পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে চলতি জুন মাসের প্রথম তিন দিনেই প্রবাসীরা বাংলাদেশে পাঠিয়েছেন ৬০ কোটি ৪০ লাখ মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৭ হাজার ৪২৯ কোটি টাকা (প্রতি ডলার ১২৩ টাকা ধরে)। বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদনে এই তথ্য উঠে এসেছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ঈদের সময় সাধারণত প্রবাসীরা কোরবানির পশু কেনা, পোশাক, উপহার ও পারিবারিক ব্যয়ের জন্য দেশে অতিরিক্ত অর্থ পাঠান। ফলে প্রতি ঈদে রেমিট্যান্স প্রবাহে উল্লম্ফন দেখা যায়। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি।
অর্থনীতিবিদদের মতে, রেমিট্যান্স শুধু প্রবাসী পরিবারের জীবনমান উন্নত করে না, বরং দেশের সামগ্রিক অর্থনীতিতে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখে। ঈদের সময় গ্রামীণ অর্থনীতির চাঙ্গাভাব এবং নগদ অর্থের চলাচল ব্যবসা-বাণিজ্যে ইতিবাচক প্রভাব ফেলে।
মে মাসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স, সৌদি প্রবাসীরা শীর্ষে
বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাব অনুযায়ী, গত মে মাসে দেশে এসেছে ২৯৬ কোটি ৯৬ লাখ ডলার, যা দেশের ইতিহাসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ একক মাসের রেমিট্যান্স প্রবাহ। তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি অর্থ এসেছে সৌদি আরব থেকে—৫৩ কোটি ৩৩ লাখ ডলার। দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে সংযুক্ত আরব আমিরাত (৩৫ কোটি ১৪ লাখ ডলার), তৃতীয় যুক্তরাজ্য (৩৪ কোটি ৬৮ লাখ ডলার)। এরপরের দেশগুলো হচ্ছে মালয়েশিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, ওমান, ইতালি, কুয়েত, কাতার এবং সিঙ্গাপুর।
রেমিট্যান্স পাঠানোর মাধ্যমে শীর্ষ ১০ দেশের মে মাসের হিসাব:
সৌদি আরব: ৫৩.৩৩ কোটি ডলার
আরব আমিরাত: ৩৫.১৪ কোটি ডলার
যুক্তরাজ্য: ৩৪.৬৮ কোটি ডলার
মালয়েশিয়া: ৩৪.০৪ কোটি ডলার
যুক্তরাষ্ট্র: ২২.৩৬ কোটি ডলার
ওমান: ১৮.১৩ কোটি ডলার
ইতালি: ১৫.৮৮ কোটি ডলার
কুয়েত: ১৪.০২ কোটি ডলার
কাতার: ১৩.৬৪ কোটি ডলার
সিঙ্গাপুর: ১০.৯০ কোটি ডলার
রেমিট্যান্স প্রবাহে বৈধ পথের উৎসাহ
সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংক প্রবাসীদের বৈধ পথে অর্থ পাঠাতে নানা প্রণোদনা দিয়ে যাচ্ছে। ডিজিটাল চ্যানেলের সহজলভ্যতা এবং হুন্ডি বন্ধে কড়াকড়ির ফলে অধিকাংশ প্রবাসী এখন ব্যাংকিং চ্যানেল ব্যবহার করছেন।
চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে চলতি জুনের ৩ তারিখ পর্যন্ত মোট ২,৮১১ কোটি ডলার রেমিট্যান্স এসেছে, যা গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় ৩০ শতাংশ বেশি। আগের অর্থবছরে এই সময়ে এসেছিল ২,১৬৬ কোটি ডলার।
বর্তমান সরকারের অধীনে চলমান অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার পরিকল্পনার অংশ হিসেবে টানা আট মাস দুই বিলিয়নের বেশি এবং মার্চে তিন বিলিয়নের বেশি ডলার রেমিট্যান্স এসেছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ঈদকেন্দ্রিক ব্যয়ের চাহিদা, সরকারের প্রণোদনা ও বৈধ চ্যানেলের ব্যবহার বাড়ায় রেমিট্যান্স প্রবাহে এই ঊর্ধ্বগতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এই প্রবণতা দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ও অর্থনীতিকে সহনীয় মাত্রায় ধরে রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।
You Must be Registered Or Logged in To Comment লগ ইন করুন?