দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) কর্তৃক তাঁর নামে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির পর বাংলাদেশি কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে পাল্টা আক্রমণ করেছেন ব্রিটিশ পার্লামেন্ট সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী টিউলিপ সিদ্দিক। বিবিসিকে দেওয়া এক প্রতিক্রিয়ায় তিনি এ অভিযোগ তোলেন যে, তাঁকে রাজনৈতিকভাবে হয়রানি করতে ‘মিডিয়া ট্রায়াল’ ও ‘চরিত্রহননের অপচেষ্টা’ চালানো হচ্ছে।
টিউলিপ সিদ্দিক, যিনি যুক্তরাজ্যের হ্যাম্পস্টেড ও হাইগেট আসনের এমপি এবং বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাগ্নি, বলেন—এই অভিযোগ সম্পূর্ণ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং তাঁর বিরুদ্ধে কোনো সুনির্দিষ্ট অপরাধের প্রমাণ নেই।
সাম্প্রতিক গ্রেপ্তারি পরোয়ানার প্রতিক্রিয়ায় টিউলিপ বলেন, “আমার আইনজীবীরা কয়েক মাস ধরে বাংলাদেশি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন, কিন্তু কোনো উত্তর মেলেনি। আমি নিশ্চিত আপনারা বুঝবেন—এই অপপ্রচারকে আমি কোনো গুরুত্ব দিতে পারি না।”
তিনি আরও বলেন, “এই পুরো বিষয়টি একটি সুপরিকল্পিত রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র। আমাকে হয়রানি করতে, আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আমার ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করতে এই আয়োজন।”
দুদক বলছে, তারা টিউলিপসহ শেখ হাসিনার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের অবকাঠামো খাত থেকে প্রায় ৫ বিলিয়ন ডলার আত্মসাতের অভিযোগ খতিয়ে দেখছে। দুদকের দাবি, টিউলিপ ২০১৩ সালে রাশিয়ার সঙ্গে বাংলাদেশের পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্পে জড়িত ছিলেন এবং সেখানে ব্যয় ‘অস্বাভাবিক’ ছিল।
এই অভিযোগের ভিত্তি শেখ হাসিনার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ ববি হাজ্জাজের করা একগুচ্ছ অভিযোগ। ববি অভিযোগ করেছেন—চুক্তিটি ‘অস্বচ্ছভাবে পরিচালিত’ হয়েছিল।
টিউলিপ সিদ্দিক বর্তমানে যুক্তরাজ্যে অবস্থান করছেন এবং বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে তাঁর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা থাকলেও তাঁকে দেশে ফেরত পাঠানো সহজ নয়। যুক্তরাজ্য বাংলাদেশকে ২বি শ্রেণির প্রত্যর্পণ দেশ হিসেবে বিবেচনা করে, যার মানে হলো—বাংলাদেশকে অবশ্যই পরিষ্কার ও গ্রহণযোগ্য প্রমাণ উপস্থাপন করতে হবে, যাতে ব্রিটিশ আদালত তাঁকে প্রত্যর্পণ অনুমোদন করে।
টিউলিপের আইনজীবী প্রতিষ্ঠান স্টিফেনসন হারউড এক বিবৃতিতে জানান, “এই অভিযোগগুলো ভিত্তিহীন। আমাদের পক্ষ থেকে যথাযথ আইনি ব্যাখ্যা ও জবাব দেওয়া হয়েছে।”
এদিকে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর মুখপাত্র জানান, এটি একটি ‘ব্যক্তিগত মামলা’ হওয়ায় সরকার কোনো মন্তব্য করবে না।
এ বছরের শুরুতে টিউলিপ ব্রিটিশ ট্রেজারির অর্থমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করেন। এর আগে তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ তদন্ত করেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী রিশি সুনাকের নৈতিক উপদেষ্টা স্যার লরি ম্যাগনাস। তদন্তে ‘কোনো অসঙ্গতি বা অপরাধের প্রমাণ মেলেনি’, জানিয়ে টিউলিপকে ক্লিনচিট দেওয়া হয়।
দুদক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবদুল মোমেন বলেন, “এই অভিযোগ কোনোভাবেই ভিত্তিহীন নয়। আমরা প্রমাণের ভিত্তিতে তদন্ত করছি।” তিনি আরও বলেন, “টিউলিপ সিদ্দিক চাইলে আইনি সহায়তা নিয়ে বাংলাদেশের আদালতে আত্মপক্ষ সমর্থন করতে পারেন। আমরা তা স্বাগত জানাব।”
এই ঘটনায় আন্তর্জাতিক পর্যায়ে রাজনীতি, বিচার ও কূটনৈতিক সম্পর্ক—তিনটি ক্ষেত্রেই উত্তেজনা তৈরি হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যুক্তরাজ্যের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতেও এই ঘটনা প্রভাব ফেলতে পারে, কারণ এটি শুধুই একটি আইনি লড়াই নয়, বরং আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক প্রতিপক্ষদের মধ্যে একধরনের ‘পাওয়ার ব্যাটল’ বলেই দেখা হচ্ছে।
You Must be Registered Or Logged in To Comment লগ ইন করুন?