clock ,

সিঙ্গাপুরে কর্মস্থলে মৃত্যুর সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে, গুরুতর আহতের হার সর্বনিম্ন

সিঙ্গাপুরে কর্মস্থলে মৃত্যুর সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে, গুরুতর আহতের হার সর্বনিম্ন

২০২৪ সালে সিঙ্গাপুরে কর্মস্থলে মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে ৪৩- পৌঁছেছে, ২০২৩ সালে এর পরিমাণ ছিল ৩৬। গত ২৬ মার্চ সিঙ্গাপুরের জনশক্তি মন্ত্রণালয় (MOM ) এক বিবৃতিতে জানায়, কর্মক্ষেত্রে মৃত্যুর শীর্ষ কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে যানবাহন সংক্রান্ত দুর্ঘটনা, শ্বাসরোধ বা ডুবে মৃত্যু এবং কাঠামো সরঞ্জাম ধস বা ভেঙে পড়া। workplace safety and health (WSH) সর্বশেষ বার্ষিক পরিসংখ্যান অনুযায়ী, কর্মক্ষেত্র সংশ্লিষ্ট দুর্ঘটনায়  ৪৩টি মৃত্যুর মধ্যে ৩৪টি ঘটেছে construction, transport and storage Ges marine সেক্টরে অর্থ্যাৎ ৮০ শতাংশ। ২০২৪ সালে নির্মাণ সেক্টরে ২০টি মৃত্যু রেকর্ড করা হয়েছে, যা ২০২৩ সালে ছিল ১৮। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল উত্তর-দক্ষিণ করিডর নির্মাণস্থলে স্থানীয় সাইট প্রকৌশলী এক বাংলাদেশি নির্মাণ শ্রমিকের মৃত্যু। transport and storage সেক্টরে ২০২৪ সালে ৯টি মৃত্যু হয়েছে, ২০২৩ সালে ছিল ৮টি। marine সেক্টরে ২০২৩ সালে কোনো মৃত্যু হয়নি, তবে ২০২৪ সালে ৫টি মৃত্যু রেকর্ড করা হয়েছে। এর মধ্যে দুটি মৃত্যু শ্বাসরোধ বা পানিতে ডুবে যাওয়ার কারণে ঘটেছে, বলে জানিয়েছে MOM । জল সরবরাহ, পয়ঃনিষ্কাশন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সেক্টরে তিনটি মৃত্যু ঘটেছে, এবং উৎপাদন খাতে দুইটি মৃত্যু রেকর্ড করা হয়েছে।


২০২৪ সালে কর্মক্ষেত্রে মৃত্যুর হার প্রতি ,০০,০০০ শ্রমিকের জন্য .- পৌঁছেছে, যা ২০২৩ সালে ছিল .৯৯। ২০২৩ সাল ছিল প্রথম বছর, যখন এই হার -এর নিচে নেমে আসে, যদি ২০২০ সালের বিষয়টি বাদ দেওয়া হয়, যখন কোভিড-১৯ মহামারির কারণে গুরুতর বিঘ্ন ঘটেছিল। পরিস্থিতির উন্নতির পরিকল্পনা নিয়ে সিনিয়র মন্ত্রী জাকি মোহাম্মদ বলেন, নিয়মনীতি কার্যকর করা এবং শিল্পখাতের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তনের জন্য অনেক কাজ করা হয়েছে। তিনি বলেন, একাধিক বিধিনিষেধ আরোপ করা সহজ, কিন্তু এতে কোম্পানিগুলো প্রতিযোগিতামূলক থাকবে না। গত ২৬ মার্চ জুরং আইল্যান্ডে কেমিক্যাল ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানি শেভরন অরোনাইট পরিদর্শনের সময় তিনি বলেন, নিরাপত্তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, তাই এর সঠিক উপায় হলো এমন উৎপাদনশীল পদ্ধতি খুঁজে বের করা, যা খুব বেশি হস্তক্ষেপমূলক হবে না এবং তাদের কাজের দক্ষতায় ব্যাঘাত ঘটাবে না।

