বাংলা ভাষার জন্য প্রাণ দেওয়া বীরদের অমর স্মৃতির সঙ্গে চিরকাল জড়িয়ে থাকবেন কবি, সাংবাদিক ও লেখক আবদুল গাফফার চৌধুরী। তবে তার সবচেয়ে বড় পরিচয়—তিনি “আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি” গানটির রচয়িতা। এ গানই তাকে অমর করে রেখেছে, রাখবে ভবিষ্যতের অগণিত প্রজন্মের হৃদয়ে।
১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের আবহে লেখা “আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো” গানটি একুশের মূল ও অনিবার্য সংগীত হয়ে উঠেছে। প্রতিবছর একুশে ফেব্রুয়ারির প্রথম প্রহরে প্রভাতফেরী শুরু হয় এই গান দিয়েই। গানের প্রতিটি পঙ্ক্তি যেন শহীদদের প্রতি জাতির শ্রদ্ধার নিঃশব্দ প্রতিজ্ঞা। প্রথমে গানটিতে সুর দিয়েছিলেন আবদুল লতিফ, তবে পরবর্তীতে আলতাফ মাহমুদের সুরই পেয়েছে গণমানুষের মন। ১৯৫৪ সালের প্রভাতফেরীতে এই সুরেই প্রথম গানটি পরিবেশিত হয় এবং সেটিই এখন প্রাতিষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃত। পরবর্তীতে ১৯৬৯ সালে জহির রায়হান তার কালজয়ী চলচ্চিত্র ‘জীবন থেকে নেওয়া’ তে গানটি ব্যবহার করে এটির জনপ্রিয়তা আরও বাড়িয়ে দেন।
কবি, সাংবাদিক ও লেখক আবদুল গাফফার চৌধুরী ১৯৩৪ সালের ১২ ডিসেম্বর বরিশাল জেলার মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলার উলানিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় বাংলাদেশের প্রবাসী সরকার নিবন্ধিত প্রথম পত্রিকা 'সাপ্তাহিক জয় বাংলা'র প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক ছিলেন। পেয়েছেন স্বাধীনতা পদক, একুশে পদক, বাংলা একাডেমি পুরস্কার সহ আরও অনেক পদক, পুরস্কার ও সম্মাননা। ২০২২ সালের ১৯ মে, লন্ডনের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইন্তেকাল করেন আবদুল গাফফার চৌধুরী।
শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতি অঙ্গনের মানুষেরা মনে করেন, এই গান বেঁচে থাকলে গাফফার চৌধুরীও অমর হয়ে থাকবেন। আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো” গানটি বর্তমানে হিন্দি, ইংরেজি, ফরাসি, মালয়, সুইডিশ, জাপানি সহ অন্তত ১২টি ভাষায় অনূদিত ও পরিবেশিত হয়। এর মধ্য দিয়ে গানটি হয়ে উঠেছে ভাষার জন্য লড়াইয়ের এক বৈশ্বিক প্রতীক।
বাংলা থাকবে, থাকবে তার রক্তে রাঙানো ইতিহাস—সেই ইতিহাসের অনন্ত প্রহরীতে পরিণত হয়েছেন আবদুল গাফফার চৌধুরী। যতদিন “আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো” গানটি থাকবে, ততদিন বাংলা জানবে তার নাম—একুশের গানে তিনি বেঁচে থাকবেন চিরকাল।
You Must be Registered Or Logged in To Comment লগ ইন করুন?