clock ,

আমাদের অবশ্যই টিম সিঙ্গাপুরের চেতনাকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে: প্রধানমন্ত্রী লরেন্স ওঙ

আমাদের অবশ্যই টিম সিঙ্গাপুরের চেতনাকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে: প্রধানমন্ত্রী লরেন্স ওঙ

২০২৫ সালের নতুন বছরের বার্তায় প্রধানমন্ত্রী লরেন্স ওঙ ভবিষ্যতের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সিঙ্গাপুরবাসীদের জন্য ঐক্যবদ্ধ থাকা এবং একসঙ্গে কাজ করার গুরুত্ব তুলে ধরেছেন। তিনি বলেন, ২০২৪ ছিল আরেকটি ঘটনাবহুল অস্থির বছর। বিশ্বব্যাপী ভূরাজনৈতিক উত্তেজনা ক্রমাগত বাড়ছে। ইউক্রেনে যুদ্ধ অব্যাহত, মধ্যপ্রাচ্যে সহিংসতা বৃদ্ধি পাচ্ছে, এবং মানবিক সংকট আরও গভীরতর হচ্ছে। এই সংঘর্ষের পাশাপাশি চরম আবহাওয়া প্রাকৃতিক দুর্যোগ অনেক দেশের জীবন জীবিকাকে বিপর্যস্ত করেছে।

বিশ্বব্যাপী মুদ্রাস্ফীতি কিছুটা কমেছে, তবে পণ্যমূল্য এখনও উচ্চতর অবস্থানে রয়ে গেছে, মহামারীর আগের স্তরে ফিরে আসেনি। অনেক দেশে জীবনযাত্রার খরচের চাপ পরিবার সমাজের ওপর গভীর প্রভাব ফেলছে। ভবিষ্যৎ নিয়ে মানুষের মধ্যে উদ্বেগ অস্থিরতা বেড়ে চলেছে। এর ফলে রাজনৈতিক ব্যবস্থাগুলো দুর্বল হয়ে পড়ছে, প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতি আস্থা কমছে এবং সমাজগুলো ক্রমাগত বিভক্ত হয়ে পড়ছে। সিঙ্গাপুরও এই বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ থেকে মুক্ত নয়। তবে এই অস্থিরতা অনিশ্চয়তার মাঝেও আমরা নিজেদের আলাদা করে উপস্থাপন করতে সক্ষম হয়েছি। অশান্ত পৃথিবীতে আমরা নিরাপত্তা, স্থিতিশীলতা এবং শান্তির প্রতীক হয়ে রয়েছি। আমাদের শিক্ষার্থীরা এখনও সাফল্যের সঙ্গে শিখছে, আমাদের ব্যবসাগুলো উদ্ভাবনী কৌশলের কারণে বিস্তৃত হচ্ছে, আর আমাদের কর্মীরা ক্রমাগত পরিবর্তিত পরিবেশে নতুন সুযোগ গ্রহণ করছে।

অনেক উন্নত দেশের মতো আমরা বেকারত্ব বা স্থবির মজুরির সমস্যায় ভুগছি না। আমাদের অধিকাংশ শ্রমিক মুদ্রাস্ফীতির চেয়ে দ্রুত হারে মজুরি বৃদ্ধি পেয়েছে, যা তাদের প্রকৃত আয় বৃদ্ধি করেছে। গত দশকে, মধ্যম আয় প্রতি বছর গড়ে . শতাংশ হারে মুদ্রাস্ফীতির ওপরে বেড়েছে। ২০২৪ সালে আমাদের অর্থনীতি শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে, যা প্রত্যাশার চেয়েও বেশি। শক্তিশালী অর্থনীতির কারণে, আমরা আশা করি প্রকৃত আয় আরও বৃদ্ধি পাবে।

চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় টিম সিঙ্গাপুর

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে আমরা বড় বড় চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছি। আমরা একটি প্রাণঘাতী ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াই করেছি, আমদানিনির্ভর মুদ্রাস্ফীতি মোকাবিলা করেছি এবং দুর্বল অর্থনীতি পরিচালনা করেছি। ২০২৪ সালেও এই সমস্যাগুলো ছিল। সরকার সবকিছু প্রথমবারেই সঠিকভাবে করতে পারেনি। তবে আমরা সবসময় সিঙ্গাপুরবাসীদের কাছে সৎ থেকেছি, আমাদের ভুল স্বীকার করেছি এবং উন্নতির চেষ্টা করেছি। আমাদের ঐক্য সংহতির মাধ্যমে আমরা সবসময় বাধা অতিক্রম করেছি।

আমাদের ত্রিপক্ষীয় অংশীদারিত্বসরকার, নিয়োগকর্তা এবং শ্রমিক ইউনিয়নের মিলিত কাজএই সংহতির মূল ভিত্তি। আমরা মিলিতভাবে সমস্যার সমাধান করি এবং সবার কল্যাণের জন্য সিদ্ধান্ত নেই।

