clock ,

কম খরচে ভ্রমণ

কম খরচে ভ্রমণ

জীবনের অন্যান্য অনেক কিছুর মতোই ভ্রমণেরও রয়েছে সাধ সাধ্যের দ্বন্দ্ব। একইসঙ্গে বিশ্বব্যাপী পর্যটন শিল্পের বাড়-বাড়ন্ত খরচ বাড়াচ্ছে ভ্রমণের। তবে কম খরচে বেশি জায়গায় ঘুরতে চাইলে হতে হবে একটু কৌশলী।

দলীয়ভাবে বেড়ানোর প্ল্যান

যেকোন জায়গায় বেড়াতে গেলে চেষ্টা করুন দল বেঁধে যেতে। এতে যেমন খরচ কমে তেমনি আনন্দটাও বেশি হয়। সেই সাথে একটা বাড়তি নিরাপত্তা পাওয়া যায়।

অফ-পিক সিজনে ভ্রমণ করুন

দেশ হোক বা বিদেশ, আপনি যে জায়গাতেই তার সিজন বা পিক সময়ের মধ্যে যান না কেন খরচ অন্য সময়ের থেকে দুই-তিন গুন বেশি হবে। যেকোন লম্বা সরকারি ছুটি, কোন উৎসবে, বছরের শেষ নতুন বছরের শুরুতে একই হোটেলের রুমের ভাড়া গিয়ে ঠেকে ২০০০-৪০০০ টাকায়। সময় পর্যটন কেন্দ্রগুলোতেও প্রচন্ড ভীড় থাকে এবং টিকেট অন্যান্য জিনিসের দামও বেশি থাকে। তাই অফ পিক সিজনে যখন পর্যটকদের চাপ কম থাকে তখন ব্যক্তিগত ছুটি কে কাজে লাগিয়ে ঘুরতে গেলে খরচ কম পরে।

সব নিজে করবার চেষ্টা করুন

আশে পাশে এখন অনেক ট্রাভেল এজেন্সি আছে যারা ঝামেলা কমাবার জন্য আপনাকে বাস, ট্রেনপ্লেনের টিকিট কেটে দেওয়া থেকে শুরু করে হোটেল বুকিং, খাবার দাবার, অভ্যন্তরীণ যাতায়াত সবকিছুর ব্যবস্থা করে দেয়। তবে মনে রাখতে হবে এই এজেন্সিগুলো সমস্ত সেবা দেবার জন্য সব হোটেল, পরিবহন কোম্পানী থেকে কমিশন পেয়ে থাকে। তাই তারা আপনার বাজেটের থেকে নিজেদের সুবিধাটাই বেশি দেখবে। এক্ষেত্রে খরচ অনেক কমে যায় যদি সব কাজ আপনি নিজে করেন। নিজে খোঁজ নিয়ে দরদাম করলে সব ক্ষেত্রেই কিছু কিছু খরচ কমে যায়।

পাবলিক ট্রান্সপোর্ট ব্যবহার করুন

ভ্রমণের বড় খরচ গুলোর একটি হচ্ছে যাতায়াত খরচ। এক্ষেত্রে পাবলিক ট্রান্সপোর্ট ব্যবহার করা কম খরচে ভ্রমণের সবচেয়ে কার্যকর উপায়। লোকাল বাস, ট্রেন, বা রিকশা সাধারণত ট্যাক্সি বা প্রাইভেট কারের তুলনায় অনেক সস্তা হয়। এছাড়া যেখানেই ঘুরতে যান সেখানের স্থানীয় ভাবে অল্প দূরত্বে লোকাল ভাবে চলাচল করার জন্যে অটোরিক্সা, ইজিবাইক, সিএনজি সহ অনেক কিছুই পাবেন। বিদেশের কিছু গন্তব্যে ট্যুরিস্টদের জন্য বিশেষ ট্রান্সপোর্ট পাস পাওয়া যায়। যেমন, এক দিনের আনলিমিটেড বাস বা ট্রেন পাস, যা ব্যয়বহুল পরিবহনের বিকল্প হতে পারে।

প্রি প্ল্যান এবং প্রি বুকিং

কোথাও ঘুরতে যাবার আগে সেই জায়গা সম্পর্কে পড়াশোনা এবং নিজেদের ঘুরবার একটা প্ল্যান বানানোটা খুব জরুরী। এতে টাকা খরচ হবার আগেই খরচের সম্পর্কে একটা ভাল ধারণা যেমন থাকে তেমনি অহেতুক ব্যয় কম হয়। ইন্টারনেটের কল্যাণে এখন আগে থেকে যেকোন জায়গা সম্পর্কে জানাটা যেমন খুবই সহজ তেমনি নিজের অনলাইন ব্যাংকিং সুবিধায় একা একাই হোটেল, টিকেট সবকিছু বুকিং দিয়ে ফেলা যায়।   

