বহুজাতিক চক্র Ôfake friend scam callÕ প্রজেক্টে কাজ করার জন্য পাঁচজন মালয়েশিয়ান পুরুষকে নিয়োগ দিয়েছিল। প্রতারক চক্র অন্তত ৭০ জন সিঙ্গাপুরিয়কে টার্গেট করে এবং ভুক্তভোগীরা ১৬৪,০০০-এর ডলার হারায়। প্রতারকরা ভুক্তভোগীদের সাথে ম্যাসেজ আদানপ্রদান বা ফোন কলের মাধ্যমে যোগাযোগ করত এবং পরিচিত ব্যক্তি সেজে আর্থিক সহায়তা চাইত। ধৃত পাঁচজন হলো— কেক ইউয়ান চুন (২০), চুয়া জি হুয়াং (২৪), হেং গুয়ো হাও (২৬), লোহ চুয়ান শেং (৩৬) এবং ইয়ি কং ইয়াও (৩৭)। গত ১৪ মার্চ তারা প্রতারণার অভিযোগে স্বীকার করেছে। মূলত ৬৮ থেকে ৭৬ বছর বয়সী দুর্বল ও অসহায় ব্যক্তিদের এরা টার্গেট করেছিল।
অভিযোগপত্রে প্রসিকিউশন জানায়, পাঁচজনই জোহর বারুর মারিনা রেসিডেন্স জেবির কনডোমিনিয়াম ইউনিটে বসবাস করছিল এবং ওখানে অফিসের মাধ্যমে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করছিল। প্রত্যেককে প্রথম তিন মাসের জন্য মাসিক ৩,০০০ রিঙ্গিত করে প্রদান করা হতো, পরবর্তীতে এর পরিমাণ বাড়িয়ে ৫,৫০০ করা হয়। প্রতারণার মাধ্যমে ভুক্তভোগীদের কাছ থেকে যে অর্থ সংগ্রহ করা হতো, তার পরিমাণের ভিত্তিতে ১০ শতাংশ ‘কমিশন’ দেওয়া হতো। তারা টঙ হুয়া শুন নামে এক ব্যক্তির অধীনে কাজ করত এবং তাদের চাকরির অংশ হিসেবে খাবার ও থাকার সুবিধা দেওয়া হতো। আদালতের নথিতে উল্লেখ করা হয়েছে যে পাঁচজন প্রতারক সপ্তাহে সোমবার থেকে শনিবার, প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত কাজ করত।
ডেপুটি পাবলিক প্রসিকিউটর ডাফনে লিম ও টেঙ ইয়িন হ্যাং আদালতের নথিতে জানান যে, টঙ দুটি আলাদা টেলিগ্রাম গ্রুপে সম্ভাব্য ভুক্তভোগীদের নামের তালিকা পাঠাত, যা ওই প্রতারক চক্র পরিচালনা করত। প্রতিটি তালিকায় প্রায় ২০০ জন সম্ভাব্য ভুক্তভোগীর নাম এবং তাদের সিঙ্গাপুরে নিবন্ধিত ফোন নম্বর অন্তর্ভুক্ত থাকত। টেলিগ্রাম গ্রুপের সদস্যরা এই তালিকার সবাইকে ফোন করত, তারপর নতুন একটি তালিকা পাওয়ার আগে সম্ভাব্য ভুক্তভোগীদের সঙ্গে যোগাযোগ সম্পন্ন করত। প্রতারকদের পূর্বনির্ধারিত স্ক্রিপ্টও সরবরাহ করা হতো, যা তারা প্রতারণামূলক কল করার সময় ব্যবহার করত। প্রতারণার কৌশলের অংশ হিসেবে, প্রতিটি প্রতারক সম্ভাব্য ভুক্তভোগীকে জিজ্ঞেস করত, আমার কণ্ঠস্বর কি পরিচিত শোনাচ্ছে? সাধারণত, ভুক্তভোগী তখন অনুমান করে কোনো পরিচিত বন্ধুর নাম বলত। ডেপুটি পাবলিক প্রসিকিউটররা বলেন, এরপর অভিযুক্তরা ওই বন্ধুর পরিচয় ধারণ করে এবং হোয়াটসঅ্যাপে ভুক্তভোগীর সঙ্গে কয়েক দিন ধরে বার্তা বিনিময় চালিয়ে যেত।