এভিয়েশন সেক্টরেই দেখুন। মহামারীর সময় বিমান ভ্রমণ প্রায় বন্ধ হয়ে গিয়েছিল, যার ফলে অনেকের চাকরি বিপদের মুখে পড়েছিল। সরকার গুরুত্বপূর্ণ সক্ষমতাগুলি বজায় রাখতে এবং সুবিধাগুলি আপগ্রেড করতে আর্থিক সহায়তা প্রদান করেছিল। চাঙ্গি এয়ারপোর্ট গ্রুপ, সিঙ্গাপুর এয়ারলাইন্স গ্রুপ, স্যাটস এবং শিল্প অংশীদাররা তাদের কর্মীদের দক্ষতা বাড়ানোর জন্য downtime সময় ব্যবহার করেছিল। ইউনিয়নগুলো এই পদক্ষেপগুলো সমর্থন করেছিল এবং কর্মীরা পরিবর্তনের সাথে খাপ খাইয়ে নিতে অসাধারণ ধৈর্য্য দেখিয়েছিল। আজ, চাঙ্গি এয়ারপোর্ট সফলভাবে প্রবৃদ্ধির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। যাত্রী সংখ্যা প্রায় মহামারীপূর্ব স্তরে ফিরে এসেছে এবং ২০২৫ সালে আরও বৃদ্ধি পাবে বলে আশা করা হচ্ছে। আমাদের এভিয়েশন কর্মীর সংখ্যা কোভিড১৯ পূর্বের চেয়ে বেশি। আমাদের এয়ার হাব এখন আরও শক্তিশালী, এবং কয়েক মাসের মধ্যে টার্মিনাল এর কাজ শুরু হবে।

একইভাবে, আমরা জীবনযাত্রার ব্যয়ের চাপ একসঙ্গে মোকাবিলা করেছি। সরকার মুদ্রাস্ফীতির প্রভাব কমাতে নগদ সহায়তা, সিডিসি ভাউচার এবং ইউটিলিটি এর মতো একাধিক পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। অন্যান্যরা তাদের ভূমিকা যথাযথভাবে পালন করেছে। কমিউনিটি গ্রুপগুলো খাদ্য বিতরণ এবং গ্রোসারি সহায়তা প্রোগ্রামের মতো কার্যক্রম পরিচালনা করেছে। অনেক প্রতিষ্ঠানও বিভিন্নভাবে দুর্বল গোষ্ঠীকে সহায়তা করেছে।

আমাদের টিমওয়ার্কের চেতনা ২০২৪ সালের গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিক এবং প্যারাঅলিম্পিকে উজ্জ্বলভাবে প্রতিফলিত হয়েছে। আমরা আনন্দিত হয়েছিলাম যখন ম্যাক্স মেডার সিঙ্গাপুরের সবচেয়ে কম বয়সী অলিম্পিক পদক বিজয়ী হন এবং ইয়িপ পিন শিউ তার সপ্তম সোনা অর্জন করেন। তাদের সাফল্য, এবং তাদের সহকর্মী ক্রীড়াবিদ এবং প্যারাক্রীড়াবিদদের, একক প্রচেষ্টার ফল ছিল না। এটি ছিল পুরো সম্প্রদায়ের কঠোর পরিশ্রমের ফলকোচ, ক্রীড়া বিজ্ঞানী, প্রশাসক এবং পারিবারিক সদস্যদের অবিচলিত সমর্থনের ফল। এই অভিজ্ঞতাগুলি একটি সাধারণ বার্তা দেয়চ্যালেঞ্জের মুখে একত্রে কাজ করা এবং ঐক্যবদ্ধ হওয়ার গুরুত্ব। টিম সিঙ্গাপুরের সম্মিলিত প্রচেষ্টাই সবকিছুতে পার্থক্য তৈরি করেছে, তা হোক সংকট মোকাবিলা, একে অপরকে সহায়তা করা, অথবা বৈশ্বিক মঞ্চে উৎকর্ষতার জন্য সংগ্রাম করা।

২০২৫ এর দিকে তাকিয়ে

আমাদের টিম সিঙ্গাপুরের চেতনা ২০২৫ এবং তারপরেও বজায় রাখতে হবে। এজন্যই আমরা ফরওয়ার্ড সিঙ্গাপুর উদ্যোগ গ্রহণ করেছি যাতে আমাদের সামাজিক বন্ধন, সংহতি শক্তিশালী করার জন্য ঐক্যবদ্ধ জনগণ হিসেবে আত্মবিশ্বাসের সাথে মোকাবিলা করতে পারি।

ফরওয়ার্ড সিঙ্গাপুরের মাধ্যমে, আমরা আমাদের নীতিগুলো সংশোধন, দৃষ্টিভঙ্গি এবং মানসিকতা পুনরায় তৈরি, এবং সিঙ্গাপুরের স্বপ্নকে নতুনভাবে সংজ্ঞায়িত করব। আমরা একটি আরও ন্যায্য এবং অন্তভুর্ক্তিমূলক সমাজ গড়ব, যেখানে সবাই সাফল্যের সমান সুযোগ পাবে, তাদের জীবনযাত্রার যেকোনো পর্যায় থেকেই হোক; যেখানে আমরা প্রত্যেকে আমাদের স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে পারব, মর্যাদা, নিরাপত্তা এবং উজ্জ্বল ভবিষ্যতের জন্য আশা নিয়ে বাঁচতে পারব।