ট্রিপএডভাইসর, ট্রিভাগোডটকম, মাইট্রিপ, ইস্ক্যানার এমন আরো অসংখ্য ওয়েবসাইট আছে যেখানে হোটেল এবং যানবাহন কোম্পানি গুলো নানা রকম ছাড় বছর জুড়ে দিয়ে থাকে প্রি বুকিং এর ক্ষেত্রে। আগে আগে এসমস্ত যায়গা থেকে বুকিং করে রাখলে টাকা কম খরচ হবার পাশে পাশে বাড়তি সুবিধাও পাওয়া সম্ভব হয়।

শুকনো খাবার পানি সাথে রাখুন

যেকোন জায়গায় বিশেষ করে যদি দুর্গম কোন স্থানে বেড়াতে যান অবশ্যই সাথে কিছু শুকনো খাবার যেমন মুড়ি, চিপ্স, পানীয় যেমন পানি, কোল্ড ড্রিংক, ফলের রস আগে থেকে কিনে নিজের সাথে নিয়ে যাবেন। এগুলো বিপদের সময় কাজে যেমন লাগে তেমনি স্থানীয় দোকান এর লাগামছাড়া দাম থেকে আপনার পকেট কে বাঁচায়। ট্রেকিং এর স্থানগুলোতে বা পাহাড় এর উপরে এমন জায়গাগুলোতে দেখা যায় স্থানীয় লোকজন কিছু দোকান দিয়ে থাকে যেখানে এক বোতল পানি ৩০ থেকে ৪০ টাকায় এবং এক ক্যান কোক ১০০ টাকায় বিক্রি করতে দেখা যায়। এক্ষেত্রে নিজেদের খাবার নিজেদের সাথে রাখলে খরচ অনেকটা কমে যায়।

এক্সপ্লোর করবার অভ্যাস গড়ে তুলুন

একটা যায়গায় গেলে হুট করে যেকোনো দোকানে ঢুকে জিনিস না কিনে বা খাবারের দোকানে ঢুকে খাবারের অর্ডার  না দিয়ে এলাকাটা ঘুরে ঘুরে দেখুন, যাচাই বাছাই করুন। এতে যায়গা এক্সপ্লোরিং এর পাশাপাশি কম খরচে জিনিসপত্র পাবার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। স্থানীয়দের সাহে মিশবার চেষ্টা করুন, তাদের কাছ থেকেই কম খরচে কিভাবে কি করতে পারবেন তার অনেক তথ্য পেয়ে যাবেন।

স্ট্রিট লোকাল ফুড

বেড়াতে গিয়ে স্ট্রীট ফুড বা লোকাল ফুডের দোকান এক্সপ্লোর করলে কম খরচে যেমন খাবারের দিকটা সামলানো সম্ভব তেমনি বেড়াতে যাবার স্থানের জীবনযাত্রা ঐতিহ্যের একটা ধারণা পাওয়া সম্ভব। ভালো রেস্টুরেন্টে না খেয়ে স্থানীয়ভাবে জনপ্রিয় রেস্টুরেন্টে খেয়ে দেখুন।

কমিউনিটি ট্যুরিজম এর সেবা নেওয়া

স্থানীয় লোকজন যে সেবা দিয়ে থাকে তাকে কমিউনিটি ট্যুরিজম বলে। বিদেশে এবং কিছু কিছু জায়গায় দেশেও মানুষজন টুরিস্টদেরকে নিজেদের বাড়িতে থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা অল্প কিছু টাকার বিনিময়ে করে দেয়। এক্ষেত্রে হোটেল এর তুলনায় টাকা প্রায় অর্ধেক বা তারও কম লাগে। কিছু কিছু সময় এসমস্ত জায়গায় নিজে রান্না করে খাবার সুব্যবস্থা থাকে।

সরকারি সুযোগ সুবিধা নেয়া

দেশে প্রায় প্রতিটি জায়গাতেই সরকারি গেস্টহাউস বা বাংলো আছে। সমস্ত গেস্টহাউজ বা বাংলোগুলো সময় বিশেষে ভাড়া পাওয়া যায় তবে সেক্ষেত্রে আগে থেকে যথাযথ কর্তৃপক্ষ থেকে অনুমতি নিয়ে রাখতে হয়। কোন কোন ক্ষেত্রে সরকারি রেফারেন্সও দরকার হয় কিন্তু এসমস্ত কিছু আগে থেকে ম্যানেজ করে বুকিং দিতে পারলে থাকবার খরচ অর্ধেকে নেমে আসে।

