বিশ্বব্যাপী মুক্ত বাণিজ্যের অন্যতম প্রচারক হিসেবে পরিচিত যুক্তরাষ্ট্র এখন আমদানিতে শুল্কের আগ্রাসী ব্যবহারের মাধ্যমে তার দীর্ঘদিনের নীতি থেকে সরে আসছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাম্প্রতিক নীতিগুলো বিশ্ব বাণিজ্যের প্রচলিত নিয়মকে উল্টে দিচ্ছে এবং যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র ও প্রতিপক্ষ উভয়ের সঙ্গেই বাণিজ্যিক দ্বন্দ্ব বাড়াচ্ছে।
ট্রাম্পের ঘোষিত ‘রেসিপ্রোকাল ট্যারিফ’ বা পারস্পরিক শুল্ক নীতির মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র বিদেশী পণ্যের ওপর সমপরিমাণ শুল্ক আরোপ করতে চায়, যা অন্য দেশ মার্কিন পণ্যের ওপর ধার্য করে। ট্রাম্প স্পষ্ট করে বলেছেন, "যদি তারা ২৫ শতাংশ শুল্ক নেয়, আমরাও ২৫ শতাংশ নেব। যদি তারা ১০ শতাংশ নেয়, আমরাও ১০ শতাংশ নেব।"
বিশ্লেষকদের মতে, এই নীতি বিশ্ব বাণিজ্যে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে পারে। বাণিজ্য আইন বিশেষজ্ঞ রিচার্ড মোজিকার মতে, "এটি দীর্ঘদিন ধরে চলা বাণিজ্য ব্যবস্থাকে বিঘ্নিত করবে এবং নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি করবে।"
ট্রাম্প তার প্রথম মেয়াদেই আমদানিতে শুল্ক আরোপের মাধ্যমে বাণিজ্য নীতি কঠোর করেছিলেন। দ্বিতীয় মেয়াদের শুরুতেই চীন থেকে আমদানি করা পণ্যের ওপর ১০ শতাংশ শুল্ক এবং বিদেশী ইস্পাত ও অ্যালুমিনিয়ামের ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছেন।
তবে অর্থনীতিবিদরা এ নীতির কার্যকারিতা নিয়ে সন্দিহান। কারণ, অতিরিক্ত শুল্ক শেষ পর্যন্ত ভোক্তাদের জন্য ব্যয় বাড়িয়ে দেয়। যদিও কিছু বিশেষজ্ঞ মনে করেন, পারস্পরিক শুল্কের হুমকি অন্য দেশগুলোকে আলোচনায় আনতে পারে এবং আমদানি শুল্ক কমানোর জন্য চাপ সৃষ্টি করতে পারে।
ঐতিহাসিকভাবে, যুক্তরাষ্ট্র দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে মুক্ত বাণিজ্যের প্রবক্তা ছিল। কিন্তু ট্রাম্প প্রশাসন দাবি করছে, পূর্বের নীতি মার্কিন কারখানা ও উৎপাদকদের ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। ডেমোক্র্যাট প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনও ট্রাম্পের অনেক শুল্ক নীতি বহাল রেখেছেন।
তবে উচ্চ শুল্ক আরোপের পরও যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য ঘাটতি কমেনি। বরং গত বছর তা ৯১ হাজার ৮০০ কোটি ডলারে পৌঁছেছে, যা দেশটির ইতিহাসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য ঘাটতির মূল কারণ দেশটির অর্থনৈতিক কাঠামো, যেখানে ভোক্তারা প্রচুর ব্যয় করলেও পর্যাপ্ত সঞ্চয় করে না।
বিশেষজ্ঞ কিম্বারলি ক্লাউসিং বলেন, "যতক্ষণ পর্যন্ত সঞ্চয় ও কর ব্যবস্থার ভারসাম্য ঠিক করা না হবে, ততক্ষণ বাণিজ্য ঘাটতি চলতেই থাকবে।"
You Must be Registered Or Logged in To Comment লগ ইন করুন?