clock ,

জাপানে 'কিরাকিরা' নামের ওপর বিধিনিষেধ: 'পিকাচু' বা 'হ্যালো কিটি' নামে শিশুর নাম রাখা যাবে না

জাপানে 'কিরাকিরা' নামের ওপর বিধিনিষেধ: 'পিকাচু' বা 'হ্যালো কিটি' নামে শিশুর নাম রাখা যাবে না

জাপানে শিশুদের ব্যতিক্রমধর্মী এবং অপ্রচলিত উচ্চারণযুক্ত নাম, যেগুলোকিরাকিরানাম হিসেবে পরিচিত, সেগুলোর ওপর সরকারি বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। এর ফলে এখন থেকেপিকাচু’, ‘হ্যালো কিটি’, কিংবানাইকিনামগুলো আর শিশুর জন্য নিবন্ধনযোগ্য নয়কমপক্ষে কানজি অক্ষরে সে উচ্চারণ প্রকাশ করা যাবে না।

২০২৫ সালের ২৬ মে থেকে কার্যকর হওয়া নতুন আইন অনুযায়ী, এখন থেকে শিশুর নামের উচ্চারণ এবং ব্যবহৃত কানজি অক্ষরের অর্থ ধ্বনির মধ্যে একটি যুক্তিসংগত মিল থাকতে হবে। সরকারের এই পদক্ষেপের লক্ষ্যনাম নিবন্ধন প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা আনা এবং প্রশাসনিক বিভ্রান্তি কমানো।

কী এইকিরাকিরানাম?

কিরাকিরা’ (キラキラ) জাপানি শব্দ, যার অর্থঝলমলেবাউজ্জ্বল এটি মূলত এমনসব অস্বাভাবিক জটিল উচ্চারণযুক্ত নাম বোঝাতে ব্যবহৃত হয়, যেগুলোর বানান কানজি অক্ষরে একরকম, কিন্তু উচ্চারণ সম্পূর্ণ ভিন্নপ্রায়শই জনপ্রিয় অ্যানিমে, ভিডিও গেমস বা ব্র্যান্ডের নাম অনুসারে রাখা হয়। যেমন

ピカチュウ” (Pikachu) নামে শিশুর নাম রাখার জন্য অভিভাবকরা কখনও এমন কানজি ব্যবহার করেন যার উচ্চারণ আসলেহিরোতোবাকেইতা

ナイキ” (Nike) নামটি একটি জটিল বানানে রূপান্তর করে কানজিতে লেখা হয়।

ভাষাবিদ জন মাহার বলেন, “শিক্ষকরা যখন স্কুলে রোলকল করেন, তখন এসব নাম উচ্চারণে তারা বিপাকে পড়েন। অনেক সময় নামের অর্থও বিভ্রান্তিকর বা হাস্যকর হয়ে পড়ে।

কেন এই পরিবর্তন?

ভাষা সংস্কৃতি বিশ্লেষকদের মতে, জাপানি ঐতিহ্যবাহী নাম পদ্ধতির প্রতি এক ধরনের বিক্ষোভ বা ভিন্নতা সৃষ্টির আকাঙ্ক্ষা থেকেই 'কিরাকিরা' নামের উদ্ভব।
পশ্চিমা সংস্কৃতির প্রভাব ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যের প্রকাশএই দুয়ের মিশ্রণেই অভিভাবকরা সন্তানদেরঅনন্যনাম দিতে আগ্রহী হন। তবে এই প্রবণতা প্রশাসনিক জটিলতা, চিকিৎসা রেকর্ডের অসংগততা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করছে বলে সরকারি কর্মকর্তারা দাবি করেছেন।

নতুন আইনের গুরুত্বপূর্ণ দিকগুলো

নিবন্ধনের সময়ফুরিগানাবাধ্যতামূলক: এখন থেকে পরিবারের সদস্যদের নামের সঙ্গে ফুরিগানা (হিরাগানা/কাটাকানায় উচ্চারণ নির্দেশ) যুক্ত করতে হবে।

প্রচলিত পাঠের সাথে মিল: নামের উচ্চারণ যদি ব্যবহার করা কানজি অক্ষরের প্রচলিত পাঠ বা অর্থের সঙ্গে যুক্তিসংগত না হয়, তবে তা বাতিল করা হবে।

পুরোনো নিবন্ধন যাচাই: সরকার পুরোনো নামের উচ্চারণ যাচাই করার জন্য ডাকযোগে চিঠি পাঠাবে। যাদের ক্ষেত্রে অসামঞ্জস্য পাওয়া যাবে, তাদের এক বছরের মধ্যে সংশোধনী জমা দিতে হবে।

আইনি জটিলতা: নতুন শিশুদের ক্ষেত্রে ব্যাখ্যা সন্তোষজনক না হলে অভিভাবকদের স্থানীয় আইন দফতরে পাঠানো হতে পারে।

তবে সরকারের পক্ষ থেকে স্পষ্ট করা হয়েছেআগে থেকে যারা কিরাকিরা নামধারী, তাদের নাম পরিবর্তনের কোনো বাধ্যবাধকতা নেই।

ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্য বনাম ঐতিহ্য’: বিতর্ক অব্যাহত

ভাষাবিদ অ্যাডাম আলেক্সিচ বলেন, “নতুন আইন কিছুটা নিয়ন্ত্রণ আনলেও, নামকরণের ক্ষেত্রে ব্যক্তিত্ব প্রকাশের আকাঙ্ক্ষা থেমে থাকবে না। অভিভাবকরা হয়তো এবার বিরল কানজি ব্যবহার করবেন বা নাম কাটাকানায় লিখে নিবন্ধনের পথ খুঁজবেন।

তিনি আরও বলেন, “এটা কেবল জাপানের সমস্যা নয়বিশ্বজুড়েই দেখা যাচ্ছে, বাবা-মায়েরা সন্তানদের আলাদা করে তুলতে চান, যা অনেক সময় প্রথা বা ভাষার বিরুদ্ধে গিয়ে দাঁড়ায়।

জাপান সরকার সরাসরিকিরাকিরানাম নিষিদ্ধ না করলেও নতুন আইন কার্যকর করে বিচিত্র উচ্চারণ অস্বাভাবিক নামকরণকে নিরুৎসাহিত করছে। এর ফলে প্রশাসনিক শৃঙ্খলা বাড়বে বলে আশা করা হচ্ছে। তবে নামের মাধ্যমে নিজস্বতা প্রকাশের প্রবণতা যে আগামী দিনেও বহাল থাকবে, সে ব্যাপারে সংশয় নেই ভাষাবিদদের।

 

You Must be Registered Or Logged in To Comment লগ ইন করুন?

আমাদের অনুসরণ করুন

জনপ্রিয় বিভাগ

সাম্প্রতিক মন্তব্য