বাংলা ভাষার অন্যতম প্রথিতযশা কবি রফিক আজাদের স্মৃতিবিজড়িত বাড়ি ভাঙার ঘটনায় শুরু হয়েছে তীব্র প্রতিক্রিয়া। রাজধানীর সেগুনবাগিচায় অবস্থিত সেই বাড়ি, যেখানে কবি রফিক আজাদ টানা ২৯ বছর বসবাস করেছিলেন এবং লিখেছেন অগণিত কালজয়ী কবিতা, সেটির একাংশ বুধবার সকাল থেকে বুলডোজার দিয়ে ভেঙে ফেলা হচ্ছে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হওয়া ছবিতে দেখা যায়, বাড়িটির দেয়ালে কবির ছবি, আর পাশেই ধ্বংসযজ্ঞের দৃশ্য। বিষয়টি মুহূর্তেই সাড়া ফেলে দেয় অনলাইনে। কবিপ্রেমীরা ক্ষোভ, দুঃখ ও উদ্বেগ প্রকাশ করে স্মৃতিবিজড়িত বাড়ি সংরক্ষণের দাবি জানান।
কবির স্ত্রী, শিক্ষাবিদ ও লেখক দিলারা হাফিজ বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, বাড়িটির একটি ইউনিটে তিনি থাকেন, বাকি তিন ইউনিট অন্যদের দখলে। গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষ বাড়ির পূর্ব পাশের দুটি ইউনিট গুঁড়িয়ে দিয়েছে। এর ফলে বিদ্যুৎ ও গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে, ফলে আর থাকা যাচ্ছে না।
তিনি বলেন, “১৯৮৮ সালে আমি ইডেন মহিলা কলেজে প্রভাষক থাকা অবস্থায় এ বাড়ির সাময়িক বরাদ্দ পাই। তবে বরাদ্দনামায় স্পষ্টভাবে লেখা ছিল, এই বরাদ্দ আমাকে মালিকানা দিচ্ছে না, কিন্তু নতুন আদেশ না দেওয়া পর্যন্ত এখানে থাকতেও বাধা নেই।”
২০১২ সালে সৈয়দ নেহাল আহাদ নামের এক ব্যক্তি বাড়িটি নিজের দাবি করলে দিলারা হাফিজ হাউজিং অ্যান্ড পাবলিক ওয়ার্কস ও গৃহায়ণ মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্টদের বিবাদী করে আদালতে মামলা করেন। আদালত স্থিতাবস্থা জারি করেন এবং ২০১৩ সালে সেটি স্থায়ী হয়।
মামলাটি এখনো বিচারাধীন, এবং আগামী ২৫ মে সাক্ষ্য গ্রহণের তারিখ নির্ধারিত রয়েছে। অথচ আদালতের স্থিতাবস্থা অমান্য করে হঠাৎ করেই উচ্ছেদ অভিযান চালানো হয় বলে অভিযোগ করেছেন দিলারা হাফিজ।
কবি রফিক আজাদ একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা, যিনি বাংলা একাডেমি পুরস্কার ও একুশে পদকপ্রাপ্ত। তাঁর কবিতায় যুদ্ধ, প্রেম, প্রতিবাদ ও দ্রোহ একসাথে মিশে আছে। এই বাড়িটি শুধু একটি আবাসন নয়, বরং কবির সৃষ্টিশীল জীবনের নীরব সাক্ষী। কবিপত্নী গতকালও গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ে গিয়ে আবেদন করেন বাড়ির একটি অংশ স্থায়ীভাবে সংরক্ষণের।
এই ঘটনায় কবি, সাহিত্যিক, গবেষক এবং সাধারণ পাঠক—সকলেই ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। অনেকেই সামাজিক মাধ্যমে লিখছেন, "রফিক আজাদ শুধু একজন কবি নন, আমাদের সাহিত্যের উত্তরাধিকার। তাঁর স্মৃতিকে এভাবে ভাঙা জাতীয় অপমান।" কেউ কেউ এই বাড়িকে ‘স্মৃতি জাদুঘর’ হিসেবে সংরক্ষণের আহ্বান জানিয়েছেন।
সরকারের কাছে দাবি উঠেছে, কবির স্মৃতিকে রক্ষায় বাড়ির অন্তত একটি অংশ সংরক্ষণের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক এবং বাড়ি ভাঙার পেছনে যারা দায়িত্বপ্রাপ্ত, তাদের জবাবদিহির আওতায় আনা হোক।
বর্তমানে বাড়ির যে অবস্থা, তাতে কবিপত্নী দিলারা হাফিজ মানসিক ও শারীরিকভাবে বিপর্যস্ত। তাঁর একটিই অনুরোধ—"এই বাড়ির দেয়ালে রফিক আজাদের নিঃশ্বাস লেগে আছে, প্লিজ এটাকে শেষ না করুন।"
You Must be Registered Or Logged in To Comment লগ ইন করুন?