এরপর, ভুক্তভোগীদের বিভিন্ন মিথ্যা অজুহাতে প্রতারিত করে তাদের অর্থ ট্রান্সন্যাশনাল সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রিত ব্যাংক অ্যাকাউন্টগুলোতে স্থানান্তর করতে বাধ্য করা হতো। প্রতারকরা তাদের টেলিগ্রাম গ্রুপে আপডেট পাঠাত, যাতে টঙ এবং/অথবা তার সহকারী ভুক্তভোগীদের টাকা পাঠানোর জন্য সংশ্লিষ্ট ব্যাংক অ্যাকাউন্টের তথ্য বা পে-নাও নম্বর সরবরাহ করতে পারত। টাকা স্থানান্তরের পর, প্রতারকরা লেনদেনের স্ক্রিনশট টেলিগ্রাম গ্রুপে পাঠাত। দিন শেষে, তারা তাদের প্রতিদিনের কাজের অগ্রগতি, যেমন কলের সংখ্যা, নিজ নিজ টেলিগ্রাম গ্রুপে রিপোর্ট করত। টঙ এবং/অথবা তার সহকারী পরে গ্রুপ চ্যাটে একটি ‘দৈনিক প্রতারণার প্রতিবেদন’ পাঠাতেন, যেখানে দিনের ‘সফল প্রতারণাগুলোর’ হিসাব সংকলিত থাকত।
ডেপুটি পাবলিক প্রসিকিউটররা (DPPs) আরও বলেন, অভিযুক্ত ব্যক্তিরা ভুক্তভোগীদের সঙ্গে তাদের কথোপকথনের ভিত্তিতে নামের তালিকাটি বিভিন্ন রঙে শ্রেণিবদ্ধ করত। তাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল গ্রে রঙে চিহ্নিত করতে যদি কলটি কেউ না ধরে, কালো রঙে যদি নম্বরটি ব্যবহারের বাইরে থাকে, হলুদ রঙে যদি নির্ধারিত ব্যক্তির পরিবর্তে অন্য কেউ কলটি ধরে এবং বেগুনি/নীল রঙে যদি সম্ভাব্য ভুক্তভোগী কলটি ধরে।
প্রত্যেক ব্যক্তি ২০২৩ সালের মে থেকে আগস্টের মধ্যে সিন্ডিকেটের জন্য কাজ শুরু করে। তাদের মধ্যে কেউ কেউ একসঙ্গে একই ভুক্তভোগীদের লক্ষ্যবস্তু করত। কোর্টের ডকুমেন্টে উল্লেখ করা হয়েছে যে চুয়া সবচেয়ে বেশি ভুক্তভোগীকে লক্ষ্য করে প্রতারণা করেছে। তার লক্ষ্য ছিল ৫৪ জন, যারা মোট ১১৭,০০০ এরও বেশি ডলার স্থানান্তর করেছে। লোহ ৫৩ জনকে প্রতারণা করে ১১৬,৫৬০ স্থানান্তর করতে বাধ্য করেছেন, আর কেক ৫২ জনকে ১১৬,০৬০ দিয়ে ঠকিয়েছেন। একত্রে, ই এবং হেং ১৬ জনকে ৪৭,০০০ এরও বেশি ডলার প্রতারণা করেছে।
সিঙ্গাপুর পুলিশ বাহিনী এবং রোয়াল মালয়েশিয়ান পুলিশ একসঙ্গে কাজ করে এই ধরনের প্রতারণার তথ্য শেয়ার করেছে।
২০২৪ সালের ১৬ জানুয়ারি মালয়েশিয়ার কর্তৃপক্ষ মারিনা রেসিডেন্স জেবি-তে কনডোমিনিয়াম ইউনিটে অভিযান চালিয়ে পাঁচজনকে গ্রেফতার করেছে। তাদের এক সপ্তাহ পরে সিঙ্গাপুরে নিয়ে আসা হয় এবং ২৪ জানুয়ারি আদালতে অভিযুক্ত করা হয়। পাঁচজনকে এপ্রিল মাসে দণ্ডিত করা হবে।
সিঙ্গাপুরে ২০২৪ সালে ভুক্তভোগীরা ১.১ বিলিয়ন হারিয়েছেন, যা এক বছরে সর্বোচ্চ পরিমাণ ক্ষতির রেকর্ড তৈরি করেছে। মোটের ওপর, ২০১৯ সাল থেকে সিঙ্গাপুরে স্ক্যাম এর মাধ্যমে ৩.৪ বিলিয়নেরও বেশি হারিয়েছেন। ভুক্তভোগীদের পক্ষ থেকে স্বেচ্ছায় তাদের টাকা স্ক্যামারদের হাতে তুলে দিচ্ছে এমন প্রতিবেদন প্রকাশের পর চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে সংসদে Protection from Scams Bill পাস হয়।
এ আইনটি পুলিশকে এমন ক্ষমতা প্রদান করেছে যে, ব্যক্তি স্ক্যামারদের কাছে টাকা পাঠাচ্ছে এরকম সন্দেহ হলে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা স্থানান্তরের ক্ষেত্রে ব্যক্তি বিশেষে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে পারে।
You Must be Registered Or Logged in To Comment লগ ইন করুন?