বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার জ্বালানি খাতে তিনটি ভুল পদক্ষেপ নিয়েছে বলে দাবি করেছেন অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ। তিনি বলেছেন, “দেশের জ্বালানি নীতি ভুল পথে এগিয়ে চলছে। পূর্ববর্তী সরকার যেসব শোষণ, লুণ্ঠন এবং অপতৎরতা চালিয়েছে, সেগুলোর মধ্যে জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাত ছিল অন্যতম। অন্তর্বর্তী সরকারও তিনটি ভুল পদক্ষেপ নিয়েছে, যা থেকে যে বার্তা পাওয়া যাচ্ছে, তা সুখকর নয়। বর্তমান সরকারের কার্যক্রমে পুরনো সরকারের গতিবিধির ধারাবাহিকতা দেখা যাচ্ছে।”
গতকাল ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে “কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র: অভিজ্ঞতা কী বলে?” শীর্ষক সেমিনারে তিনি এসব কথা বলেন। সেমিনারের আয়োজন করে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা)।
অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, “অন্তর্বর্তী সরকারের প্রথম ভুল পদক্ষেপ হলো ২০১০ সালের দায়মুক্তি আইন বাতিলের অধ্যাদেশ। এতে বলা হয়েছে, দায়মুক্তি আইনে যেসব প্রকল্প ও চুক্তি করা হয়েছে, সেগুলো অব্যাহত থাকবে, অর্থাৎ আগের প্রকল্প ও চুক্তির কার্যক্রম বন্ধ হবে না।”
গত বছরের ২৮ নভেম্বর অন্তর্বর্তী সরকারের জারি করা ওই প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়, “এ আইনের অধীন সম্পাদিত সব চুক্তি ও গৃহীত ব্যবস্থা চলমান থাকবে।”
তিনি আরও বলেন, “দ্বিতীয় ভুল পদক্ষেপ হলো রামপাল ও রূপপুরের মতো বড় প্রকল্পগুলো বাতিল না করা। আর তৃতীয় ভুল পদক্ষেপ হিসেবে গত জানুয়ারিতে সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় অনুষ্ঠিত ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামে আর্জেন্ট এলএনজির সঙ্গে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানির চুক্তি সই করা।”
সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ পরিবেশ নেটওয়ার্কের (বেন) প্রতিষ্ঠাতা অধ্যাপক ড. নজরুল ইসলাম। তিনি বলেন, “বাংলাদেশ নবায়নযোগ্য জ্বালানি নীতিতে ২০২০ সালের মধ্যে ১০ শতাংশ নবায়নযোগ্য জ্বালানি উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল, কিন্তু তা অর্জিত হয়নি। ২০১৮ সালের তথ্য অনুযায়ী, নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে মাত্র ৩৩০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্ভব হয়েছে, যা ২০২০ সালের লক্ষ্যমাত্রার ১২ শতাংশ মাত্র।”
তিনি আরো বলেন, “বাংলাদেশ ২০৪১ সালের মধ্যে মোট জ্বালানির ৪০ শতাংশ নবায়নযোগ্য করতে চায়, তবে অতীতের অবস্থা দেখে এ লক্ষ্য অর্জন সম্ভব কিনা, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে।”
এছাড়া, সেমিনারে রামপাল, পায়রা ও মাতারবাড়ীর বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কারণে স্থানীয় মানুষের জীবনযাত্রায় কী ধরনের নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে, তা তুলে ধরেন স্থানীয় ভুক্তভোগীরা। সেমিনারে জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. বদরূল ইমাম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. এমএম আকাশ, সেন্টার ফর এনভায়রনমেন্টাল অ্যান্ড জিওগ্রাফিক ইনফরমেশন সার্ভিসেসের (সিইজিআইএস) পরিচালক মোহাম্মদ মোক্তারুজ্জামানও বক্তব্য রাখেন।
You Must be Registered Or Logged in To Comment লগ ইন করুন?