দরদাম করুন অতিরিক্ত কেনাকাটা কমান

অনেকেই আছে যারা বেড়াতে গিয়ে দরদাম করতে চান না অথচ খাবার, হোটেল, যাতায়াত থেকে শুরু করে পর্যটন এর জায়গা গুলোতে দরদাম করলে অন্যদের তুলনায় আপনি সবকিছুতেই অল্প অল্প করে তুলনামূলক কম খরচে সেবা পাবেন।

ভ্রমণের আগে অপ্রয়োজনীয় কেনাকাটা আপনার খরচ বাড়িয়ে দেয়। কোথাও ঘুরতে গেলে অনেক সময় স্থানীয় দোকানদাররা ট্যুরিস্টদের বেশি দাম বলেন। দরদাম করে জিনিস কিনুন বা স্থানীয়দের কাছ থেকে দাম সম্পর্কে আগে ধারণা নিন। এছাড়া কেনাকাটার জন্য নির্দিষ্ট বাজেট ঠিক করে নিন এবং তা অতিক্রম না করার চেষ্টা করুন।

ব্যাকপ্যাক ট্রাভেলিং

পরিবার নিয়ে কোথাও ঘুরতে না গেলে সেক্ষেত্রে চেষ্টা করুন ব্যাকপ্যাক ট্রাভেল করতে। ব্যাকপ্যাকারদের জন্য বিদেশে আলাদা হোস্টেল থাকে যেখানে হোটেলের তুলনায় এক তৃতীয়াংশ কম খরচে থাকবার সেবা পাওয়া যায়। ব্যাকপ্যাক ট্রাভেল বলতে বুঝায় জিনিসপত্র কম নিয়ে শুধু মাত্র একটি ব্যাকপ্যাক নিয়ে ট্রাভেল করা।

রাতে ভ্রমণ করুন

কোথাও যদি যেতে বা ফিরে আসার জন্যে -১০ ঘন্টার ভ্রমণ করার প্রয়োজন হয় সেক্ষেত্রে চেষ্টা করুন রাতে ভ্রমণ করতে। বাসে/ট্রেনে রাতে ঘুমিয়ে কাটিয়ে দিতে পারবেন। এক্ষেত্রে পরবর্তী ভ্রমণের জন্য একটা দিন বেশি পাওয়া যায় এবং একইসাথে এক রাতের হোটেল ভাড়া বেঁচে যায়।

ক্যাম্পিং

দেশের ভেতরে বা বাইরে যেখানেই ঘুরতে যান না কেন যদি দেখেন সেখানে ক্যাম্পিং এর উপযুক্ত যায়গা আছে তাহলে এক-দুইদিন ক্যাম্পিং করতে পারেন। এতে খরচ অনেকটা কমে যায় সাথে ভিন্নরকমের একটা অভিজ্ঞতা হবে আপনার। দেশের অনেক জনপ্রিয় ভ্রমণ স্থান গুলোতে ক্যাম্পিং করে থাকার সুযোগ রয়েছে।

রুম সার্ভিস লন্ড্রি সার্ভিস

হোটেলে থাকার সময় যত সম্ভব রুম সার্ভিসকে না বলুন। রুম সার্ভিস যেকোনো কিছু অর্ডার করলে বিল এবং বকশিশ মিলিয়ে সাধারণ দামের থেকে বেশি খরচ পরে। তাই রুম সার্ভিস ব্যবহার না করে নিজে থেকে কোন দোকানে বা হোটেলের ডাইনিং খেলে খরচ কিছুটা বাঁচবে। রুম সার্ভিস এর মতো হোটেলের লন্ড্রি সার্ভিস প্রয়োজনের থেকে বেশি চার্জ করে থাকে। তাই সাথে লন্ড্রি পাউডারের মিনি প্যাকেট রাখা ভাল। নিতান্তই কাপড় ধোবার প্রয়োজন হলে যাতে নিজে
কাজটা  করে নেওয়া যায়।

উপরের নিয়মগুলো অনুসরণ করা খুব কঠিন কোন কাজ নয়। অথচ এই কয়টি নিয়ম মেনে যে টাকাটা বাঁচবে দেখা যায় তা দিয়ে কাছে পিঠে আরেকটা ছোটখাটো ট্যুর দেওয়া সম্ভব।

 

 

You Must be Registered Or Logged in To Comment লগ ইন করুন?

আমাদের অনুসরণ করুন

জনপ্রিয় বিভাগ

সাম্প্রতিক মন্তব্য