clock

দাবায় ভারতের গুকেশের ইতিহাস

দাবায় ভারতের গুকেশের ইতিহাস

১৮ বছর ৮ মাস ১৪ দিন—এটা আজ গুকেশ ডোমরাজের বয়স। ভাবছেন, কোথাকার কোন ১৮ বছরের ছোকরা, এখনো তো চিনিই না, হঠাৎ তাঁর বয়স নিয়ে কথা কেন! হ্যাঁ, গুকেশ এক হিসাবে এখনো ছোকরাই।

তবে ভারতের তামিলনাড়ুর চেন্নাইয়ের এ ছোকরাই বড় এক কীর্তি গড়ে ফেলেছেন। গ্যারি কাসপারভের রেকর্ড ভেঙে তিনিই এখন বিশ্ব দাবার সর্বকনিষ্ঠ চ্যাম্পিয়ন।

সিঙ্গাপুরে সিরিজের শেষ ম্যাচে চীনের ডিং লিরেনকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন গুকেশ। ১৯৮৫ সালের ৯ নভেম্বর কাসপারভ বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হয়েছিলেন ২২ বছর ৬ মাস ২৭ দিন বয়সে।

সিরিজের শেষ ম্যাচটায় দুজনের লড়াইটা হাড্ডাহাড্ডিই হচ্ছিল। একপর্যায়ে মনে হচ্ছিল, ম্যাচটি ড্র হতে যাচ্ছে। কিন্তু হঠাৎই ৩২ বছর বয়সী ডিং লিরেন একটি ভুল চাল দিয়ে ফেলেন। চালটি দিয়েই বুঝতে পারেন, বড় ভুল হয়ে গেছে। হতাশায় টেবিলে চাপড় মারেন লিরেন। আর গুকেশ দুই হাত দিয়ে তাঁর মুখ ঢেকে ফেলেন। খানিক পর তিনি যখন মুখ থেকে হাত সরালেন, তাঁর চোখে জল। গুকেশ কাঁদছিলেন, যে কান্না আসলে আনন্দের।

সঙ্গে সঙ্গেই আন্তর্জাতিক দাবা ফেডারেশনের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে পোস্ট করা হলো। যেখানে লেখা ছিল, ‘দ্য ইয়াংগেস্ট ওয়ার্ল্ড চেস চ্যাম্পিয়ন ইন হিস্ট্রি।’ যে হলে খেলা হয়েছে, সেখানে ছিলেন অনেক ভারতীয়। তাঁরা সবাই তখন উল্লাসে মত্ত।

গুকেশ যখন ম্যাচ শেষে সংবাদ সম্মেলন কক্ষে হেঁটে যাচ্ছিলেন, তাঁর নামে স্লোগান দিচ্ছিলেন মানুষ। সংবাদ সম্মেলনে লিরেনকে ৭.৫-৬.৫ পয়েন্টে হারানো গুকেশ বলেছেন, ‘আমার পুরো স্ট্র্যাটেজি ছিল প্রতিটি গেমে যত বেশি সম্ভব তাঁকে চাপে রাখা।’

সেই স্ট্র্যাটেজি কাজে লাগায় পাঁচবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন বিশ্বনাথন আনন্দের পর দ্বিতীয় ভারতীয় হিসেবে এই ট্রফি জিতলেন গুকেশ।

উচ্ছ্বাসে ভেসে গেলেও প্রতিপক্ষের প্রশংসা করতে ভুললেন না, ‘তিনি একজন সত্যিকারের চ্যাম্পিয়নের মতো লড়েছেন।’ বোঝাই যাচ্ছে, বয়স মাত্র ১৮ বছর হলেও চিন্তাভাবনায় অনেক পরিণত গুকেশ। দাবা খেলায়ও অনেক আগে থেকেই তা–ই। ১২ বছর ৭ মাস ১৭ দিন বয়সে ভারতের সর্বকনিষ্ঠ গ্র্যান্ডমাস্টার হয়েছেন। আনন্দের পর প্রথম ভারতীয় হিসেবে জিতেছেন ক্যান্ডিডেট টুর্নামেন্ট।

নাক, কান ও গলাবিশেষজ্ঞ চিকিৎসক বাবা এবং অণুজীববিজ্ঞানী মায়ের সন্তান গুকেশের দাবায় হাতেখড়ি ৭ বছর বয়সে। ২০০৬ সালের ২৯ মে পৃথিবীর আলো দেখা গুকেশ দাবায় হাতেখড়ির দুই বছরের মধ্যেই প্রথম শিরোপা জেতেন।

২০১৫ সালে জেতেন অনূর্ধ্ব-৯ এশিয়ান স্কুল চেস চ্যাম্পিয়নশিপ। এর তিন বছর পর ২০১৮ সালে বিশ্ব ইয়ুথ চেস চ্যাম্পিয়নশিপে অনূর্ধ্ব-১২ বিভাগে জেতেন সোনার পদক। আর ২০২২ সালে হাংজুতে এশিয়ান গেমসে ভারতের হয়ে রুপার পদক।

২০২২ সালেই আরেকটি কীর্তি গড়েন গুকেশ। সর্বকনিষ্ঠ দাবাড়ু হিসেবে তিনি হারিয়ে দেন ম্যাগনাস কার্লসেনকে। পরে যে কার্লসেন হয়েছিলেন বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন। এখন তো গুকেশ নিজেই দাবার ইতিহাসে সর্বকনিষ্ঠ বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন।

You Must be Registered Or Logged in To Comment লগ ইন করুন?

সম্পর্কিত খবর

Follow US

Top Categories

Recent Comment