২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে সামাজিক সুরক্ষা খাতে ১ লাখ ১৬ হাজার ৭৩১ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে, যা মোট বাজেটের ১৪.৭৮ শতাংশ এবং জিডিপির ১.৮৭ শতাংশ। তবে এই বরাদ্দের মধ্যে প্রায় ৪৫ শতাংশই চলে যাচ্ছে সরকারি কর্মচারীদের পেনশন ও কৃষি ভর্তুকিতে।
দীর্ঘদিন ধরে অর্থনীতিবিদদের অভিযোগ ছিল, পেনশন ও কৃষি ভর্তুকিকে সামাজিক সুরক্ষার আওতায় দেখিয়ে বাজেটের এ খাতের আকার কৃত্রিমভাবে বড় করে দেখানো হয়। অন্তর্বর্তী সরকার সেই সমালোচনার প্রেক্ষিতে কিছু সংস্কার এনেছে—সঞ্চয়পত্রের সুদের ৯ হাজার কোটি টাকা এবার এই খাত থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে।
তবে এখনো ৩৫ হাজার ২৮২ কোটি টাকা পেনশন এবং ১৭ হাজার কোটি টাকা কৃষি ভর্তুকি সামাজিক সুরক্ষা খাতেই দেখানো হয়েছে, যা বরাদ্দের প্রায় ৪৪.৮ শতাংশ।
সংস্কারের
অংশ হিসেবে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির সংখ্যা ১৪০ থেকে কমিয়ে
৯৫-এ আনা হয়েছে।
প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের আওতায় থাকা আশ্রয়ণ প্রকল্প-২ এবং খুরুশকুল
প্রকল্প এবারের বাজেটে বাদ দেওয়া হয়েছে।
সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের আওতায় কর্মসূচি ২৭টি থেকে কমিয়ে
২২টি করা হয়েছে, কিছু
একীভূত করে ও কিছু
বাদ দিয়ে। অন্যান্য মন্ত্রণালয় ও বিভাগেও কর্মসূচি
ছাঁটাই করা হচ্ছে।
আগামী
অর্থবছরে বয়স্ক ভাতার সুবিধাভোগী সংখ্যা ৬০ লাখ ১
হাজার থেকে বাড়িয়ে ৬১
লাখ করা হচ্ছে। বিধবা
ও স্বামী-নিগৃহীতা মহিলার সংখ্যা ২৭ লাখ ৭৫
হাজার থেকে ২৯ লাখ
হবে। প্রতিবন্ধী, অনগ্রসর জনগোষ্ঠী ও মা-শিশু
সহায়তা কর্মসূচির আওতায়ও সুবিধাভোগীর সংখ্যা কিছুটা বাড়ানো হচ্ছে।
তবে মাসিক ভাতা বৃদ্ধির হার
সীমিত—বেশিরভাগ ক্ষেত্রে মাত্র ৫০ থেকে ১০০
টাকা পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে।
সিপিডির
গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম
মোয়াজ্জেম বলেন, সরকারের কিছু পদক্ষেপ ইতিবাচক
হলেও, বরাদ্দের পরিমাণ ও বাস্তব প্রভাবের
মধ্যে বড় ফারাক রয়ে
গেছে।
তিনি বলেন, “মাসিক ৬০০-৭০০ টাকা
দিয়ে পাঁচজনের পরিবারের জন্য এক সপ্তাহের
চালও কেনা সম্ভব নয়।
প্রাথমিক পর্যায়ে কিছু কর্মসূচিতে অন্তত
২ হাজার টাকা মাসিক ভাতা
চালু করা উচিত, পরীক্ষামূলকভাবে
হলেও।”
এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) সামাজিক সুরক্ষা খাতে জিডিপির অন্তত ৫% বরাদ্দের পরামর্শ দিয়ে আসছে, যেখানে বাংলাদেশের প্রস্তাবিত বাজেটে এ বরাদ্দ জিডিপির মাত্র ১.৮৭%।
You Must be Registered Or Logged in To Comment লগ ইন করুন?