানের কর্মী আলামিন জানান, “বার্গার, শর্মা, চা, কফি ও সফট ড্রিঙ্কসসহ বিভিন্ন খাবারে প্রবাসীদের জন্য বিশেষ ছাড় রয়েছে।”
লাউঞ্জের সুপারভাইজার বিউটি বলেন, “প্রতিদিন গড়ে ৭০০ থেকে ১,০০০ জন প্রবাসী এখানে সেবা নিচ্ছেন। কখনও সংখ্যাটি আরও বেড়ে যায়। কম খরচে খাবার ও বিশ্রামের সুযোগ থাকায় প্রবাসীরা লাউঞ্জটি খুব উপভোগ করছেন।”
বিমানবন্দরের নির্বাহী পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন কামরুল ইসলাম বলেন, “আমাদের রেমিট্যান্স যোদ্ধারা বিমানবন্দরে যেন কোনো ধরনের বিড়ম্বনার শিকার না হন, সে জন্য আমরা সব ধরনের ব্যবস্থা নিচ্ছি। লাউঞ্জ চালু করা হয়েছে তাদের সুবিধার কথা মাথায় রেখেই।”
তিনি আরও বলেন, “একজন প্রবাসী বিমানবন্দরে নেমে বা যাত্রার আগে বিশ্রাম নিতে পারছেন, খেতে পারছেন, নামাজ পড়তে পারছেন—এটাই এই লাউঞ্জের মূল উদ্দেশ্য। নারী-পুরুষ উভয়ের জন্য পৃথক ব্যবস্থা রাখা হয়েছে, যাতে সবাই সমানভাবে সুবিধা পান।”
প্রবাসীদের জন্য শাটল বাসসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধার কথাও জানান তিনি।
বিমানবন্দরে প্রবাসীদের জন্য এই লাউঞ্জ চালু করায় প্রবাসী ও তাদের পরিবারের সদস্যদের মধ্যে ব্যাপক সন্তোষ দেখা যাচ্ছে। অপেক্ষার দীর্ঘ সময়কে স্বস্তিদায়ক করতে এবং প্রবাসীদের সম্মান জানাতে এই উদ্যোগ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। এ ধরনের আরও উদ্যোগ ভবিষ্যতে প্রবাসীদের জন্য আরও স্বাচ্ছন্দ্য নিয়ে আসবে বলে আশা করা যায়।
You Must be Registered Or Logged in To Comment লগ ইন করুন?