সাম্প্রদায়িক মনোভাবের কারণে ঐতিহাসিক নিদর্শন ভেঙে ফেলা হচ্ছে — সংবেদনশীল যেকোনো ইতিহাসবিদকে তা মর্মাহত করবে। তেমনি বিখ্যাত স্কটিশ ঐতিহাসিক উইলিয়াম ড্যালরিম্পলকে-ও মর্মাহত করেছে।
আগ্রায় মোগল সম্রাট আরঙ্গজেবের কুঠিখ্যাত ‘মুবারক মঞ্জিল’ ভেঙে ফেলেছে স্থানীয় এক ‘আবাসন নির্মাতা’। ঐতিহাসিক এই স্থাপনার বিনাশ ক্ষুদ্ধ করেছে অনেককে, যাদের একজন হলেন ভারতে বসবাসকারী খ্যাতনামা এই ইতিহাসবেত্তা।
ওই ঘটনা নিয়ে ভারতীয় গণমাধ্যম টাইমস অব ইন্ডিয়ায় প্রকাশিত প্রতিবেদনের ছবি নিজের ‘এক্স’ (সাবেক টুইটার) একাউন্টে পোস্ট করেন করেন ড্যালরিম্পল। ওই পোস্টে পর্যটনের গন্তব্য হিসেবে এভাবে যে ভারত তার আকর্ষণ হারাচ্ছে সেকথাও লিখেছেন।
ড্যালরিম্পল বলেন, ‘পর্যটনের গন্তব্য হিসেবে নিজের আকর্ষণ ধ্বংস করতে ভারত যেন উঠেপড়ে লেগেছে। এভাবে নিজের প্রধান ঐতিহ্যকেন্দ্রগুলোকে অবহেলা করা হচ্ছে। ডেভেলপারদের সেসব ঐতিহাসিক সম্পদকে গুঁড়িয়ে দিতে দেওয়া হচ্ছে। তারপরে বিশাল এই দেশটিতে যখন দুবাই বা সিঙ্গাপুরের চেয়েও কম পর্যটক আসবেন– তখন বিস্মিত হওয়ার ভান করবেন।’
এরপরের পোস্টে ভারত কেন আগের মতো পর্যটক টানতে পারছে না তাঁর ব্যাখ্যা দিয়ে উইলিয়াম ডালরিম্পল লিখেছেন, ‘আগ্রার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি ঐতিহাসিক ভবনকে কর্তৃপক্ষের পূর্ণ সম্মতিতে ধ্বংস করা হলো, ঐতিহ্যের প্রতি যা ভারতের এই অবহেলা মর্মবিদারক।’
শাহজাহান, শাহজাদা সুজা ও আরঙ্গজেবসহ অনেক মোগল শাসক ঐতিহাসিক মুবারক মঞ্জিলে বাস করেছেন বলে জানা যায়। মোগল সাম্রাজ্যের সূর্য অস্তনমিত হলে— ব্রিটিশ শাসনের সময় কিছুটা পরিবর্তন এনে মুবারক মঞ্জিলকে আবগারিখানা বা কাস্টমস অফিস করা হয়েছিল।
এদিকে স্থানীয়রা টাইমস অব ইন্ডিয়াকে জানান, স্থাপনাটিকে রক্ষার জন্য পরিদর্শনে এসে মাপজোঁকও করেন কিছু কর্মকর্তা। এরপরেও ওই আবাসন নির্মাতা মুবারক মঞ্জিল গুঁড়িয়ে দিয়েছে।
স্থানীয় এক বাসিন্দা জানান, ঐতিহাসিক ভবনটি ভেঙে ফেলার বিরুদ্ধে তিনি একটি অভিযোগও দায়ের করেছিলেন। তবে কেউ কোনো পদক্ষেপ নেয়নি।
ঐতিহাসিক স্থাপনার এই অবহেলার বিষয়ে মন্তব্য করেছেন ভারতের ট্যুরিস্ট গাইড ফেডারেশনের মহাসচিব শাকিল চৌহান-ও। তিনি বলেন, ‘২০৪৭ সালের মধ্যে পর্যটনকে ১ লাখ কোটি ডলারের শিল্প এবং ১০ কোটি বিদেশি পর্যটককে আকর্ষণ করতে চায় কেন্দ্রীয় সরকার। কিন্তু, ঐতিহ্যমণ্ডিত স্থাপনাগুলোর প্রতি এ ধরনের অবহেলা সেই লক্ষ্য অর্জনকে বাধাগ্রস্ত করবে। মুবারক মঞ্জিল কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়’।
ভারতে মুসলমান শাসকদের সাথে জড়িত অন্যান্য স্থাপনাও যে এভাবে চরম অবহেলার শিকার হচ্ছে, তাঁর মন্তব্য সেটিই স্পষ্টভাবে উঠে আসছে।
You Must be Registered Or Logged in To Comment লগ ইন করুন?