গাজা উপত্যকাকে যুক্তরাষ্ট্র-নিয়ন্ত্রিত ‘মধ্যপ্রাচ্যের রিভেরা’ বানানোর যে পরিকল্পনা করছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প, তার বিকল্প হিসেবে মিসর বিশ্বব্যাংকের সহযোগিতায় গাজা পুনর্গঠনের একটি পরিকল্পনা তৈরি করছে। মিসরের এই পরিকল্পনা অনুসারে, পুনর্গঠন প্রক্রিয়া অস্থায়ীভাবে একটি সামাজিক বা সম্প্রদায়ভিত্তিক সমর্থন কমিটির অধীনে পরিচালিত হবে যেখানে হামাসের কোনো সদস্য থাকবে না। মিসরের প্রস্তাবিত কমিটিতে স্বাধীন টেকনোক্র্যাট, নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি এবং শ্রমিক ইউনিয়নের সদস্যরা অন্তর্ভুক্ত থাকবে, যাতে কোনো নির্দিষ্ট গোষ্ঠী এককভাবে আধিপত্য বিস্তার করতে না পারে।
সংযুক্ত আরব আমিরাত ও কাতারের মতো আরব দেশগুলো গাজা পুনর্গঠনের জন্য অর্থায়নের পরিকল্পনা করছে। তবে তাদের শর্ত হচ্ছে, ফিলিস্তিনিদের গাজায় থাকার অধিকার থাকতে হবে এবং তাদেরকে মিসর বা জর্ডানে সাময়িক বা স্থায়ীভাবে চলে যেতে বাধ্য করা যাবে না। পুনর্গঠনের এই প্রক্রিয়া তিন থেকে পাঁচ বছর সময় নিতে পারে, কারণ ইসরায়েলের ধ্বংসযজ্ঞে গাজার প্রায় ৬৫ শতাংশ অবকাঠামোই মাটির সঙ্গে মিশে গেছে। আগামী ২৭ ফেব্রুয়ারি রিয়াদে একটি আরব সম্মেলন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে, যেখানে গাজার জন্য ট্রাম্প পরিকল্পনার বিকল্প নিয়ে আলোচনা হবে এবং এর কিছু অংশ প্রকাশ করা হবে। এখন পর্যন্ত সৌদি আরব সরাসরি হামাসকে পুনর্গঠনের প্রক্রিয়া বা গাজার প্রশাসন থেকে বাদ দেয়ার আহ্বান জানায়নি। তবে সংযুক্ত আরব আমিরাতের শীর্ষ কূটনৈতিক উপদেষ্টা আনোয়ার গারগাশ আরব লীগের মহাসচিব আহমেদ আবুল ঘেইতের সাম্প্রতিক এক বক্তব্যকে ‘যথাযথ ও যৌক্তিক’ বলে প্রশংসা করেছেন, যেখানে তিনি গাজার প্রশাসন থেকে হামাসের সরে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছিলেন।
আবুল ঘেইত বলেন, গাজা থেকে ফিলিস্তিনিদের বাস্তুচ্যুত করার হুমকি এবং এর ফলে গাজা উপত্যকার ধ্বংস ও সামাজিক কাঠামো ভেঙে পড়ার প্রেক্ষাপটে ফিলিস্তিনি জনগণের স্বার্থকে অবশ্যই আন্দোলনের স্বার্থের (হামাস) চেয়ে অগ্রাধিকার দিতে হবে। ট্রাম্পের পরিকল্পনা অনুযায়ী প্রায় ২০ লাখ ফিলিস্তিনিকে গাজা থেকে সরিয়ে নেয়া হলে তা এই অঞ্চলে এক চক্রাকার সংকট তৈরি করবে এবং শান্তি ও স্থিতিশীলতার ওপর ফেলবে ধ্বংসাত্মক প্রভাব। আরব বিশ্ব এটি কখনোই মেনে নেবে না, কারণ তারা গত ১০০ বছর ধরে এই ধারণার বিরুদ্ধে লড়াই করে আসছে।
মধ্যপন্থী আরব কূটনীতিকরাও মনে করেন, ট্রাম্পের পরিকল্পনাটি বাস্তবসম্মত নয় এবং নৈতিকভাবেও সঠিক নয়। পশ্চিম তীরের শাসক ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ (পিএ) এই কমিটি পরিকল্পনাকে সমর্থন করেনি। কারণ তারা আশঙ্কা করছে যে, এটি গাজা ও পশ্চিম তীরের মধ্যে স্থায়ী বিভাজনের সূচনা করতে পারে এবং এতে দুটি পৃথক প্রশাসনিক ব্যবস্থা তৈরি হবে।
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও ট্রাম্প পরিকল্পনার বিকল্পকে পুরোপুরি প্রত্যাখ্যান করেননি। তবে তিনি বলেন, যে কোনো পরিকল্পনায় যদি হামাস গাজায় থাকে, তাহলে তা একটি সমস্যা হবে। কারণ ইসরায়েল এটি কখনোই মেনে নেবে না। অর্থাৎ, এটি সংকট সমাধানের পরিবর্তে আবারো আগের জায়গায় ফিরে যাবে।
You Must be Registered Or Logged in To Comment লগ ইন করুন?