গত ২৫ মার্চ এক মিডিয়া ব্রিফিংয়ে, সিঙ্গাপুরের জনশক্তি মন্ত্রণালয় সাংবাদিকদের জানিয়েছে যে, তারা মেরিটাইম অ্যান্ড পোর্ট অথরিটি অফ সিঙ্গাপুরের সঙ্গে একযোগে অফশোর মেরিন ঠিকাদারদের ওপর নজরদারি বাড়ানোর পরিকল্পনা করছে, বিশেষত ডুবুরিদের ক্ষেত্রে, কারণ তাদের মধ্যে কেউ কেউ বাণিজ্যিক ডাইভিং সরঞ্জাম ব্যবহার করছেন না। মন্ত্রণালয় আরও জানিয়েছে, কিছু ঠিকাদার সুবিধার জন্য স্কুবা ডাইভিং সরঞ্জাম ব্যবহার করতে পছন্দ করেন, কারণ বাণিজ্যিক ডাইভিং সরঞ্জাম তুলনামূলকভাবে বেশি জটিল এবং চলাচলে বাধা সৃষ্টি করতে পারে। MOM  জানিয়েছে যে, তারা ডাইভিং পারমিটের ওপর নিয়ন্ত্রণ কঠোর করার পরিকল্পনা করছে, যাতে ডাইভিংয়ের অনুমতি পাওয়ার আগে কোম্পানিগুলো নির্দিষ্ট নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করে। এছাড়া, ২০২৫ সালে মেরিন সেক্টরে পরিদর্শনের সংখ্যা বৃদ্ধির বিষয়েও পরিকল্পনা করছে মন্ত্রণালয়।

২০২৪ সালে সিঙ্গাপুরে কর্মস্থলে বড় ধরনের আঘাতের হার ছিল সবচেয়ে কম, যেখানে প্রতি ১০০,০০০ কর্মীর মধ্যে ১৫.৯টি বড় ধরনের আঘাত রেকর্ড করা হয়েছে। ২০২৪ সালে মোট ৫৮৭টি বড় ধরনের আঘাত রিপোর্ট করা হয়েছে, যা ২০২৩ সালের ৫৯০টির তুলনায় সামান্য কম। বড় ধরনের আঘাত হলো গুরুতর অপ্রাণঘাতী আঘাত, যার মধ্যে অঙ্গ বিচ্ছেদ, অন্ধত্ব এবং পক্ষাঘাত অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। প্রধান কারণগুলোর মধ্যে ছিল পিছলে যাওয়া, যান্ত্রিক দুর্ঘটনা এবং উচ্চতামুখী পতন।


২০২৪ সালে মোট ৫৮৭টি বড় ধরনের কর্মস্থল আঘাতের মধ্যে ৫৫ শতাংশ বা ৩১৯টি ঘটেছে নির্মাণ, উৎপাদন এবং আবাসন খাদ্য সেবা খাতে। ২০২৪ সালে প্রায় অর্ধেক বড় ধরনের আঘাত নির্মাণ এবং উৎপাদন খাতে ঘটেছে। তবে MOM  উল্লেখ করেছে যে, ২০২৪ সালে নির্মাণ সেক্টরে গুরুতর আঘাতের সংখ্যা কমেছে, ২০২৩ সালের তুলনায় শতাংশ হ্রাস পেয়েছে।

২০২৪ সালের নভেম্বর মাসে, কর্তৃপক্ষ নির্মাণ কোম্পানিগুলোকে তাদের নিরাপত্তা প্রক্রিয়া শক্তিশালী করতে এবং শ্রমিকদের মধ্যে নিরাপত্তা সচেতনতা বাড়ানোর জন্য সেফটি টাইম-আউট আরোপ করার আহ্বান জানায়। এছাড়াও MOM  নির্মাণ সাইটে আইন প্রয়োগ আরও কঠোর করেছে।

