আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় নেতাদের একাংশ বর্তমানে দেশের বাইরে অবস্থান করছেন, এমন খবর ইতোমধ্যে নানা মহলে চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছে। এসব নেতার অনেকেই রয়েছেন ভারত, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, সিঙ্গাপুর ও দুবাইয়ের অভিজাত এলাকায়। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এসব ‘গোপন ঠিকানা’ ফাঁস হওয়া দেশীয় রাজনীতিতে নতুন মাত্রা যোগ করেছে, যা ভবিষ্যতের রাজনৈতিক সমীকরণেও গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলতে পারে।
গত কয়েক মাসে বাংলাদেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা, দুর্নীতি বিরোধী অভিযান, এবং বিচার বিভাগীয় প্রক্রিয়া তীব্রতর হওয়ায় ক্ষমতাসীন দলের একাধিক নেতা দেশত্যাগ করেন। অনেকে চিকিৎসা, ব্যক্তিগত কাজ বা পারিবারিক কারণে বিদেশে থাকার কথা বললেও, প্রবাসে তাদের বিলাসবহুল আবাসন ও ‘নিরাপত্তা ঘেরাটোপে’ জীবনযাপন এসব দাবির পেছনে সন্দেহের জন্ম দিয়েছে।
বিশ্লেষকদের ভাষ্য, এটি কেবল ‘রাজনৈতিক নির্বাসন’ নয়—বরং একটি সাংগঠনিক কৌশলও হতে পারে, যেখানে শীর্ষ নেতারা আন্তর্জাতিকভাবে নিজেদের পুনর্বিন্যাসের চেষ্টা করছেন।
কে কোথায় আছেন: একটি বিস্তারিত তালিকা
কলকাতা, ভারত
কলকাতার বিভিন্ন অভিজাত আবাসিক এলাকায় বসবাস করছেন বেশ কয়েকজন শীর্ষ নেতা:
এলাকা |
অবস্থানরত নেতা |
রাজারহাট নিউটাউন (DLF প্লাজা) |
ওবায়দুল কাদের, নিজাম হাজারী, ছোট মনির |
রোজডেল গার্ডেন |
আসাদুজ্জামান খান কামাল |
টাটা অ্যাভিনিডা |
আলাউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী নাসিম |
সল্টলেক |
জাহাঙ্গীর কবীর নানক |
তপসিয়া |
বাহাউদ্দিন নাছিম |
যুক্তরাজ্য (লন্ডন ও আশেপাশের অঞ্চল)
এলাকা |
অবস্থানরত নেতা |
গ্যাংসহিল, অ্যাসেক্স, নিউবেরি পার্ক |
আবদুর রহমান, খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, শ ম রেজাউল করিম |
সেন্ট্রাল লন্ডন |
ফজলে নূর তাপস |
অজ্ঞাত এলাকা |
হাছান মাহমুদ (ছেলের সঙ্গে ঈদ উদযাপন) |
লন্ডন ও আশপাশ |
সাইফুজ্জামান চৌধুরী (৬২০ বাড়ির মালিক!) |
যুক্তরাষ্ট্র (নিউইয়র্ক)
এলাকা |
অবস্থানরত নেতা |
জ্যামাইকা, নিউইয়র্ক |
শামীম ওসমান |
নিউইয়র্ক ও অন্যান্য |
এনামুল হক শামীম, বিপ্লব বড়ুয়া, সানজিদা খানম, আমিনুল ইসলাম |
কানাডা (টরন্টো)
এলাকা |
অবস্থানরত নেতা |
টরন্টো শহর |
শেখ ফজলে শামস পরশ ও স্ত্রী |
অন্যান্য জায়গা
দেশ |
নেতা |
সিঙ্গাপুর |
আ জ ম নাছির উদ্দীন |
দুবাই |
খন্দকার মোশাররফ হোসেন |
দিল্লি, ভারত |
শেখ হাসিনা, শেখ রেহানা, মাহবুব উল আলম হানিফ |
বিদেশে
থাকা নেতাদের মধ্যে অনেকের বিরুদ্ধে রয়েছে অর্থপাচার, দুর্নীতি, এবং রাষ্ট্রীয় সম্পদ
আত্মসাতের অভিযোগ।
বিশেষ করে সাইফুজ্জামান চৌধুরীর
নামে ৪৮ মিলিয়ন ডলারে
৬২০টি বাড়ির মালিকানা নিয়ে আলোচনার ঝড়
উঠেছে।
অর্থনীতি বিশ্লেষকরা বলছেন, এ ধরনের সম্পদ
সংগ্রহের উৎস ও কর
বিবরণী তদন্তের আওতায় আনতে হবে।
প্রবাসে অবস্থানকারী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে দুর্নীতিবিরোধী কমিশন (দুদক) বা আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা (Interpol)–এর মাধ্যমে তদন্ত ও প্রত্যর্পণ চাওয়া যেতে পারে বলেও জানিয়েছেন আইন বিশেষজ্ঞরা।
গোপন
সূত্রে জানা গেছে, ভারতের
RAW, যুক্তরাজ্যের MI5,
এবং যুক্তরাষ্ট্রের FBI সহ বেশ কয়েকটি
আন্তর্জাতিক সংস্থা এই নেতাদের গতিবিধি
নজরদারিতে রেখেছে।
বিশেষ করে দিল্লিতে শেখ
হাসিনা ও শেখ রেহানার
অবস্থান একটি আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক
আলোচনার বিষয় হয়ে উঠেছে।
বিএনপি ও বিরোধী দলগুলোর দাবি, এসব নেতা মূলত “দুর্নীতির দায় এড়াতে” পালিয়ে গেছেন। অন্যদিকে আওয়ামী লীগের একাংশ বলছে, এটি রাজনৈতিক পুনর্গঠনের সময়সাপেক্ষ কৌশল।
সাবেক পররাষ্ট্র সচিব এক বিবৃতিতে বলেন: “এতসংখ্যক প্রভাবশালী নেতা হঠাৎ করে বিদেশে চলে যাওয়া নিছক ব্যক্তিগত বিষয় নয়—এতে সরকারের ভবিষ্যৎ রূপরেখা নিয়ে প্রশ্ন উঠবে।”
You Must be Registered Or Logged in To Comment লগ ইন করুন?