বিভিন্ন দেশের পণ্যের ওপর নতুন করে শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এই তালিকায় বাংলাদেশের নামও রয়েছে, যেখানে দেশটির পণ্যের ওপর ৩৭ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়েছে।
বর্তমানে বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানিকৃত পণ্যের গড় শুল্ক হার ছিল ১৫ শতাংশ। তবে নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, এ হার বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৭ শতাংশ। স্থানীয় সময় বুধবার বিকেল ৪টায় হোয়াইট হাউসে এক সংবাদ সম্মেলনে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এই নতুন শুল্ক হার ঘোষণা করেন।
সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, "নতুন এই 'রিসিপ্রোকাল ট্যারিফ' ব্যবস্থা যুক্তরাষ্ট্রকে পুনরায় সম্পদশালী করবে।" তার মতে, এটি দেশটির অর্থনীতিকে শক্তিশালী করবে এবং বাণিজ্যে ন্যায্যতা আনবে।
অর্থনীতিবিদদের মতে, এই শুল্ক নীতি বিশ্ব অর্থনীতিতে বড় ধরনের প্রভাব ফেলতে পারে। অনেক দেশ প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্তকে 'বাণিজ্য যুদ্ধ' হিসেবে অভিহিত করছে। বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন যে, এই ধরনের শুল্ক আরোপের ফলে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
মার্কিন অর্থনীতি পুনর্গঠনের অংশ হিসেবে ট্রাম্প প্রশাসন ন্যূনতম ১০ শতাংশ থেকে শুরু করে বিভিন্ন দেশের ওপর ভিন্নমাত্রার শুল্ক আরোপ করেছে।
৫ এপ্রিল থেকে যুক্তরাজ্য, সিঙ্গাপুর, ব্রাজিল, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, তুরস্ক, কলম্বিয়া, আর্জেন্টিনা, এল সালভাদর, সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং সৌদি আরবের পণ্যের ওপর ন্যূনতম ১০ শতাংশ শুল্ক কার্যকর হবে।৯ এপ্রিল থেকে আরও প্রায় ৬০টি দেশের ওপর উচ্চতর শুল্ক আরোপ করা হবে।আজ থেকেই বিদেশে প্রস্তুতকৃত অটোমোবাইলের ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক কার্যকর হয়েছে।ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোর জন্য শুল্ক হার নির্ধারণ করা হয়েছে ২০ শতাংশ।
যুক্তরাষ্ট্রের অফিস অব দ্য ইউনাইটেড স্টেটস ট্রেড রিপ্রেজেন্টেটিভ (ইউএসটিআর) এর তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালে বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্যের পরিমাণ ছিল আনুমানিক ১০.৬ বিলিয়ন ডলার। বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি করা পণ্যের মূল্য ছিল প্রায় ৮.৪ বিলিয়ন ডলার, যেখানে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বাংলাদেশে রপ্তানি হয় ২.২ বিলিয়ন ডলারের পণ্য।
ঢাকায়
অবস্থিত মার্কিন দূতাবাসের তথ্য মতে, বাংলাদেশ
থেকে যুক্তরাষ্ট্রে প্রধানত তৈরি পোশাক, জুতা,
টেক্সটাইল সামগ্রী এবং কৃষিপণ্য রপ্তানি
হয়। অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্র থেকে বাংলাদেশে কৃষিজাত
পণ্য (খাদ্যশস্য, সয়াবিন, তুলা, গম, ভুট্টা), যন্ত্রপাতি
এবং লোহা-ইস্পাতজাত পণ্য
আমদানি করা হয়।
নতুন শুল্ক নীতির আওতায় দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশের ওপর আরোপিত শুল্ক হার নিম্নরূপ:
বাংলাদেশ - ৩৭%
ভারত - ২৬%
পাকিস্তান - ২৯%
শ্রীলঙ্কা - ৪৪%
নেপাল - ১০%
মিয়ানমার - ৪৪%
ভিয়েতনাম - ৪৬%
কম্বোডিয়া - ৪৯%
লাওস - ৪৮%
ফিলিপাইন - ১৭%
ডোনাল্ড ট্রাম্পের মতে, যুক্তরাষ্ট্রের ওপর দীর্ঘদিন ধরে অন্যান্য দেশ উচ্চ শুল্ক আরোপ করে আসছে, যা মার্কিন অর্থনীতির জন্য ক্ষতিকর। তিনি বলেন, "আমরা দীর্ঘদিন ধরে প্রতারণার শিকার হচ্ছিলাম। এটি সেই অন্যায়ের জবাব।"
তবে ট্রাম্প দাবি করেন, যুক্তরাষ্ট্রের আরোপিত শুল্ক অন্যদের তুলনায় কম। "এটি সম্পূর্ণ পাল্টা শুল্ক নয়। আমি চাইলে আরও বাড়াতে পারতাম, কিন্তু সেটি করলে অনেক দেশের জন্য এটি কঠিন হয়ে যেত," বলেন তিনি।
ট্রাম্প এই দিনটিকে যুক্তরাষ্ট্রের "অর্থনৈতিক মুক্তির দিন" হিসেবে অভিহিত করেন এবং বলেন, "এটি আমাদের শিল্পের পুনর্জন্মের দিন। আজ থেকে আমরা পুনরায় সম্পদশালী হচ্ছি।"
You Must be Registered Or Logged in To Comment লগ ইন করুন?