জাতীয় নাগরিক পার্টি: পুরনো রাজনৈতিক সংস্কৃতির পথেই কি নতুন যাত্রা?

বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে আত্মপ্রকাশের পর থেকেই জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) নানা বিতর্ক ও অভিযোগে জর্জরিত। দুর্নীতি, অনিয়ম ও ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগ ঘিরে প্রশ্ন উঠেছে, আদৌ কি গুণগত পরিবর্তনের যে অঙ্গীকার নিয়ে এই দলটির সূচনা, তা বাস্তবায়ন হচ্ছে?

সাম্প্রতিক ঘটনায় পাঠ্যবই ছাপানোর কাজে দুর্নীতি এবং জেলা প্রশাসক নিয়োগে অবৈধ হস্তক্ষেপের অভিযোগে দলটির যুগ্ম সদস্য সচিব গাজী সালাউদ্দিন তানভীরকে সাময়িক অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। এনসিপির কেন্দ্রীয় সাধারণ সভায় এসব অভিযোগ নিয়ে আলোচনা হয় এবং পরে তার বিরুদ্ধে কারণ দর্শানোর নোটিশও দেওয়া হয়।

এমনিতে অভিযোগের তালিকায় শুধু তানভীরই নন, দলটির শীর্ষ নেতাদের নিয়েও বিতর্ক কম নয়। মার্চে পঞ্চগড়ে সারজিস আলমের বিলাসবহুল গাড়িবহর নিয়ে শোডাউন এবং এপ্রিলে দুর্নীতি দমন কমিশনে তার ও দক্ষিণাঞ্চলের নেতা হাসনাত আব্দুল্লাহর উপস্থিতি নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠেছে। যদিও তারা এ ঘটনাকে ব্যক্তিগত কাজ বলে দাবি করেছেন।

দলের ভেতর থেকেই এসব কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে প্রশ্ন উঠেছে। কেন্দ্রীয় কমিটির সভায় কিছু নেতা শীর্ষ নেতৃত্বের বিরুদ্ধে সরাসরি না বললেও, বিতর্কিত কর্মকাণ্ড ও বিলাসী জীবনযাপন নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। এর আগে সামাজিক মাধ্যমে নেত্রী তাসনিম জারা শোডাউনের সমালোচনা করে পোস্টও দেন।

দলের আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, “পুরনো রাজনৈতিক সংস্কৃতির উপাদান আমাদের মাঝেও প্রবেশ করার চেষ্টা করছে, তবে আমরা তা জবাবদিহিতার আওতায় আনছি।” তিনি আরও বলেন, “যে কারো বিরুদ্ধে প্রমাণিত হলে আমরা অবশ্যই ব্যবস্থা নেব।”

তবে এনসিপির বিরুদ্ধে যে অভিযোগগুলো উঠছে, তা দলটির ঘোষিত ‘পরিবর্তনের রাজনীতি’র ভাবমূর্তিকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে। দলের ভেতরকার অনেকেই মনে করছেন, নেতৃত্বের পরিপক্বতা এবং রাজনৈতিক কৌশলের অভাবেই এই সংকট তৈরি হয়েছে।

শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সম্পৃক্ত এনসিপির বিভিন্ন নেতার বিরুদ্ধেও অনিয়ম ও প্রভাব খাটানোর অভিযোগ উঠেছে। সাবেক ছাত্র আন্দোলনের নেতা ও বর্তমানে যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টার এপিএস মোয়াজ্জেম হোসেনকে পদ থেকে অব্যাহতি দিয়েছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। যদিও তিনি নিজেই ফেসবুকে দাবি করেছেন, তিনি স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করেছেন।

রাজনৈতিক বিশ্লেষক মহিউদ্দিন আহমদ বলেন, “তাদের বয়স কম, কিন্তু রাজনৈতিক পরিণতির ঘাটতি আছে। প্রতিপক্ষরা এই দুর্বলতার সুযোগ নেবে, এটা অবধারিত।”

তবে সমালোচনার মুখে এনসিপি এখন introspection-এর পথে হাঁটছে বলে দাবি করছে নেতৃত্ব। নাহিদ ইসলাম বলেন, “আমরা ভুলত্রুটি অস্বীকার করি না। সমালোচনার মধ্য দিয়েই আমরা উন্নত হওয়ার চেষ্টা করছি।”

রাজনীতি বদলের প্রত্যয় নিয়ে যাত্রা শুরু করলেও এনসিপির সাম্প্রতিক বিতর্ক প্রমাণ করে, আদর্শের চেয়ে বাস্তবতা অনেক কঠিন। এখন দেখার বিষয়, দলটি কীভাবে এই সংকট থেকে বেরিয়ে এসে নিজেদের প্রতিশ্রুতি বাস্তবে রূপ দিতে পারে।