রমজান মাস অজস্র রহমত ও ফজিলতে ভরপুর। মুমিন বান্দারা এ মাসের অপেক্ষায় দিন গোনে। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘হে ইমানদাররা! তোমাদের ওপর রমজানের রোজা ফরজ করা হয়েছে, যেভাবে তোমাদের পূর্ববর্তী উম্মতের ওপর ফরজ করা হয়েছিল। যেন তোমরা মুত্তাকি হতে পারো।’ (সুরা বাকারা, আয়াত ১৮৩)
হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, হজরত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যখন রমজান মাস আসে তখন রহমতের দরজাসমূহ খুলে দেওয়া হয়।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস ১৮৯৮) অন্য হাদিসে হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, হজরত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘রমজান মাস এলে জান্নাতের দরজাসমূহ উন্মুক্ত করে দেওয়া হয় এবং জাহান্নামের দরজাসমূহ বন্ধ করে দেওয়া হয়। আর শয়তানকে শৃঙ্খলাবদ্ধ করা হয়।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস ২৩৮৫)
অত্যধিক বরকত ও ফজিলতপূর্ণ এ মাসকে বরণ করার প্রস্তুতি নেওয়া উচিত সব মুসলমানদের! সাহাবায়ে কেরাম ও সালফে-সালেহিনরা রমজানের আগে শারীরিক, মানসিক ও আর্থিক সব ধরনের প্রস্তুতিই গ্রহণ করতেন। হজরত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রজব মাস থেকেই রমজানের প্রস্তুতি নিতেন আর দোয়া করতে থাকতেন, ‘হে আল্লাহ! রজব ও শাবান মাসে আমাদের বরকত দান করুন এবং (হায়াত বৃদ্ধি করে) আমাদের রমজান পর্যন্ত পৌঁছে দিন।’ (মাজমাউজ জাওয়ায়েদ ২/১৬৫)। আমরা যদি পবিত্র রমজানের পূর্ণ বরকত ও ফজিলত লাভ করতে চাই, তাহলে আমাদের নিজেদের সেভাবে প্রস্তুত করতে হবে। শারীরিক ও মানসিক উভয় প্রস্তুতিই কাম্য। পূর্ণ প্রস্তুতি না থাকলে মাঝপথে আমরা ছিটকে পড়তে পারি।
রমজানকে সামনে রেখে আমরা যে সব প্রস্তুতি গ্রহণ করতে পারি সেগুলো হলো- গুনাহ ছেড়ে দেওয়া। আমার দ্বারা যদি কোনো গুনাহ হতে থাকে তাহলে তা ছেড়ে দিতে হবে এবং একনিষ্ঠভাবে মহান আল্লাহর কাছে তওবা করতে হবে। তওবা অর্থ মহান আল্লাহর দিকে ফিরে যাওয়া। তওবা তিন বিষয়ের নাম। যথা : আগের গুনাহ ছেড়ে দেওয়া, আগের গুনাহের ওপর লজ্জিত হওয়া এবং ভবিষ্যতে সেটার ওপর দৃঢ় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হওয়া। বেশি বেশি তওবা-ইসতেগফার করা। জান্নাত-জাহান্নাম এবং মৃত্যুর কথা বেশি বেশি স্মরণ করা। রোজা, ইফতার ও সাহরির মাসআলা-মাসায়েল ভালোভাবে জেনে নেওয়া, যাতে করে অনিচ্ছাকৃত ভুলের কারণে আমার রোজা নষ্ট হয়ে না যায়। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য-সামগ্রী ও অর্থকরী আগে থেকে যথাসম্ভব মজুদ করে রাখার চেষ্টা করা। যাতে করে রমজানে শরীরের ওপর অতিরিক্ত চাপ না পড়ে। রমজানের আগের মাসগুলোতে বিশেষ করে রজব ও শাবান মাসে কিছু কিছু রোজা রেখে রমজানের জন্য শরীর ও মনকে অভ্যস্ত করা। যে সব আসবাব সামগ্রী দ্বারা গুনাহ ও পাপ কাজ সংঘটিত হওয়ার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে সেগুলো নিজের কাছ থেকে সরিয়ে ফেলা। যে সব কাজ করলে আমলের প্রতি আগ্রহ বাড়ে সেগুলো করা। নিজের পরিবার ও সন্তানাদের রোজা রাখার জন্য প্রস্তুত করা। রমজান ও রোজার ফজিলত সম্পর্কে পরস্পরের মধ্যে বেশি বেশি আলোচনা করা। মহান আল্লাহ আমাদের সবাইকে রমজানের পূর্ণ প্রস্তুতি গ্রহণ করে রোজাগুলো আদায় করার তওফিক দান করুন। আমিন।
You Must be Registered Or Logged in To Comment লগ ইন করুন?