clock ,

মানসিক স্বাস্থ্যসেবায় গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি: সিঙ্গাপুরে MHIN এশিয়া হাব উদ্বোধন

মানসিক স্বাস্থ্যসেবায় গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি: সিঙ্গাপুরে MHIN এশিয়া হাব উদ্বোধন

সিঙ্গাপুরে মানসিক স্বাস্থ্য এখন স্বাস্থ্য উদ্বেগের শীর্ষে, যা ক্যান্সার এবং কোভিড-১৯ এর মতো মহামারীকেও কে ছাড়িয়ে গেছে। তাই মানসিক স্বাস্থ্যসেবার ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতির অংশ হিসেবে, সিংহেলথ ডিউক-এনইউএস গ্লোবাল হেলথ ইনস্টিটিউট, মেন্টাল হেলথ ইনোভেশন নেটওয়ার্ক (এমএইচআইএন) এর সহযোগিতায় আন্তর্জাতিক সিম্পোজিয়ামে আজ তিনদিনব্যাপী (১৭-১৯ ফেব্রুয়ারি) MHIN এশিয়া হাব উদ্বোধন করেছে। এই উদ্যোগটি এশিয়ায় প্রথমবারের মতো আয়োজিত গ্লোবাল মেন্টাল হেলথ ইন এশিয়া সিম্পোজিয়ামের অন্যতম প্রধান আকর্ষণ, যা পুরো অঞ্চলে মানসিক স্বাস্থ্য চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। বিশ্বের ১৫ জনেরও বেশি শীর্ষস্থানীয় স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও আঞ্চলিক নেতারা সিঙ্গাপুরে একত্রিত হয়েছেন। প্রধান অতিথি হিসেবে সিম্পোজিয়ামের উদ্বোধন করেন সিঙ্গাপুরের ইনস্টিটিউট অব মেন্টাল হেলথের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা, ড. ড্যানিয়েল ফুঙ ।

মানসিক স্বাস্থ্যসেবায় গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি

২০১৩ সালে লন্ডন স্কুল অব হাইজিন অ্যান্ড ট্রপিক্যাল মেডিসিন এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত Mental Health Innovation Network (MHIN) ইতোমধ্যে আফ্রিকা, লাতিন আমেরিকা এবং ক্যারিবীয় অঞ্চলে কার্যক্রম চালু করার পর এবার এশিয়ায় সম্প্রসারিত হচ্ছে। বিশ্বের অর্ধেকেরও বেশি জনসংখ্যার আবাসস্থল এই অঞ্চলে স্থানীয় সমস্যার সমাধান নিশ্চিত করার প্রয়োজনীয়তা অনুধাবন করে SingHealth Duke-NUS Global Health Institute-এর অধীনে MHIN Asia Hub চালু করা হয়েছে। এই উদ্যোগটি আঞ্চলিক মানসিক স্বাস্থ্য নীতিগুলোর উন্নয়নে জ্ঞান ও সম্পদের কার্যকর বিনিময় নিশ্চিত করতে কাজ করবে। এই হাব প্রতিষ্ঠার জন্য MoU স্বাক্ষরের পর থেকেই MHIN Asia Hub-এর সদস্য সংখ্যা ইতোমধ্যে ২,০০০-এর বেশি পৌঁছেছে।

MHIN-এর প্রধান গবেষক এবং লন্ডন স্কুল অব হাইজিন অ্যান্ড ট্রপিক্যাল মেডিসিনের সহকারী অধ্যাপক, ড. পেট্রা গ্রনহোলম বলেন, "এশিয়ায় বিশ্বের অর্ধেকেরও বেশি মানুষ বসবাস করলেও, এই অঞ্চলের অনেক দেশেই মানসিক স্বাস্থ্য এখনো অবহেলিত। MHIN Asia Hub আঞ্চলিক সহযোগিতা বৃদ্ধি করবে, যাতে মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা যথাযথ গুরুত্ব পায় এবং স্থানীয় বাস্তবতার সঙ্গে মানানসই সমাধান নিশ্চিত করা যায়।”

সিঙ্গাপুর ও এর বাইরে মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে বাড়ছে উদ্বেগইপসোস গ্লোবাল হেলথ সার্ভিস মনিটর ২০২৩ অনুসারে, সিঙ্গাপুরসহ বিশ্বের ৩১টি দেশে মানসিক স্বাস্থ্য এখন জনগণের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ স্বাস্থ্যগত উদ্বেগের বিষয় হয়ে উঠেছে, যা ক্যান্সার ও কোভিড-১৯-এর মতো রোগগুলোকেও ছাড়িয়ে গেছে। সিঙ্গাপুরে মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে জনসচেতনতা ২০২১ সালে ৪১ শতাংশ থেকে ২০২৩ সালে বেড়ে ৪৬ শতাংশে পৌঁছেছে। এই পরিবর্তনকে গুরুত্ব দিয়ে SingHealth Duke-NUS Global Health Institute মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ে অগ্রগতি ত্বরান্বিত করতে গ্লোবাল মেন্টাল হেলথ প্রোগ্রাম চালু করেছে। এই প্রোগ্রামের মাধ্যমে জনসচেতনতা বৃদ্ধি, মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক ইকোসিস্টেম শক্তিশালীকরণ এবং নীতিনির্ধারণে নেতৃত্ব প্রদান করা হবে।

