শুধুমাত্র জৈবিকভাবে নারী হিসেবে জন্ম নেওয়া ব্যক্তিরাই ‘নারী’ পরিচয়ে বিবেচিত হবেন—ব্রিটিশ সুপ্রিম কোর্টের এমন রায়ের পর থেকে যুক্তরাজ্যজুড়ে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে। বিশেষ করে ট্রান্সজেন্ডার সম্প্রদায় এই রায়কে তাদের অধিকার খর্ব করার প্রচেষ্টা হিসেবে দেখছে।
গত বুধবার (১৭ এপ্রিল) দেওয়া এই রায়ের পর লন্ডনের রাস্তায় হাজারো মানুষ বিক্ষোভে অংশ নেন। শনিবার পার্লামেন্ট স্কয়ারে আয়োজিত এই কর্মসূচিতে ট্রান্সজেন্ডার ব্যক্তি ছাড়াও তাদের সমর্থনে থাকা বহু মানুষ অংশ নেন। বিক্ষোভকারীরা একে ‘জরুরি প্রতিবাদ’ হিসেবে অভিহিত করেছেন। রংধনু পতাকা, প্ল্যাকার্ড আর স্লোগানে মুখর হয়ে ওঠে পুরো স্কয়ার।
ব্রিটিশ সুপ্রিম কোর্টের পাঁচ সদস্যের বেঞ্চের দেওয়া রায়ে বলা হয়, লিঙ্গ নির্ধারণে ‘জেন্ডার রিকগনিশন সার্টিফিকেট’ ব্যবহার করলে তা আইনের দৃষ্টিতে নারীর সংজ্ঞার সঙ্গে সাংঘর্ষিক হতে পারে। ২০১০ সালের সমতা আইনের যে বৈষম্যবিরোধী ধারা রয়েছে, তা কেবলমাত্র জৈবিক লিঙ্গের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য—এই ব্যাখ্যাই দিয়েছেন আদালত।
ব্রিটেনের মানবাধিকার কমিশনের প্রধান জানান, এই রায়ের বাস্তব পরিণতি হলো—নারীদের জন্য নির্ধারিত টয়লেট, হাসপাতালের ওয়ার্ড বা ক্রীড়া দলে ট্রান্সজেন্ডার নারীদের অংশগ্রহণ সীমিত করা হতে পারে।
বিক্ষোভে অংশ নেওয়া ১৯ বছর বয়সী ট্রান্সজেন্ডার তরুণী সোফি গিবস বলেন, “এই রায় আমাদের কাছ থেকে মৌলিক অধিকার কেড়ে নেওয়ার শামিল। এটা খুবই হতাশাজনক। যে সমাজ এতদিন আমাদের স্বীকৃতি দিয়েছিল, এখন সেই সমাজই আমাদের পিছিয়ে দিচ্ছে।”
অন্যদিকে, সরকারের ভাষ্য, এই রায়ের মাধ্যমে সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের কাজের ক্ষেত্রে আরও স্বচ্ছতা পাবে এবং নারীরা নিজেদের অধিকারে অধিকতর আত্মবিশ্বাসী হবেন।
সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ইংল্যান্ড, স্কটল্যান্ড ও ওয়েলসে মোট জনসংখ্যা প্রায় সাড়ে ছয় কোটি। এর মধ্যে আনুমানিক এক কোটি ১৬ লাখ মানুষ নিজেদের ট্রান্সজেন্ডার হিসেবে পরিচয় দেন। এখন পর্যন্ত ৮,৫০০-এর বেশি ব্যক্তি লিঙ্গ পরিবর্তনের সনদ নিয়েছেন।
তবে বিক্ষোভকারীদের শঙ্কা, সুপ্রিম কোর্টের এই রায় ভবিষ্যতে আরও বৈষম্যমূলক সিদ্ধান্তের পথ প্রশস্ত করতে পারে।
You Must be Registered Or Logged in To Comment লগ ইন করুন?