ছাত্র-জনতার আন্দোলনের ফলে স্বৈরাচার সরকারের পতনের পর অন্তর্বর্তী সরকার নতুন করে পাঠ্যপুস্তক সংস্কার করেছে। স্বৈরশাসক শেখ হাসিনার চালু করা কারিকুলাম বাতিল করে ২০১২ সালের কারিকুলাম পুনরায় কার্যকর করা হয়েছে। নতুন পাঠ্যবইগুলোতে ছাত্র-জনতার জুলাই আন্দোলনের নানা ঘটনা, ছবি, কার্টুন এবং অন্যান্য বিষয় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
নতুন বইয়ে উল্লেখ করা হয়েছে, বাড্ডায় হেলিকপ্টার থেকে আন্দোলনকারীদের ওপর গুলিবর্ষণের ঘটনা। এটি শিক্ষার্থীদের সামনে কার্টুনের মাধ্যমে উপস্থাপন করা হয়েছে। অতিরিক্ত শেখ মুজিব বন্দনা পাঠ্যবই থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। নবম-দশম শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বইয়ে বলা হয়েছে, ২৬ মার্চ মেজর জিয়াউর রহমান চট্টগ্রামের কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে স্বাধীনতার ঘোষণা দেন এবং ২৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পক্ষে পুনরায় স্বাধীনতার ঘোষণা দেন।
নতুন সংযোজনসমূহ
পঞ্চম শ্রেণির বাংলা বই: আমরা তোমাদের ভুলব না অধ্যায়ে শহীদদের তালিকায় শহীদ মীর নিসার আলী তিতুমীর, প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদারসহ ২০২৪ সালের জুলাই আন্দোলনে নিহত আবু সাঈদ ও মীর মাহফুজুর রহমান মুগ্ধের নাম উল্লেখ করা হয়েছে।
নবম-দশম শ্রেণির সাহিত্য বই: আমাদের নতুন গৌরবগাথা অধ্যায়ে স্বৈরাচারী সরকার প্রধান শেখ হাসিনার গণভবন ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার ঘটনা তুলে ধরা হয়েছে।
ষষ্ঠ শ্রেণির চারুপাঠ বই: কার্টুন, ব্যঙ্গচিত্র ও পোস্টারের ভাষা শিরোনামে লেখা যুক্ত করা হয়েছে। এতে কার্টুনের মাধ্যমে হেলিকপ্টার থেকে গুলিবর্ষণের চিত্র তুলে ধরা হয়েছে।
তৃতীয় শ্রেণির বিশ্বপরিচয় বই: আমাদের চার নেতা অধ্যায়ে শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হক, মওলানা ভাসানী, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের তথ্য অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। তবে ‘আমাদের জাতির পিতা’ অধ্যায়টি বাদ দেওয়া হয়েছে।
কবিতা ও সাহিত্যে আন্দোলনের প্রভাব
সপ্তম শ্রেণির বাংলা বইয়ে সিঁথি নামের একটি কবিতা সংযোজন করা হয়েছে, যেখানে রংপুরে ছাত্রনেতা আবু সাঈদের শাহাদাত এবং আন্দোলনের দৃশ্যপট তুলে ধরা হয়েছে।
এনসিটিবি চেয়ারম্যানের বক্তব্য
জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক এ কে এম রিয়াজুল হাসান জানিয়েছেন, “২০২৪ সালের গণ অভ্যুত্থান ছিল একটি বড় ঘটনা। কোমলমতি শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ এ আন্দোলনকে নতুন মাত্রা দিয়েছে। নতুন প্রজন্মকে অনুপ্রাণিত করতে আমরা এই ঘটনা পাঠ্যবইয়ে সংযুক্ত করেছি।”
নতুন পাঠ্যবইয়ে রাজনৈতিক অতিকথন ও বন্দনা বাদ দেওয়ার কথাও জানান তিনি।
এবারের পাঠ্যবইগুলোতে বিভিন্ন সামাজিক-রাজনৈতিক আন্দোলনের পাশাপাশি স্বৈরাচারী শাসন এবং তা থেকে মুক্তির পথ তুলে ধরা হয়েছে, যা নতুন প্রজন্মের জন্য শিক্ষণীয়।
You Must be Registered Or Logged in To Comment লগ ইন করুন?