SingHealth Duke-NUS Global Health Institute-এর পরিচালক অধ্যাপক লন্ডন লুসিয়েন উই বলেন, "MHIN Asia Hub আয়োজনের মাধ্যমে আমরা বৈশ্বিক স্বাস্থ্য সংলাপ ও উদ্ভাবনের অগ্রভাগে থাকার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করছি। আমাদের লক্ষ্য হলো অর্জিত জ্ঞানকে বাস্তব কর্মপরিকল্পনায় রূপান্তর করা, যাতে এশিয়ার বৈচিত্র্যময় সামাজিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক চাহিদার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ কার্যকর নীতিমালা গঠন করা যায়।"

অর্থবহ ও বিস্তৃত একটি সিম্পোজিয়াম

তিন দিনের এই সিম্পোজিয়াম কেবল একটি আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনী অনুষ্ঠান নয়, বরং মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবের মতো জরুরি বিষয়গুলোর গভীর বিশ্লেষণের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্ল্যাটফর্ম। কর্মশালা ও সাইট ভিজিটের মাধ্যমে প্রতিনিধিরা এশিয়ার মানসিক স্বাস্থ্য পরিস্থিতি সম্পর্কে বাস্তব জ্ঞান অর্জনের সুযোগ পাবেন, যা তাদের চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা সম্পর্কে গভীর বোঝাপড়া গড়ে তুলতে সহায়তা করবে।

এই সিম্পোজিয়ামকে সমর্থন করছে বিশ্বব্যাংক, মুসিম মাস, ইনসিয়াড, ব্লুম ওয়েলবিয়িং ফান্ড-সহ ১২টি আন্তর্জাতিক সংস্থা ও পৃষ্ঠপোষক। আন্তর্জাতিক প্রতিনিধিদের জন্য সাইট ভিজিটের আয়োজন করেছে সিঙ্গাপুরভিত্তিক বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, যার মধ্যে রয়েছে Institute of Mental Health (IMH), The Greenhouse, National Gallery, KKH Youth Mental Health Services, MOH Office for Healthcare Transformation, NUS Health and Wellbeing, Resilience Collective এবং Silver Ribbon Singapore।

এশিয়ায় মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক বার্ষিক সম্মেলন হিসেবে প্রতিষ্ঠা

ইভেন্টটি ব্যাপক সাড়া ফেলেছে, যা এর আগাম টিকিট বিক্রি শেষ হওয়া এবং উচ্চমাত্রার অংশগ্রহণের মাধ্যমে প্রতিফলিত হয়েছে। এটি এখন এশিয়াজুড়ে মানসিক স্বাস্থ্য পেশাজীবী ও বিশেষজ্ঞদের জন্য একটি বার্ষিক গুরুত্বপূর্ণ সম্মেলন হিসেবেও প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।

সিম্পোজিয়ামে ২৫টি দেশের ৭০ জনেরও বেশি বক্তা ও ৩০০ প্রতিনিধি অংশ নিয়েছেন, যার মধ্যে ৯২ শতাংশই এশিয়ার। বিশিষ্ট অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে রয়েছেন প্রফেসর বিক্রম প্যাটেল, পল ফার্মার অধ্যাপক ও চেয়ার, হার্ভার্ড মেডিকেল স্কুলের গ্লোবাল হেলথ অ্যান্ড সোশ্যাল মেডিসিন বিভাগ; প্রফেসর সমীর হাসিজা, এশিয়া ক্যাম্পাসের ডিন, ইনসিয়াড। এছাড়াও, ব্রুনাই, কম্বোডিয়া, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, মঙ্গোলিয়া, নিউজিল্যান্ড, ফিলিপাইন এবং ভিয়েতনামের নীতিনির্ধারকরা এই সিম্পোজিয়ামে উপস্থিত রয়েছেন। উল্লেখ বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তনয়া সায়মা ওয়াজেদ যিনি  WHO এর South-East Asia Region এর Regional Director হিসেবে কর্মরত থাকার কারণে বক্তা হিসেবে অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত হয়েছেন।

মানসিক স্বাস্থ্য উন্নয়নে এশিয়ায় নতুন দিগন্ত

সিম্পোজিয়ামে ৬০টিরও বেশি পোস্টার প্রদর্শিত হয়, যা তরুণ নেতৃত্বে মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ে কলঙ্ক দূরীকরণ থেকে শুরু করে সহকর্মীদের দ্বারা পরিচালিত প্রশিক্ষণ কার্যক্রমের মতো বিভিন্ন বিষয়কে কেন্দ্র করে আবর্তিত হয়েছে। ১৬০টিরও বেশি জমাকৃত গবেষণা ও উদ্যোগের মধ্যে থেকে নির্বাচিত এসব পোস্টার মানসিক স্বাস্থ্য উন্নয়নের বিস্তৃত পরিসর তুলে ধরে এবং এশিয়ায় অর্থবহ পরিবর্তনের পথ উন্মুক্ত করে।

নানা উদ্যোগ ও পরিকল্পিত কার্যক্রমের মাধ্যমে MHIN Asia Hub এশিয়ার মানসিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থার পুনর্গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে চলেছে। দীর্ঘমেয়াদি ও কার্যকর সহযোগিতার মাধ্যমে এই উদ্যোগ মানসিক স্বাস্থ্য সংক্রান্ত উদ্ভাবন ও সমাধানগুলো যথাযথভাবে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর কাছে পৌঁছে দেওয়ার জন্য কাজ করবে।



 

You Must be Registered Or Logged in To Comment লগ ইন করুন?

আমাদের অনুসরণ করুন

জনপ্রিয় বিভাগ

সাম্প্রতিক মন্তব্য