clock ,

দুদকের চিঠিতে গভর্নরকে লকার ফ্রিজের নির্দেশ

দুদকের চিঠিতে গভর্নরকে লকার ফ্রিজের নির্দেশ

বাংলাদেশ ব্যাংকের নিরাপত্তা ভল্টে কর্মকর্তাদের ব্যক্তিগত লকার সাময়িকভাবে স্থগিত (ফ্রিজ) করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে গভর্নরকে চিঠি দিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) সংস্থাটির আশঙ্কা, এসব লকারে বিপুল পরিমাণ অপ্রদর্শিত সম্পদ থাকতে পারে।

গভর্নর বরাবর গত রোববার পাঠানো দুদকের চিঠিতে বলা হয়েছে, কেউ যেন লকার খুলে সম্পদ সরিয়ে নিতে না পারেন, তা নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে। নির্দেশনার ফলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট লকারগুলো খোলার এবং সেগুলোর সম্পদের তালিকা তৈরির অনুমতির জন্য দুদক গত সোমবার ঢাকা মহানগর দায়রা জজ সিনিয়র স্পেশাল জজের কাছে আবেদন করে। আদালত মঙ্গলবার এই অনুমতি প্রদান করেন এবং ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মেহেদী হাসানকে লকার খোলার কার্যক্রম তদারকির দায়িত্ব দেন।

দুদকের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, "আদালত আমাদের লকার খোলার অনুমতি দিয়েছেন। আগামী দুই-তিন দিনের মধ্যে ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে জব্দকৃত লকারগুলো খোলা হবে এবং তালিকা প্রণয়ন করা হবে।"

সাবেক ডেপুটি গভর্নরের লকারে অপ্রদর্শিত সম্পদ

দুদকের তদন্তের অংশ হিসেবে গত ২৬ জানুয়ারি বাংলাদেশ ব্যাংকের কয়েন ভল্টে সাবেক ডেপুটি গভর্নর সিতাংশু কুমার সুর চৌধুরীর (এস কে সুর) ব্যক্তিগত সেফ ডিপোজিট খোলা হয়। সেখানে পাওয়া যায়

৫৫ হাজার ইউরো

লাখ ৬৯ হাজার ৩০০ ডলার

কেজি . গ্রাম স্বর্ণ

৭০ লাখ টাকার এফডিআর

এসব সম্পদ তিনি নিয়মিত আয়কর রিটার্নে উল্লেখ করেননি।

তল্লাশিকালে ব্যাংকের রেজিস্টার পরীক্ষা করে দেখা যায়, আরও বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা সিলগালা করা সেফ ডিপোজিট রেখেছেন। দুদক ধারণা করছে, সেগুলোতেও অপ্রদর্শিত সম্পদ থাকতে পারে।

দুদকের চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, গত ৩০ জানুয়ারি অর্থ উপদেষ্টার সঙ্গে দুদক চেয়ারম্যানের এক বৈঠকে বাংলাদেশ ব্যাংকের ভল্টে রক্ষিত সম্পদের বিষয়ে আলোচনা হয়। অর্থ উপদেষ্টা ওই সম্পদ সাময়িকভাবে ফ্রিজের সম্মতি দেন।

বাংলাদেশ ব্যাংকসংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানিয়েছে, গভর্নরকে দেয়া চিঠি অর্থ উপদেষ্টার সম্মতি থাকায় ভল্টের সব লকার সাময়িকভাবে স্থগিত (ফ্রিজ) করা হয়েছে। ফলে এখন কেউ লকার থেকে অর্থ বা সম্পদ সরিয়ে নিতে পারবেন না। এর পর থেকেই দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।

এক বাংলাদেশ ব্যাংক কর্মকর্তা জানান,"এস কে সুর চৌধুরীর লকার থেকে যে পরিমাণ সম্পদ পাওয়া গেছে, তা বিস্ময়কর। ব্যাংকের আরও শতাধিক ব্যক্তিগত লকার রয়েছে, যেখানে বিপুল পরিমাণ নগদ অর্থ সম্পদ থাকতে পারে।"

সাবেক ডেপুটি গভর্নর এস কে সুর চৌধুরী ইতোমধ্যে গ্রেফতার হয়েছেন। তাকে রাজধানীর সেগুনবাগিচা এলাকা থেকে ১৪ জানুয়ারি দুদক গ্রেফতার করে এবং আদালতের নির্দেশে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়।

অর্থনীতিবিদ . মুস্তফা কে মুজেরী ঘটনাকে "জাতীয় লজ্জা" বলে মন্তব্য করেছেন। তিনি বলেন,

"ব্যাংকিং ব্যবস্থা টিকে থাকে সততা আস্থার ওপর। কিন্তু যখন কেন্দ্রীয় ব্যাংকেরই একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা দুর্নীতির অভিযোগে গ্রেফতার হন, তখন তা শুধু বাংলাদেশ ব্যাংকের জন্য নয়, পুরো দেশের জন্য লজ্জাজনক।"

পরবর্তী পদক্ষেপ

আগামী কয়েক দিনের মধ্যে লকার খোলা সম্পদের তালিকা তৈরির কাজ শুরু হবে।

নতুন করে কোনো অপ্রদর্শিত সম্পদ পাওয়া গেলে তদন্তের পরিধি বাড়তে পারে।

এই কেলেঙ্কারির প্রেক্ষিতে বাংলাদেশ ব্যাংকে স্বচ্ছতা জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে নতুন সংস্কারমূলক পদক্ষেপ নেয়া হতে পারে।

দুদকের চলমান অনুসন্ধান কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ভেতরের দুর্নীতির গভীরতা কতদূর পৌঁছেছে, তা আরও পরিষ্কার করবে। ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হলে দেশের আর্থিক খাতের জন্য এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ মোড় হতে পারে।

 

You Must be Registered Or Logged in To Comment লগ ইন করুন?

আমাদের অনুসরণ করুন

জনপ্রিয় বিভাগ

সাম্প্রতিক মন্তব্য