দক্ষিণ কোরিয়ার নতুন প্রেসিডেন্ট লি জায়ে মিউং: সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে 'জাজমেন্ট ডে'-তে বিজয়
দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন উদারপন্থি মানবাধিকার আইনজীবী ও রাজনীতিক লি জায়ে মিউং। বুধবার (৪ জুন) দেশটির জাতীয় নির্বাচন কমিশন আনুষ্ঠানিকভাবে তার জয় ঘোষণা করে। এই নির্বাচনের মধ্য দিয়ে দক্ষিণ কোরিয়া একটি অস্থির ও উত্তপ্ত রাজনৈতিক অধ্যায়ের অবসান ঘটাতে চলেছে।
লি জায়ে মিউং-এর এই বিজয়কে দেশটির গণতন্ত্রের জন্য এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা হিসেবে দেখা হচ্ছে, বিশেষ করে যখন তার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী ও সাবেক প্রেসিডেন্ট ইউন সুক ইওল সামরিক আইন জারির কারণে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় অভিযুক্ত।
নির্বাচনের পর এক আবেগঘন বক্তৃতায় লি বলেন, “এই নির্বাচন ছিল আমাদের ‘জাজমেন্ট ডে’—যেদিন জনগণ অতীতের পাপ ও ব্যর্থতার বিচার করল। এখন সময় দেশকে আবার গড়ে তোলার। আমার প্রধান অগ্রাধিকার হবে—কোনো স্বৈরাচার যেন আর কখনো জনগণের বিরুদ্ধে অস্ত্র না তোলে তা নিশ্চিত করা।”
তিনি আরও বলেন, “সামরিক হস্তক্ষেপের ক্ষত সারিয়ে তুলতে আমরা সবাই মিলে কাজ করব। দেশের জনগণই আমাদের আসল শক্তি।”
গত ডিসেম্বরে ইউন সুক ইওল সরকার আকস্মিকভাবে সামরিক আইন জারি করলে মাত্র ছয় ঘণ্টার মধ্যে সেটি বাতিল করতে বাধ্য হয়। তবে সেই সময়ে দেশজুড়ে রাজনৈতিক অস্থিরতা, বিক্ষোভ এবং অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা ব্যাপক আকার ধারণ করে।
এরপর প্রেসিডেন্ট ইউন-এর বিরুদ্ধে অভিশংসনের প্রক্রিয়া শুরু হয় এবং বর্তমানে তার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলার বিচার চলছে। এই পটভূমিতেই ২০২৫ সালের এই প্রেসিডেন্ট নির্বাচনকে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার লড়াই হিসেবে দেখছে অনেক বিশ্লেষক।
৬১ বছর বয়সী লি জায়ে মিউং তার প্রথম দিনের ঘোষণায় বলেন, “দেশের অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় আমি জরুরি ভিত্তিতে পদক্ষেপ নিচ্ছি। বিশেষ করে মধ্য ও নিম্ন আয়ের পরিবারগুলোর জীবনযাত্রার ব্যয় হ্রাস এবং ছোট ব্যবসাগুলোকে টিকিয়ে রাখাই আমার প্রধান কাজ।”
তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চলমান আমদানি শুল্ক ইস্যু নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেন এবং জানান, ওয়াশিংটনের সঙ্গে একটি নতুন সমঝোতায় পৌঁছানো তার অগ্রাধিকারের তালিকায় রয়েছে, যাতে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য ভারসাম্য নিশ্চিত করা যায়।
দক্ষিণ কোরিয়া জাতীয় নির্বাচন কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, মোট প্রায় সাড়ে তিন কোটি ভোটারের মধ্যে লি পেয়েছেন ৪৯.৪২% ভোট, আর তার প্রতিদ্বন্দ্বী কিম মুন সু পেয়েছেন ৪১.১৫% ভোট। এটি ছিল ১৯৯৭ সালের পর সর্বোচ্চ ভোটার উপস্থিতির নির্বাচন।
বুধবার সকাল ১১টায় স্থানীয় সময় একটি সংক্ষিপ্ত অভিষেক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে লি জায়ে মিউং দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তিনি এখন দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট এবং সামরিক বাহিনীর সর্বাধিনায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন মুখপাত্র জানিয়েছেন, “এই নির্বাচন প্রমাণ করেছে—দক্ষিণ কোরিয়ার গণতন্ত্র এখনো জীবন্ত, জনগণই এখানকার প্রকৃত ক্ষমতার উৎস।”
You Must be Registered Or Logged in To Comment লগ ইন করুন?