clock ,

বিদ্রোহের কবি থেকে রূপালী পর্দার শিল্পী

বিদ্রোহের কবি থেকে রূপালী পর্দার শিল্পী

জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম শুধু কবিতার পাতায় নয়, চলচ্চিত্রেও রেখে গেছেন তাঁর বলিষ্ঠ সৃজনশীল উপস্থিতি। আগামীকাল কবির জন্মবার্ষিকী। এই উপলক্ষে ফিরে দেখা তাঁর চলচ্চিত্রময় অধ্যায়, যা বাংলা সিনেমার ইতিহাসে এক অনন্য সংযোজন।

ত্রিশ চল্লিশ দশকের চলচ্চিত্রে নজরুলের বিচরণ ছিল বহুমাত্রিকগীতিকার, সুরকার, সংগীত পরিচালক, অভিনেতা পরিচালক হিসেবে। ১৯৩১ সালের প্রথম সবাক বাংলা চলচ্চিত্রজামাই ষষ্ঠী’-তে সুর ভান্ডারীর দায়িত্ব পালন করেন তিনি। এরপরধ্রুব’, ‘বিষ্ণুমায়া’, ‘কৃষ্ণকান্তের উইল’, ‘বিদ্যাপতি’, ‘সাপুড়ে’, ‘গোরাসহ বহু সিনেমায় তিনি গান লিখেছেন, সুর দিয়েছেন এবং কখনো কখনো অভিনয়ও করেছেন।

১৯৩৩ সালেধ্রুবসিনেমায় দেবর্ষি নারদের চরিত্রে অভিনয় করেন নজরুল এবং গানও গেয়েছিলেন। একই সময়েধুপছায়ানামে একটি সিনেমা পরিচালনা অভিনয় করেন, যেখানে তিনি দেবতা বিষ্ণুর ভূমিকায় ছিলেন। নজরুলের লেখা সুর করা গান সে সময় সিনেমার প্রাণ হয়ে উঠেছিল।


বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য হলোগোরাসিনেমায় রবীন্দ্রসংগীত নিয়ে বিতর্ক। বিশ্বভারতীর আপত্তির মুখে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর নিজে নজরুলকে সমর্থন করে বলেন, “আমার গান কীভাবে গাইতে হবে, সেটা কি তোমার চেয়ে ওরা ভালো জানে?” নজরুল এরপর রবীন্দ্রসংগীত নিজের লেখা গান ব্যবহার করেন এক নতুন রূপে, যা প্রশংসিত হয়েছিল।

বাংলা হিন্দি উভয় ভাষাতেই নজরুলের অবদান ছিল সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ।চৌরঙ্গী’, ‘দিলরুবা’, ‘মদিনা’, ‘পাতালপুরী’, ‘বিদ্যাপতিসহ একাধিক ছবিতে তিনি ছিলেন প্রধান গীতিকার সুরকার।

শুধু নির্মাণেই নয়, প্রযোজনাতেও নজরুল রেখেছেন উপস্থিতি। ১৯৪১ সালে শেরে বাংলা কে ফজলুল হকের সহযোগিতায় গঠন করেনবেঙ্গল টাইগার্স পিকচার্স তার সঙ্গে ছিলেন আব্বাসউদ্দীন, মোহাম্মদ খসরু, হুমায়ূন কবীরসহ সময়ের অনেক বিশিষ্টজন।

স্বাধীন বাংলাদেশের চলচ্চিত্রেও নজরুল ফিরে এসেছেন গল্পকার হিসেবে। ১৯৭১ সালে মুক্তি পাওয়া খান আতাউর রহমানেরসুখ-দুঃখছিল নজরুলের গল্প থেকে নির্মিত প্রথম ছবি। এরপর মুস্তাফিজেরমায়ার বাঁধন’, রাজ্জাকেরজ্বিনের বাদশা’, মতিন রহমানেররাক্ষুসী’, গুলজার-মৌসুমীরমেহের নেগার’, গীতালি হাসানেরপ্রিয়া তুমি সুখী হওসহ আরও কয়েকটি ছবি নজরুলের গল্প উপন্যাস অবলম্বনে নির্মিত হয়।

নজরুলের শিশুতোষ কবিতালিচুচোরখুকি কাঠবেড়ালিথেকেও নির্মিত হয়েছে শিশুদের জন্য চলচ্চিত্র।

সাহিত্য, সঙ্গীত সিনেমাতিন ক্ষেত্রেই নজরুল ছিলেন সাহসী, সৃজনশীল প্রভাবশালী। তাঁর অবদান বাংলা চলচ্চিত্রের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় হয়ে রয়ে গেছে। জন্মজয়ন্তীর এই মুহূর্তে তাই সিনেমার পর্দায় তাঁর অবদানের কথা নতুন করে স্মরণ করার উপযুক্ত সময়।

 

You Must be Registered Or Logged in To Comment লগ ইন করুন?

আমাদের অনুসরণ করুন

জনপ্রিয় বিভাগ

সাম্প্রতিক মন্তব্য