আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিযোগিতা এবং যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কনীতি ঘিরে তৈরি হওয়া অনিশ্চয়তা মোকাবিলায় সেমিকন্ডাক্টর খাতের জন্য বিশাল প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছে দক্ষিণ কোরিয়া। বুধবার এক বিবৃতিতে দেশটির সরকার জানিয়েছে, প্রায় ৩৩ ট্রিলিয়ন ওন (২৩.২৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার) সমমূল্যের এই প্যাকেজ চিপ শিল্পকে চাঙা করতে কাজে লাগবে।
গত বছর ঘোষিত ২৬ ট্রিলিয়ন ওনের প্রণোদনা প্যাকেজের তুলনায় এবারের ঘোষণা প্রায় এক-চতুর্থাংশ বেশি। এতে বোঝা যায়, কোরিয়া তাদের প্রযুক্তিনির্ভর অর্থনীতিকে রক্ষা ও শক্তিশালী করতে কতটা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
দক্ষিণ কোরিয়ার সরকার জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের ‘সেকশন ২৩২’ আইনের আওতায় চলমান তদন্ত এবং চীনা প্রতিদ্বন্দ্বীদের চাপ বিবেচনায় রেখেই প্রণোদনা বাড়ানো হয়েছে। চিপ উৎপাদন খাতে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে করপোরেট খরচ বেড়ে যাওয়ায় দেশটির শীর্ষ কোম্পানিগুলো চাপের মুখে রয়েছে।
প্রণোদনার মধ্যে রয়েছে ২০ ট্রিলিয়ন ওনের আর্থিক সহায়তা কর্মসূচি, যা পূর্বের ১৭ ট্রিলিয়ন থেকে বাড়ানো হয়েছে। এতে ঋণ সুবিধা, কর ছাড় এবং উৎপাদন সক্ষমতা বাড়াতে বিভিন্ন সহযোগিতা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
বিশ্বের শীর্ষ মেমোরি চিপ নির্মাতা স্যামসাং ইলেকট্রনিকস ও এসকে হাইনিক্স দক্ষিণ কোরিয়ায় অবস্থিত হলেও, চিপ ডিজাইন ও চুক্তিভিত্তিক উৎপাদনে তারা কিছু প্রতিযোগীর তুলনায় পিছিয়ে। এই দুর্বলতা কাটিয়ে উঠতে সরকারি সহায়তা বড় ভূমিকা রাখতে পারে।
সরকারি তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালে দক্ষিণ কোরিয়ার মোট রপ্তানির ২১ শতাংশ এসেছে চিপ খাত থেকে। ওই বছর দেশটি চিপ রপ্তানি করে ১৪১.৯ বিলিয়ন ডলার আয় করেছে। এর মধ্যে চীনে রপ্তানি হয়েছে ৪.৬ বিলিয়ন ডলার এবং যুক্তরাষ্ট্রে ১০.৭ বিলিয়ন ডলার।
যুক্তরাষ্ট্রে শুল্ক আরোপের সম্ভাবনা সেমিকন্ডাক্টর শিল্পের জন্য নতুন হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি এক বিবৃতিতে বলেছেন, তিনি আমদানিকৃত সেমিকন্ডাক্টরের ওপর শুল্ক বসানোর পরিকল্পনা করছেন। যদিও কিছু কোম্পানির জন্য ছাড় দেওয়া হতে পারে।
এর পরপরই কোরিয়ার অর্থমন্ত্রী চোই সাং-মোক জানান, ‘সেকশন ২৩২’ তদন্তের প্রতিক্রিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সক্রিয় আলোচনা শুরু করবে দক্ষিণ কোরিয়া। কারণ এই আইন অনুযায়ী, কোনো পণ্য যদি জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি হিসেবে বিবেচিত হয়, তাহলে তার আমদানিতে শুল্ক আরোপ করা যায়। সেমিকন্ডাক্টর ও বায়োফার্মাসিউটিক্যাল খাত এরই মধ্যে তদন্তাধীন।
এর আগে, দক্ষিণ কোরিয়া তাদের অটোমোবাইল খাতের জন্যও জরুরি প্রণোদনা ঘোষণা করে। যুক্তরাষ্ট্রের সম্ভাব্য শুল্ক আরোপের প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত খাতটিকে চাঙা করতে এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়। ওই প্যাকেজে ছিল আর্থিক প্রণোদনা, কর ছাড়, ভর্তুকি এবং নতুন বাজার তৈরির প্রতিশ্রুতি।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, দক্ষিণ কোরিয়ার এই প্রণোদনা কর্মসূচি শুধু প্রযুক্তি খাত রক্ষার কৌশল নয়, বরং বৈশ্বিক ভূরাজনৈতিক উত্তেজনার মধ্যেও একটি গুরুত্বপূর্ণ কূটনৈতিক বার্তা। এটি দক্ষিণ কোরিয়ার অর্থনৈতিক ভবিষ্যৎ রক্ষায় দৃঢ় পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
You Must be Registered Or Logged in To Comment লগ ইন করুন?