জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে আওয়ামী লীগ সরকারের পদত্যাগ এবং শিক্ষা ও গণতান্ত্রিক অধিকার আদায়সহ ছয় দফা দাবিতে সমাবেশ করেছে গণতান্ত্রিক ছাত্র জোট।
শুক্রবার (৮ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন চত্বরে সমাবেশ করে সংগঠনটি। এতে সংহতি জানিয়ে ছাত্র ইউনিয়ন জাবি সংসদ (একাংশ), মার্কসবাদী ছাত্রফ্রন্ট জাবি শাখা, বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রী জাবি শাখার নেতাকর্মীরা অংশ নেন।
সমাবেশে গণতান্ত্রিক ছাত্র জোটের উত্থাপিত বাকি দাবিগুলো হলো, জাতীয় শিক্ষাক্রম-২০২১ বাতিল করা, নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যসহ শিক্ষা উপকরণের দাম কমানো, শ্রমিকদের বেতন ২৫ হাজার টাকা ও পরিষেবা বিল বাতিল করা এবং পাহাড়ে সেনা শাসন প্রত্যাহার ও সাইবার নিরাপত্তা আইন বাতিল করা।
সমাবেশে ছাত্র ইউনিয়ন জাবি সংসদের (একাংশ) সাধারণ সম্পাদক অমর্ত্য রায় বলেন, বর্তমান সরকারের উন্নয়নে সকলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা হয়নি। দেশে মেট্রোরেল বানানো হয়েছে কিন্তু উচ্চ ভাড়ার কারণে মধ্যবিত্ত ও নিন্মবিত্ত শ্রেণির লোকেরা সেই মেট্রোরেলে চড়তে পারছে না। যাদের শ্রমের ফলে উন্নয়ন হচ্ছে তারাই সেই উন্নয়নের সুফল থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। দেশের শিক্ষা খাতের বেহাল দশা। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে দেখা যায় উইকেন্ড কোর্স চালু করে বাণিজ্য করছে শিক্ষকরা। ফলে মূল শিক্ষার্থীদের দিকে খেয়াল না করে শিক্ষকরা নিজেদের বাণিজ্য পরিচালনায় ব্যস্ত হয়ে যাচ্ছে। আবাসিক হলগুলোর দশাও বেহাল। ২০১৮ সালের পর থেকে গণরুম প্রথা জোরালোভাবে চালিয়ে যাচ্ছে। ছাত্রলীগ গণরুমের এই শিক্ষার্থীদেরকে মারামারিসহ বিভিন্ন অপকর্মে সংশ্লিষ্ট করার জন্য জোর করে ব্যবহার করে।
কেন্দ্রীয় পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের তথ্য ও প্রচার সম্পাদক রোনাল চাকমা বলেন, ‘দেশের সবচেয়ে অভাগা জনগণ হলো পার্বত্য চট্টগ্রামের জনগণ। পার্বত্য এলাকার মানুষদের জায়গা জমি ছিনিয়ে নিয়ে পর্যটন শিল্প গড়ে তোলা হচ্ছে। মন্ত্রী-শাসকরা বলছেন পাহাড় কেটে পর্যটন শিল্প গড়ে তোলা হবে। কিন্তু প্রকৃতি ধ্বংস করে কেন শিল্প গড়ে তুলতে হবে? পাহাড়িরা তাদের অধিকার আদায়ের কথা বললে তাদেরকে বলা হয় দেশদ্রোহী। কিন্তু পাহাড়িদের জায়গা জমি দখল করে যে শিল্প গড়ে তোলা হয় এই কথা কেউ বলে না। তিনি আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছিলেন পার্বত্য চট্রগ্রাম শান্তিচুক্তির মাধ্যমে সেখানকার মানুষের মাঝে শান্তি ফিরে আসবে। কিন্তু হয়েছে তার উল্টো। শান্তি চলে গেছে সেখানকার মানুষের।
বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রী কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক দিলীপ রায় বলেন, গত ১৫ বছর ধরে দেশের বিরোধী মত বা পক্ষকে উপড়ে ফেলা হয়েছে। আমরা দেখেছি কিছুদিন আগে নায্য অধিকার আদায়ের প্রতিবাদ করার জন্য পোশাক শ্রমিককে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। আওয়ামী সরকার স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের কথা বলে। সেই স্বাধীনতা যুদ্ধে কি শ্রমিকরা ছিলেন না? বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলো নির্যাতনের কারখানা বানানো হয়েছে। ক্ষমতাসীন বড় ভাইরা জুনিয়রদের নানাভাবে নির্যাতন করে কিন্তু তার বিচার হয়না। দেশের উন্নয়ন কাজে জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা হয় না। সরকার শুধুমাত্র ভোটাধিকারকে গণতান্ত্রিক অধিকার হিসেবে দেখে। বাকি অধিকারগুলোতে তাদের নজর নেই। তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদগুলো বিলুপ্ত করে দিয়েছে। এতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে গণতন্ত্রের চর্চাও বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। যে শ্রমিকদের শ্রমে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভবনগুলো নির্মাণ করছে তাদের ছেলে মেয়েরা সেই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে পারছে না। তাহলে কিসের উন্নয়ন? এই উন্নয়নের চরিত্র পাল্টাতে হবে।
সমাবেশে ছাত্রফ্রন্ট (মার্কসবাদী) জাবি শাখার সংগঠক সজীব আহমেদের সঞ্চালনায় আরও বক্তব্য রাখেন, মার্কসবাদী ছাত্রফ্রন্টের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি সালমান সিদ্দিকী, ছাত্র ইউনিয়ন জাবি সংসদের সাংস্কৃতিক সম্পাদক আশফার রহমান নবীন ও গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিলের সাধারণ সম্পাদক সাইদুল হক নিশান।