উত্তর আফ্রিকার তিউনিশিয়া-লিবিয়া সীমান্তে অভিবাসীদের নিয়ে অবৈধ ব্যবসার চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এসেছে গবেষকদের একটি যৌথ প্রতিবেদনে। ২৯ জানুয়ারি ইউরোপীয় সংসদে উপস্থাপিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তিউনিশিয়া ও লিবিয়া কর্তৃপক্ষ পুরুষ, নারী ও শিশু অভিবাসীদের পণ্য হিসেবে বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহার করছে।
গবেষকদের গোপন সংগঠন ‘রিসার্চ অ্যান্ড রিসার্চারস (আরআরএক্স)’ প্রতিবেদনের নথি তৈরি করেছে। এতে বলা হয়েছে, ২০২৩ সালের জুন থেকে ২০২৪ সালের নভেম্বর পর্যন্ত তিউনিশিয়া থেকে লিবিয়ায় পুশব্যাকের শিকার সাব-সাহারান আফ্রিকার ৩০ অভিবাসীর সাক্ষ্যের ভিত্তিতে এই প্রতিবেদন প্রস্তুত করা হয়েছে।
মানবাধিকার লঙ্ঘনের ভয়াবহ চিত্র
প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, অভিবাসীদের নির্বিচারে আটক, জাতিগত বৈষম্য, নির্যাতন, অমানবিক আচরণ, জোরপূর্বক অন্তর্ধান এবং মানবতাবিরোধী অপরাধের শিকার হতে হয়েছে। তবে তিউনিশিয়ার সরকার এসব অভিযোগের বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি।
২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে তিউনিশিয়ার প্রেসিডেন্ট কাইস সাইদ অভিবাসনবিরোধী বর্ণবাদী বক্তব্য দেওয়ার পর দেশটিতে কৃষ্ণাঙ্গ অভিবাসীদের ওপর সহিংসতা বেড়ে যায়। মানবাধিকার সংগঠন ‘ইনফোমাইগ্রেন্টস’ জানিয়েছে, মরুভূমিতে তিউনিশিয়া কর্তৃপক্ষের দ্বারা বিতাড়িত অভিবাসীদের কাছ থেকে নিয়মিত নানা ধরনের তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে।
অভিবাসীদের কাছ থেকে টাকা আদায়
আরআরএক্স প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তিউনিশিয়া-লিবিয়া সীমান্তে অভিবাসীদের কাছ থেকে ৪০ থেকে ৩০০ দিনার (তিউনিশিয়ান মুদ্রা) পর্যন্ত অর্থ আদায় করা হয়। অর্থ না থাকলে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য ও জ্বালানির বিনিময়ে তাদের পণ্য হিসেবে ব্যবহার করা হয়।
এক অভিবাসী প্রতিবেদনে বলেন, ‘তারা আমাদের পণ্যের মতো বিক্রি করেছে। তিউনিশিয়ার সৈন্যরা আমাদের লিবিয়ার পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য করেছিল।’
বিক্রি হওয়া বন্দিদের মধ্যে পুরুষ, নারী (যাদের মধ্যে অনেকে গর্ভবতী ছিলেন), দম্পতি, শিশু এবং অবিভাবকহীন অপ্রাপ্তবয়স্করাও ছিলেন। এক অভিবাসী বলেন, ‘নারীদের বাজারমূল্য বেশি ছিল।’
অভিবাসীদের বন্দিত্ব ও মুক্তিপণ দাবি
লিবিয়ায় পৌঁছানোর পর অনিয়মিত অভিবাসীদের মরুভূমির বিভিন্ন কারাগারে কয়েক দিন আটকে রাখা হয়। পরে তাদেরকে লিবিয়ার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীন অবৈধ অভিবাসন দমন বিভাগ (ডিসিআইএম) পরিচালিত সরকারি আটক কেন্দ্রে পাঠানো হয়।
প্রতিবেদনে সাক্ষ্য দেওয়া অভিবাসী মুসাকে তিউনিশিয়ার সীমান্ত থেকে প্রায় ২০ কিলোমিটার দূরে লিবিয়ার আল আসাহ কারাগারে পাঠানো হয়েছিল।
অভিবাসীদের ‘বিক্রয়’ প্রক্রিয়ার দ্বিতীয় ধাপে বন্দিদের পরিবারের কাছ থেকে মুক্তিপণ আদায় করা হয়।
ইইউ-তিউনিশিয়া চুক্তি ও বিতর্ক
২০২৩ সালের জুলাই মাসে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) তিউনিশিয়ার সঙ্গে একটি ‘কৌশলগত অংশীদারিত্ব’ চুক্তি স্বাক্ষর করে। এই চুক্তির আওতায় অবৈধ অভিবাসন মোকাবিলায় তিউনিশিয়াকে ১০ কোটি ইউরো সহায়তা দেওয়ার পরিকল্পনা করা হয়।
তবে মানবাধিকার সংগঠনগুলো তিউনিশিয়া ও লিবিয়া কর্তৃপক্ষের অবৈধ কার্যক্রমের বিরুদ্ধে নিয়মিত প্রতিবাদ জানিয়ে আসছে।
You Must be Registered Or Logged in To Comment লগ ইন করুন?