ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে পশ্চিমবঙ্গের বাংলা ভাষাভাষী মুসলিম শ্রমিকদের ‘বাংলাদেশি’ সন্দেহে হয়রানি, নিগ্রহ ও মারধরের ঘটনা আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে। এ ধরনের ঘটনায় উদ্বেগ জানিয়েছে শ্রমিক অধিকার বিষয়ক সংগঠন পরিযায়ী শ্রমিক ঐক্য মঞ্চ। সংগঠনটি জানিয়েছে, ইতোমধ্যেই দেশের নানা প্রান্ত থেকে তারা ১০০টির মতো অভিযোগ পেয়েছে, যেখানে পশ্চিমবঙ্গের মুসলিম শ্রমিকদের শুধুমাত্র ভাষা ও ধর্মের ভিত্তিতে সন্দেহভাজন বাংলাদেশি হিসেবে চিহ্নিত করে হয়রানি করা হয়েছে।
গত ১৮ এপ্রিল মালদা জেলার ২৩ জন ফেরিওয়ালাকে উত্তরপ্রদেশের কুশিনগরে স্থানীয়রা ‘বাংলাদেশি’ সন্দেহে বেধড়ক মারধর করে। তারা মূলত বাংলায় কথা বলায় সন্দেহের তালিকায় পড়ে। আহত অবস্থায় পুলিশ তাদের হেফাজতে নেয় এবং পরদিন মুক্তি দেয়।
আরেকটি ঘটনা ঘটে ২১ এপ্রিল, যখন মুর্শিদাবাদের রঘুনাথগঞ্জ থেকে ৬০ জন শ্রমিক ওড়িশার কেওনঝড় যাওয়ার পথে ময়ূরভঞ্জ জেলার জসিপুরে স্থানীয়দের হাতে আক্রান্ত হন। স্থানীয়রা তাদের ‘বাংলাদেশি’ বলে সন্দেহ করে, মারধর করে এবং তারা বাধ্য হয়ে ফিরে আসেন।
মুর্শিদাবাদের সামশেরগঞ্জের আরেক শ্রমিক জানান, ঈদের পর ভদ্রক শহরে পণ্য বিক্রি করতে গেলে তাকেও বাংলাদেশি আখ্যা দিয়ে অপমান ও হেনস্থা করা হয়।
পরিযায়ী শ্রমিক ঐক্য মঞ্চের প্রধান আসিফ ফারুক বলেন, “২০১৪ সাল থেকেই এমন ঘটনা চলছে। তবে সাম্প্রতিক সময়ে, বিশেষ করে পহেলগামের হামলার ঘটনার পর এসব ঘটনার সংখ্যা অনেক বেড়েছে। পুলিশ ও কিছু হিন্দুত্ববাদী সংগঠনের সদস্যরা পশ্চিমবঙ্গের মুসলিম শ্রমিকদের লক্ষ্যবস্তু বানাচ্ছে। তারা ভারতীয় নাগরিক হয়েও শুধু ভাষা ও ধর্মের কারণে ‘বাংলাদেশি’ হিসেবে ট্যাগ পাচ্ছেন।”
তিনি ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, “ভারতের সংবিধান অনুযায়ী দেশের যেকোনো নাগরিকের যেকোনো রাজ্যে কাজ করার অধিকার রয়েছে। তাহলে কেন শুধু বাংলাভাষী মুসলিম শ্রমিকদের এভাবে হেনস্থা করা হচ্ছে?”
মানবাধিকার সংগঠনগুলো বলছে, এসব ঘটনার পুনরাবৃত্তি ভারতের অভ্যন্তরীণ অভিবাসন ব্যবস্থা এবং সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির ওপর গুরুতর হুমকি তৈরি করছে।
You Must be Registered Or Logged in To Comment লগ ইন করুন?