কোরবানি শুধুমাত্র একটি ধর্মীয় উৎসব নয়; এটি বিশুদ্ধ ঈমান, আল্লাহর প্রতি পূর্ণ আত্মসমর্পণ ও আত্মত্যাগের এক জীবন্ত নিদর্শন। মহান আল্লাহ বলেছেন— “আল্লাহর কাছে পৌঁছে না এগুলোর গোশত ও রক্ত, বরং তাঁর কাছে পৌঁছে তোমাদের তাকওয়া।” (সুরা হজ, আয়াত ৩৭)।
কোরবানির প্রকৃত উদ্দেশ্য হলো আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন। হজরত ইবরাহিম (আ.) ও ইসমাঈল (আ.)-এর ত্যাগ কেবল ইতিহাস নয়, বরং প্রতিটি মুমিনের জন্য তাকওয়া, আনুগত্য ও আত্মনিয়োগের চিরন্তন আদর্শ।
তবে আজকের সমাজে কোরবানির প্রকৃত উদ্দেশ্য ও মহিমা অনেক সময় বিভিন্ন অসংগত কাজের মাধ্যমে ক্ষুণ্ন হচ্ছে। এসব কাজ একদিকে যেমন ইবাদতের পবিত্রতা নষ্ট করে, তেমনি আল্লাহর সন্তুষ্টির পথেও অন্তরায় সৃষ্টি করে।
নিচে এমন আটটি সাধারণ ভুল বা গর্হিত কাজ তুলে ধরা হলো, যা কোরবানির মূল রূহ ও মহাত্ম্যকে নষ্ট করে:
১. হারাম উপার্জনের অর্থে কোরবানি করা
কোরবানি একটি পবিত্র ইবাদত। হারাম উপায়ে উপার্জিত অর্থ থেকে ব্যয় করলে সেই কোরবানি আল্লাহর কাছে কবুল হয় না।
হাদিস: “আল্লাহ পবিত্র, তিনি পবিত্র ও হালাল ছাড়া কিছুই গ্রহণ করেন না।” (মুসলিম: ২২৩৬)
২. লোক দেখানোর উদ্দেশ্যে কোরবানি করা (রিয়া)
ইবাদত শুধুমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য হওয়া উচিত। লোক দেখানো কোরবানি রিয়ার শামিল এবং তা শিরক আসগারের (ছোট শিরক) পর্যায়ে পড়ে।
হাদিস: “সবচেয়ে বেশি আশঙ্কার বিষয় হলো রিয়া।” (সহিহ তারগিব: ৩২)
৩. কোরবানির পশু নিয়ে অহংকার করা
বেশি দামে বা বড় পশু কোরবানি করা দোষের নয়, কিন্তু সেটা যদি অহংকারের উপাদান হয়ে ওঠে, তাহলে তা গর্ব ও দাম্ভিকতার শামিল হয়, যা আল্লাহর নিকট ঘৃণিত।
কোরআন: “আল্লাহ দাম্ভিক অহংকারীকে পছন্দ করেন না।” (সূরা লুকমান: ১৮)
৪. জোরপূর্বক যৌতুকের পশু আদায় করা
ঈদকে কেন্দ্র করে যৌতুক আদায় করা অন্যায় ও ইসলামবিরোধী। উপহার আর চাপের পার্থক্য বুঝতে হবে।
৫. লোকলজ্জা বা গোশতের আশায় কোরবানি করা
আল্লাহর সন্তুষ্টি নয়, বরং লোকলজ্জা বা শুধুই গোশতের আশায় কোরবানি করলে তা আত্মত্যাগের মহিমা হারায়।
৬. কোরবানির পশুর প্রতি নিষ্ঠুরতা
অভিজ্ঞতা ও প্রস্তুতির অভাবে অনেকেই পশুকে কষ্ট দিয়ে জবেহ করেন, যা ইসলামে নিষিদ্ধ।
হাদিস: “ছুরি ধারালো করো, পশুকে আরাম দাও।” (তিরমিজি: ১৪০৯)
৭. বিসমিল্লাহ না বলা
পশু জবাইয়ের সময় আল্লাহর নাম না নেওয়া হলে সে পশুর গোশতই হালাল নয়।
কোরআন: “আল্লাহর নাম নেওয়া হয়েছে এমন পশুর গোশত খাও।” (সুরা আনআম: ১১৮)
৮. গোশত বা চামড়া বিক্রি করে কসাইকে পারিশ্রমিক দেওয়া
কোরবানির গোশত, চামড়া বা অন্যান্য অংশ বিক্রি করা বা কসাইকে পারিশ্রমিক হিসেবে দেওয়া হারাম।
হাদিস: “তাকে (কসাইকে) আমি নিজের পক্ষ থেকে পারিশ্রমিক দেবো।” (ইবনে মাজাহ: ৩০৯৯)
কোরবানির মাধ্যমে আমরা আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের এক অনন্য সুযোগ পাই। তবে তা যেন লোক দেখানো, অহংকার, হারাম উপার্জন কিংবা সাংস্কৃতিক চাপে পরিণত না হয়। কোরবানির মূল শিক্ষা হলো তাকওয়া, আত্মত্যাগ ও নিঃস্বার্থতা। আল্লাহ আমাদের সবাইকে কবুলকৃত কোরবানির তাওফিক দিন। আমিন।
You Must be Registered Or Logged in To Comment লগ ইন করুন?