চীনের সাইবারস্পেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন অব চায়না (সিএসি) সম্প্রতি ফেসিয়াল রিকগনিশন প্রযুক্তি ব্যবহারের বিষয়ে একটি নতুন নির্দেশনা জারি করেছে। এই নির্দেশনায় বলা হয়েছে, চেহারা শনাক্তকরণের মাধ্যমে পরিচয় যাচাই করতে কাউকে বাধ্য করা যাবে না এবং এই প্রযুক্তির ব্যবহার সীমিত করার জন্য বিকল্প পদ্ধতির ব্যবস্থা রাখতে হবে।
চীন এমন একটি দেশ, যেখানে ফেসিয়াল রিকগনিশন প্রযুক্তি ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়। এটি মূলত সুরক্ষা নিশ্চিতকরণ, অপরাধী শনাক্তকরণ, সরকারি পর্যায়ে নজরদারি, চাকরিপ্রার্থীদের যাচাই এবং সংখ্যালঘু গোষ্ঠীগুলোর ওপর নজরদারির জন্য ব্যবহৃত হয়ে আসছে। দেশের বিভিন্ন শহরে ট্রাফিক ক্যামেরা, পাবলিক প্লেস, এয়ারপোর্ট ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে এই প্রযুক্তির ব্যবহার এখন স্বাভাবিক হয়ে গেছে।
বিশেষ করে, চীনের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বিভিন্ন অপরাধী শনাক্ত করতে ফেসিয়াল রিকগনিশন ব্যবহার করে থাকে। এছাড়া বেইজিং ও সাংহাইসহ অন্যান্য বড় শহরে এটিকে ট্রাফিক আইনের বাস্তবায়ন ও জননিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্যও ব্যবহার করা হয়।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে, ফেসিয়াল রিকগনিশন প্রযুক্তির অতিরিক্ত ও অনিয়ন্ত্রিত ব্যবহারের ফলে ব্যক্তিগত গোপনীয়তা লঙ্ঘনের অভিযোগ বাড়তে থাকে। এ নিয়ে মানবাধিকার সংস্থাগুলোসহ বিভিন্ন মহল উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। অনেক নাগরিক অভিযোগ করেছেন যে, সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো বিনা অনুমতিতে তাদের চেহারা শনাক্ত করছে এবং তথ্য সংগ্রহ করছে।
এই উদ্বেগের পরিপ্রেক্ষিতে চীনের সাইবার নিয়ন্ত্রক সংস্থা সিএসি নতুন নীতিমালা জারি করেছে। এতে উল্লেখ করা হয়েছে ফেসিয়াল রিকগনিশন ব্যবহারের ক্ষেত্রে সম্মতি গ্রহণ করা বাধ্যতামূলক হবে। যেসব ব্যক্তি ফেসিয়াল রিকগনিশন পদ্ধতি ব্যবহার করতে রাজি নন, তাদের জন্য বিকল্প ব্যবস্থা রাখতে হবে। জনসাধারণের ব্যক্তিগত তথ্য সুরক্ষায় কড়া নিয়ম মানতে হবে এবং সংরক্ষিত ডেটা অনৈতিকভাবে ব্যবহার করা যাবে না। নির্দিষ্ট কিছু ক্ষেত্রে যেমন—জাতীয় নিরাপত্তা ও অপরাধ তদন্তের মতো গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে ফেসিয়াল রিকগনিশন ব্যবহারের অনুমতি দেওয়া হতে পারে, তবে এর জন্য যথাযথ আইনি অনুমোদন নিতে হবে।
সিএসি জানিয়েছে, প্রযুক্তির ওপর অতিরিক্ত নির্ভরশীলতা কমিয়ে অন্যান্য বিকল্প পদ্ধতির ওপর গুরুত্ব দিতে হবে। পরিচয় যাচাইয়ের জন্য পাসওয়ার্ড, স্মার্ট কার্ড ও বায়োমেট্রিক ফিঙ্গারপ্রিন্ট শনাক্তকরণের মতো অন্যান্য পদ্ধতির ব্যবহারের কথা বলা হয়েছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ফেসিয়াল রিকগনিশন প্রযুক্তি একদিকে যেমন নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সাহায্য করে, অন্যদিকে এটি ব্যক্তিগত গোপনীয়তার জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়াতে পারে। তাই এটির ব্যবহারের ক্ষেত্রে নৈতিকতা ও গোপনীয়তা রক্ষার দিকটি বিবেচনা করা অত্যন্ত জরুরি।
সিএসি-এর নতুন নীতিমালার মাধ্যমে চীন সরকার প্রযুক্তির অপব্যবহার রোধ করতে চায়। তবে এটি কতটা কার্যকর হবে, তা এখনো স্পষ্ট নয়। বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা ও প্রযুক্তিবিদরা মনে করছেন, যদি এই নীতিমালা যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করা হয়, তাহলে ব্যক্তিগত গোপনীয়তার সুরক্ষা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে। তবে এটি চীনের নজরদারি ব্যবস্থার ওপর কী প্রভাব ফেলবে, সেটি দেখার বিষয়।
You Must be Registered Or Logged in To Comment লগ ইন করুন?