এদিকে, উৎপাদন সেক্টরে গুরুতর আঘাতের সংখ্যা ২০২৩ সালে ছিল ১৫০টি, ২০২৪ সালে ১২৩টি। MOM  বলেছে যে, তাদের লক্ষ্যবস্তু পরিদর্শন এবং লঙ্ঘনের জন্য ডিমেরিট পয়েন্ট সিস্টেমের কারণে মেটালওয়ার্কিং সেক্টরে মৃত্যু এবং গুরুতর আঘাতের হার ২০. শতাংশ কমেছে, যা ধাতুর আকার পরিবর্তন এবং পুনরায় আকার দেওয়ার সাথে সম্পর্কিত একটি ক্ষেত্র। ২০২৪ সালে মেটালওয়ার্কিং শিল্পে একজনের মৃত্যু ঘটেছে, ২০২৩ সালে দুজন মারা যায়। এই শিল্পে ২০২৪ সালে ৪৭টি গুরুতর আঘাত প্রাপ্তির ঘটনা ঘটেছে, ২০২৩ সালে ছিল ৫৯টি। এছাড়া, ফুড এন্ড বেভারেজ সেক্টরে মৃত্যু এবং গুরুতর আঘাতের হার ১৬. শতাংশ কমেছে।

২০২৪ সালে, কর্মস্থলে ২১,৫২৭টি ছোট আঘাতের ঘটনা ঘটেছে। ২০২৩ সালে এধরনের আঘাতপ্রাপ্তির সংখ্যা ছিল ২২,১৬১টি। স্লিপ, ট্রিপ এবং পড়ে যাওয়া, যন্ত্রপাতির দুর্ঘটনা এবং চলন্ত বস্তুর দ্বারা আঘাত পাওয়ার কারণে এসব দুর্ঘটনার প্রায় ৭১ শতাংশেরই মৃত্যুর ঝুঁকি ছিল কম।

২০২৪ সালে, কর্মক্ষেত্রে রোগে আক্রান্ত কর্মীদের সংখ্যা কমে ৮৯৯- দাঁড়িয়েছে, যা ২০২৩ সালে ছিল ,২২৯। তবে, এটি ২০২১ সালের (৬৫৯) তুলনায় এখনও বেশি, শব্দজনিত বধিরতা, মাংসপেশী এবং ত্বকের রোগের রিপোর্টের বৃদ্ধির কারণে হয়েছে, বিশেষত উন্নত নজরদারি এবং ডাক্তার নিয়োগকর্তাদের মধ্যে বাড়তি সচেতনতার ফলে। মন্ত্রণালয় (MOM ) জানিয়েছে, সচেতনতা বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে এই ধরনের রোগের সংখ্যা আগামী কয়েক বছরেউচ্চথাকার প্রত্যাশা করা হচ্ছে। ২০২৪ সালে ১৯টি বিপজ্জনক ঘটনা (যেগুলি গুরুতর ক্ষতি, মৃত্যু বা আঘাতের কারণ হতে পারে) রিপোর্ট করা হয়েছে, যা ২০২৩ সালের ১৯টি ঘটনার সমান।

MOM  জানিয়েছে যে, ২০২৪ সালে ১৭,০০০ এরও বেশি ইন্সপেকশন কার্যক্রম পরিচালনা করেছে, যা উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ শিল্প যেমন নির্মাণ, উৎপাদন এবং মেরিন সেক্টরগুলোকে ফোকাস করা হয়েছিল।

মন্ত্রনালয় WSH অ্যাক্ট অনুযায়ী ১৬,০০০ এর বেশি আইনানুগ ব্যবস্থা নিয়েছে। এর মধ্যে ,৫০০টি আর্থিক জরিমানা ছিল, যা মোট . মিলিয়ন ছাড়িয়েছে, এবং ৫৮টি কাজ বন্ধ করার আদেশ জারি করা হয়েছে।

MOM  উল্লেখ করেছে যে, কর্মস্থল নিরাপত্তা উন্নত করতে ভিডিও নজরদারি ব্যবস্থা এবং নির্মাণ দরপত্র মূল্যায়নে নিরাপত্তা বিষয়ে আরও গুরুত্ব দেওয়ার মতো পদক্ষেপগুলো বাস্তবায়ন করতে আরো সময় প্রয়োজন হবে। দ্য স্ট্রেইটস টাইমস

You Must be Registered Or Logged in To Comment লগ ইন করুন?

আমাদের অনুসরণ করুন

জনপ্রিয় বিভাগ

সাম্প্রতিক মন্তব্য