ভাত এশিয়ার কোটি কোটি মানুষের প্রধান খাদ্য। সহজপাচ্য ও পুষ্টিকর এই খাবারে এবার মিলেছে বিপজ্জনক মাত্রার আর্সেনিক—যা জনস্বাস্থ্যের জন্য বড় হুমকি হয়ে দাঁড়াচ্ছে।
‘দ্য ল্যানসেট প্ল্যানেটারি হেলথ’ জার্নালে প্রকাশিত সাম্প্রতিক এক গবেষণায় উঠে এসেছে এ চাঞ্চল্যকর তথ্য। গবেষণাটি পরিচালনা করেছে যুক্তরাষ্ট্রের কলম্বিয়া ইউনিভার্সিটির একদল বিজ্ঞানী। তারা দীর্ঘ এক দশক ধরে ২৮ ধরনের চালের নমুনা পরীক্ষা করে চাল ও ধানজমিতে আর্সেনিকের উপস্থিতি শনাক্ত করেছেন।
গবেষণায় বলা হয়েছে, বাংলাদেশ ও ভারতের মতো এশিয়ার অনেক দেশের ধানক্ষেতে বিপজ্জনক হারে জমছে আর্সেনিক। এর কারণ হিসেবে বিজ্ঞানীরা দায়ী করেছেন জলবায়ু পরিবর্তন, বাতাসে বেড়ে যাওয়া কার্বন-ডাই অক্সাইড, কীটনাশকের লাগামহীন ব্যবহার এবং ভূগর্ভস্থ পানির ওপর অতিরিক্ত নির্ভরতাকে।
এইসব কারণে ধানগাছ আর্সেনিক শোষণ করে এবং তা চালের মধ্যেও প্রবেশ করে। বিশেষত সেদ্ধ চালের মধ্যে আর্সেনিকের মাত্রা সবচেয়ে বেশি—যা ভাত হিসেবে প্রতিদিন আমাদের খাদ্যতালিকায় রয়েছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (WHO) তথ্য অনুযায়ী, শরীরের প্রতি কেজি ওজনে সর্বোচ্চ ২ মাইক্রোগ্রাম আর্সেনিক গ্রহণ নিরাপদ। তবে গবেষণায় দেখা গেছে, অনেক অঞ্চলের চালে এই মাত্রা ছাড়িয়ে যাচ্ছে। এর ফলে হৃদরোগ, কিডনি জটিলতা, ফুসফুসের সমস্যা, স্নায়ুবিক রোগ ও ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ছে। এমনকি ত্বকজনিত রোগও বাড়ছে নীরবে।
বিশেষভাবে উদ্বেগজনক হলো ‘আর্সেনিক-থ্রি’ (আর্সেনাইড) নামে এক ধরনের বিষাক্ত যৌগের উপস্থিতি—যা ভাত, চিড়া, খই বা মুড়ির মতো চালজাত খাদ্যের মাধ্যমে আমাদের শরীরে ঢুকছে।
গবেষকরা সতর্ক করে বলেছেন, এখনই পদক্ষেপ না নিলে ভবিষ্যতে খাদ্যতালিকাই হয়ে উঠবে প্রাণঘাতী। একমাত্র সমাধান হিসেবে তারা বলছেন, ধান চাষে ভূগর্ভস্থ পানির ব্যবহার কমাতে হবে এবং বিকল্প সেচ পদ্ধতি খুঁজে বের করতে হবে।
তথ্যসূত্র: বিবিসি, দ্য ল্যানসেট প্ল্যানেটারি হেলথ
You Must be Registered Or Logged in To Comment লগ ইন করুন?