আমরা এই লক্ষ্যগুলো অর্জনের পথে বড় পদক্ষেপ নিয়েছি। হাউজিং নীতি আপডেট করা হয়েছে যাতে HDB ফ্ল্যাটগুলি আরও সাশ্রয়ী হয়। মাজুলাহ প্যাকেজের মাধ্যমে অবসরকালীন আর্থিক সুরক্ষা বৃদ্ধি করা হয়েছে, বিশেষত যারা ৫০ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে আছেন তাদের জন্য। নতুন প্রোগ্রাম যেমন Healthier SG এবং Age Well SG বয়ষ্কদের আরও ভালো সহায়তা প্রদান করছে। আমরা শিক্ষার ক্ষেত্রে সংস্কার করছি এবং স্কিলসফিউচার ব্যাপকভাবে বিনিয়োগ করছি, যাতে সব সিঙ্গাপুরবাসী, এমনকি পরিণত কর্মীরা, তাদের পূর্ণ সম্ভাবনায় পেঁৗছাতে পারে। এটি কেবল শুরু। আমরা আরও করব। আমি ২০২৫ সালের বাজেটে ফরওয়ার্ড সিঙ্গাপুরের পরবর্তী পদক্ষেপগুলো তুলে ধরব।

সিঙ্গাপুরিয়দের জন্য উত্তেজনাপূর্ণ সুযোগ এবং ভালো চাকরি সৃজন করতে আমাদের অর্থনৈতিক প্রতিযোগিতা বৃদ্ধি করব। আমরা জীবনযাত্রার ব্যয়ের বৃদ্ধির প্রভাব অব্যাহতভাবে প্রশমিত করব। আমরা তাদের জন্য আরও লক্ষ্যভিত্তিক সহায়তা প্রদান করব যারা কঠিন পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে বেশি কষ্ট পাচ্ছে, বিশেষত প্রবীণ এবং নিম্ন আয়ের জনসাধারণ। তবে আমরা অন্যান্যদেরও অবহেলা করব না, যেমন মধ্যম আয়ের এবং মধ্যবয়সী ব্যক্তিরা, যারা প্রবীণ পিতামাতা এবং ছোট শিশুদের দেখাশোনা করছেন। প্রতিটি নাগরিকেরই আমাদের সমাজে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। কেউ পিছিয়ে থাকবে না, কারণ আমরা সবাই একে অপরের সাথে আছি।

আমাদের ভবিষ্যতের প্রতি বিশ্বাস

২০২৫ সালে সিঙ্গাপুরের স্বাধীনতার ৬০তম বার্ষিকী উদযাপন করা হবে। এটি যেমন উদযাপনের একটি গুরুত্বপূর্ণ সময়, তেমনি এটি আমাদের একত্রিত মূল্যবোধ, আমাদের পরিচয় এবং আমাদের উদ্দেশ্য নিয়ে চিন্তা করারও একটি দুর্লভ মুহূর্ত। আমাদের ভবিষ্যত একসাথে গড়ে তোলার জন্য এটি একটি সুবর্ণ সুযোগও বটে।

সামনে আমাদের অনেক চ্যালেঞ্জ থাকবে। তবে আমরা কখনোই নিজেদেরকে হারাতে বা হতাশ হতে দেব না। যেমন পুরনো প্রজন্ম, তেমনি নতুন প্রজন্মও মহামারীর সময়ে দৃঢ়তার পরিচয় দিয়েছিল। শিক্ষক এবং পিতামাতার সহায়তার কারণে তারা কোভিড১৯ এর সময়ে পরিবর্তন গ্রহণ করেছে এবং সফলভাবে তা সামাল দিয়েছে।

প্রতিবার যখন তরুণ, বৃদ্ধ নানান বয়সী সিঙ্গাপুরিয়দের সাথে কথা বলি তখন আমি আমাদের ভবিষ্যত সম্পর্কে আত্মবিশ্বাসী এবং আশাবাদী বোধ করি। হৃদয়ের গভীরে আমরা এটা উপলব্ধি করি যে সিঙ্গাপুর ছিল প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে গড়ে ওঠা এক বিস্ময়। যেসব কিছু অসম্ভব মনে হচ্ছিল একসাথে আমরা তা বাস্তবে পরিণত করেছি। প্রতিটি প্রজন্ম তাদের ভূমিকা পালন করেছে, উৎকর্ষতার জন্য লড়াই করেছে এবং তারা ভালো করেছে। এখন একটি সাহসী পথ তৈরি করার পালা আমাদের।

সিঙ্গাপুরবাসীদের নতুন বছরের শুভেচ্ছা

You Must be Registered Or Logged in To Comment লগ ইন করুন?

আমাদের অনুসরণ করুন

জনপ্রিয় বিভাগ

সাম্প্রতিক মন্তব্য