clock ,

ভূমধ্যসাগরে মৃত্যুযাত্রা

ভূমধ্যসাগরে মৃত্যুযাত্রা

গত ৩০ জানুয়ারি লিবিয়ার পূর্বাঞ্চলে ভূমধ্যসাগরের উপকূলবর্তী ব্রেগা তীরে বেশ কয়েকজন অভিবাসীর মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে বলে বাংলাদেশ দূতাবাস বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে। তাদের সবাই বাংলাদেশি হতে পারে বলে আশঙ্কা করছে স্থানীয় রেড ক্রিসেন্ট। লিবিয়ায় বাংলাদেশ দূতাবাসের বরাত দিয়ে ঢাকায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিজ্ঞপ্তিতে এ আশঙ্কার কথা জানায়। এতে বলা হয়, ব্রেগা থেকে ৪০ কিলোমিটার দূরে আজদাদিয়ায় ২০টি মরদেহ ইতোমধ্যেই সমাহিত করা হয়েছে। মরদেহগুলো পচন ধরতে শুরু করেছিল। কেউই তাদের পরিচয় কিংবা জাতীয়তা নিশ্চিত করতে পারেনি। তবে স্থানীয় রেড ক্রিসেন্টের ধারণা, তারা সবাই বাংলাদেশি নাগরিক। মরদেহগুলো শনাক্ত করা যায় এমন কোনো নথিও পাওয়া যায়নি। এ বিষয়ে দূতাবাসের পক্ষ থেকে খেঁাজখবর নেওয়া হচ্ছে। লিবিয়া হয়ে ইতালি যেতে ভূমধ্যসাগরে যাত্রাপথে নৌকায় ভৈরবের এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। লিবিয়ায় থাকা আত্মীয়ের মাধ্যমে তার মৃত্যুর খবর পায় পরিবার। চার মাস আগে ইতালি যেতে স্থানীয় এক দালালের মাধ্যমে লিবিয়ায় পাড়ি জমান সুমন মিয়া। ২৪ জানুয়ারি ২৫ জন যাত্রী নিয়ে লিবিয়া থেকে ভূমধ্যসাগর হয়ে একটি বোট রওনা দেয় ইতালির উদ্দেশে। মাল্টা পৌঁছে বোটে সমস্যা দেখা দিলে সবাই নেমে গেলেও সুমনকে মৃত অবস্থায় পান সঙ্গে থাকা অন্য যাত্রীরা। চার দিন পর স্বজনরা জানতে পারে সুমনের মৃত্যুর খবর। লক্ষ্মীপুর এলাকার ২৫-৩০ জন যুবক লিবিয়ায় রয়েছেন। কেউ ১ বছর কেউ ৬ মাস ধরে সেখানে পড়ে আছেন। ৮ লাখ টাকায় দালালদের সঙ্গে চুক্তি হলেও কেউ ১৫ লাখ, কেউ ২০ লাখ টাকা দিয়েও ইতালি যেতে পারছেন না। ভুক্তভোগীদের পরিবারগুলো দালালদের নাম প্রকাশে ভয় পাচ্ছে। ইতালির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, গত বছর ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইতালি গিয়েছে ৭৯ হাজার ৯২৫ জন বাংলাদেশি। এদের মধ্যে ডিসেম্বরেই গেছেন ১৩ হাজারের বেশি। এছাড়া আলবেনিয়া, রোমানিয়া এবং ক্রোয়েশিয়ায় শ্রমিক ভিসায় গিয়ে বাংলাদেশি দালালদের মাধ্যমে সড়ক পথে ইতালিতে পৌঁছাচ্ছেন অনেকে। 

ভূমধ্যসাগরে মৃত্যুযাত্রা থামছে না। স্বপ্নের দেশ ইউরোপ যাওয়ার আশায় বাংলাদেশিসহ বিভিন্ন দেশের মানুষ দালাল চক্রের প্রতারণার ফাঁদে পা দিয়ে লিবিয়ার উপকূল দিয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে খোলা নৌকায় যাত্রা করে ভূমধ্যসাগরে অকালে প্রাণ হারাচ্ছে অসংখ্য অভিবাসী প্রত্যাশী। দালাল চক্র ইউরোপে পৌঁছে দেয়ার প্রলোভন দিয়ে লিবিয়ায় নিয়ে জিম্মি করে নির্যাতন চালিয়েও বিভিন্ন সময়ে মুক্তিপণ আদায় করছে। এতকিছুর পরেও অভিবাসনপ্রত্যাশীদের ফেরানো যাচ্ছে না। ভূমধ্যসাগরে এভাবে সলিল সমাধিতে যেমন দেশ মূল্যবান সম্পদ হারাচ্ছে পাশাপাশি একটি পরিবারও অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে যায়, যা কখনোই কাম্য নয়।


You Must be Registered Or Logged in To Comment লগ ইন করুন?

আমাদের অনুসরণ করুন

জনপ্রিয় বিভাগ

সাম্প্রতিক মন্তব্য