ঢাকঢোল পিটিয়ে মাইকিং করে জামালপুর সদর উপজেলার দাপুনিয়া এলাকায় সাতটি পরিবারকে সমাজচ্যুত করার ঘটনায় চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে পরিবারগুলো। স্থানীয় ‘মাতব্বরদের’ এই সিদ্ধান্তের পর ঘর থেকে বের হতেও ভয় পাচ্ছেন ভুক্তভোগীরা।
গত শুক্রবার রাতে মাইকিং করে
ঘোষণা দেওয়া হয়— “আজ থেকে
মরহুম আজিজুল হক, ইসমাইল হোসেন
মৌলভি, মনসুর মিয়া, মানিক, জানিক, মজিবর ও নান্নুর পরিবার
সমাজচ্যুত। তাদের সঙ্গে কেউ মেলামেশা, লেনদেন
কিংবা ওঠাবসা করতে পারবে না।
কেউ নিয়ম ভাঙলে তাকেও
একঘরে করা হবে।”
স্থানীয়দের ভাষ্য অনুযায়ী, দাপুনিয়ার বাসিন্দা মুনসুর মিয়ার পরিবারের সঙ্গে এলাকার কয়েকজন প্রভাবশালীর বিরোধ চলছিল। শুক্রবার জুমার নামাজের পর মুনসুর মিয়ার
সঙ্গে প্রতিবেশী মন্টু মিয়ার হাতাহাতি হয়। এর পর
স্থানীয় ‘মাতব্বরদের’ সালিশে মুনসুরের পরিবারকে ৫০ হাজার টাকা
জরিমানা করা হয়। তারা
তা না মানায় সমাজচ্যুতির
ঘোষণা আসে, যা পরে
ছড়িয়ে পড়ে সাতটি পরিবারের
ওপর।
ভুক্তভোগী ইসমাইল হোসেন মৌলভি বলেন, “আমরা কোনো অন্যায়
করিনি। শুধু পারিবারিক একটি
বিষয়ে মতবিরোধ হয়েছিল। এখন আমাদের মসজিদেও
যেতে দিচ্ছে না।”
আরেকজন, ফারুক হোসেন বলেন, “দোকান থেকে কিছু কিনতেও
পারছি না। ছোট ছেলেমেয়েগুলো
কষ্টে আছে।”
হুসনা
বেগম নামের এক নারী জানান,
“ছোট বাচ্চাগুলা কান্নাকাটি করে। কিছু কিনে
দিতে পারি না। ঘরের
বাইরে বের হওয়া যায়
না। আমাদের দোষ কী?”
ঘটনার সময় মাইকিং করা
নাজমুল হাসান বলেন, “প্রথমে রাজি হইনি। কিন্তু
এলাকার গণ্যমান্যদের চাপে পড়ে বাধ্য
হয়ে করি। এখন বুঝতে
পারছি এটা ভুল হয়েছে।”
অভিযুক্ত
‘মাতব্বর’ শামীম আহমেদ বলেন, “এই সিদ্ধান্ত আমার
একার না। প্রায় ৫০০
লোকের উপস্থিতিতে নেওয়া হয়েছে।”
জামালপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) ইয়াহিয়া
আল মামুন বলেন, “এ ঘটনায় লিখিত
অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত চলছে। জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
আইনবিদরা বলছেন, কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠী এভাবে কাউকে সমাজচ্যুত করার অধিকার রাখে না। এটি সংবিধান ও মানবাধিকারের লঙ্ঘন। প্রশাসন দ্রুত হস্তক্ষেপ না করলে এর পরিণতি হতে পারে ভয়াবহ।
You Must be Registered Or Logged in To Comment লগ ইন করুন?