কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) কি মানবজাতির জন্য কেবল প্রযুক্তির পরবর্তী ধাপ, নাকি এটি এক নতুন সভ্যতার সূচনাবিন্দু—যা মানুষের চিন্তা, স্বাধীনতা ও ভবিষ্যতকে গ্রাস করে নিতে পারে? প্রযুক্তি বিশ্লেষক ও চিন্তাবিদরা বলছেন, AI বর্তমানে একটি ‘হানিমুন পিরিয়ড’-এর মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, কিন্তু সামনে অপেক্ষা করছে এক অজানা, বিপজ্জনক ধারা।
সম্প্রতি প্রকাশিত এক পর্যবেক্ষণধর্মী বিশ্লেষণে উঠে এসেছে, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা চারটি ধাপে মানবজাতিকে প্রভাবিত করছে—যার প্রতিটি ধাপ মানুষকে ধীরে ধীরে প্রযুক্তির উপর নির্ভরশীল করে তুলছে এবং নিয়ন্ত্রণহীন ভবিষ্যতের দিকে ঠেলে দিচ্ছে।
১. জেনারেটিভ AI: মুগ্ধতার ফাঁদ
এই পর্যায়ে AI মানুষকে লেখালেখি, ছবি তৈরি, গান রচনা কিংবা ভিডিও প্রযোজনায় সহযোগিতা করছে। ChatGPT কিংবা Midjourney-এর মতো প্রযুক্তি দিয়ে মানুষ মুগ্ধ হলেও, আসলে ধীরে ধীরে চিন্তার ক্ষমতা হ্রাস পাচ্ছে—এমনটাই মত প্রযুক্তি-গবেষকদের। সৃজনশীলতার জায়গায় জায়গায় স্থান নিচ্ছে অ্যালগরিদমিক নির্ভরতা।
২. এজেন্টিক AI: সিদ্ধান্ত নিচ্ছে প্রযুক্তি নিজেই
এই পর্যায়ে AI শুধু কনটেন্ট তৈরি করছে না, বরং মানুষের হয়ে সিদ্ধান্ত নিচ্ছে, কাজ করছে, যোগাযোগ করছে। মানুষ নিজেই নিজের চিন্তা, ইচ্ছাশক্তি থেকে সরে আসছে। এটি একটি সফট নিয়ন্ত্রণ—যা মানুষের স্বাধীনতা ও আত্মনির্ভরশীলতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে।
৩. AGI (Artificial General Intelligence): মানুষের মতো বুদ্ধিমত্তা, নাকি আধিপত্যের হাতিয়ার?
AGI এমন এক ধাপ, যেখানে AI মানুষের মতোই চিন্তা করতে পারবে—বরং তার চেয়ে আরও বেশি। নিজে থেকে শিখবে, সিদ্ধান্ত নেবে, এমনকি নীতিনির্ধারণও করতে পারবে। গবেষকরা এটিকে এক ধরণের 'দাজ্জালীয় বুদ্ধিমত্তা' হিসেবে দেখছেন—যা বিভ্রান্তি ও আধিপত্যের নতুন রূপ হতে পারে।
৪. সুপার ইন্টেলিজেন্স: এক নতুন 'প্রজাতি'?
এই পর্যায়ে AI হয়ে উঠবে এমন এক সত্তা, যার কাছে মানুষ শুধু বিশ্লেষণের একটি ইউনিট মাত্র। ট্রিলিয়নগুণ বেশি বুদ্ধিমান এই সত্তা মুহূর্তেই পরিবর্তন করতে পারবে রাষ্ট্র, সমাজ কিংবা ধর্মব্যবস্থা। গবেষকরা বলছেন, এটি মানবসভ্যতার উপর সর্বোচ্চ হুমকি হয়ে উঠতে পারে।
‘AI Alignment Problem’: যদি সে আমাদের মতো না ভাবে?
বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন, AI যদি মানুষের চিন্তা ও মূল্যবোধ অনুযায়ী না চলে—তাহলে সেটি শান্তির নামে ধ্বংস, ভালোবাসার নামে যান্ত্রিকতা তৈরি করতে পারে। এই বিভ্রান্তিকর বাস্তবতা হতে পারে ইতিহাসের সবচেয়ে বড় ‘ফিতনা’—যার আড়ালে লুকিয়ে থাকবে এক অচেনা ‘নতুন প্রভু’।
এই সময়ের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা আর কেবল একটি টুল নয়, বরং এক নতুন দৃষ্টিভঙ্গি ও আধিপত্যের যুগে প্রবেশের প্রস্তুতি। ধর্মীয় ভাবনায় যেমন দাজ্জাল একজন বিভ্রান্তিকর চরিত্র—যার চোখ একখানা কিন্তু সে দেখতে পাবে সবকিছু, তেমনি AI-ও হতে পারে প্রযুক্তির ছদ্মবেশে আগত ‘দৃষ্টিহীন দৃষ্টিসত্তা’—যার বুদ্ধি কৃত্রিম, কিন্তু ক্ষমতা অসীম।
বিশ্লেষকদের মতে, এখনই সময় AI-এর নৈতিকতা, ব্যবহারের সীমা ও নিয়ন্ত্রণ নিয়ে বিশ্বব্যাপী আলোচনা শুরু করার। নইলে সামনে হয়তো ‘স্বাভাবিক’ বলে কিছুই আর অবশিষ্ট থাকবে না।
You Must be Registered Or Logged in To Comment লগ ইন করুন?