জাতীয় পরিচয়পত্রের (এনআইডি) সেবা এখনই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগে যাচ্ছে না। এর জন্য প্রয়োজনীয় অফিস, লোকবলসহ অন্যান্য প্রস্তুতি সম্পন্ন হওয়ার আগ পর্যন্ত এনআইডি’র কার্যক্রম ইসির অধীনেই থাকবে বলে জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশন (ইসি) সচিব মো. জাহাংগীর আলম।
বুধবার (২০ সেপ্টেম্বর) নির্বাচন ভবনের নিজ দফতরে সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে এনআইডি বিষয়ে পাস হওয়া আইনের বিধানের কথা উল্লেখ করে তিনি এসব কথা জানান।
মো. জাহাংগীর আলম বলেন, ‘জাতীয় পরিচয়পত্র নিবন্ধনের বিষয় নতুন আইনে দেওয়া আছে, সরকার যখন গেজেট প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে এটি কার্যকর করার তারিখ নির্ধারণ করবে, তখন কার্যকর হবে। যতক্ষণ সরকার আইন কার্যকর হওয়ার তারিখ নির্ধারণ না করবে, ততক্ষণ পর্যন্ত এনআইডি কার্যক্রম যেভাবে আছে, সেভাবেই থাকবে।’
তিনি বলেন, ‘এ আইনে যা কিছুই থাকুক না কেন, আইন কার্যকর না হওয়া পর্যন্ত নির্বাচন কমিশন এনআইডির কার্যক্রম পরিচালনা করবে। অর্থাৎ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় যতদিন পর্যন্ত সম্পূর্ণ প্রস্তুতি (দফতর ও জনবল) সম্পন্ন করে তারিখ নির্ধারণ না করবে, ততদিন ইসিই এ কাজ পরিচালনা করবে। এ নিয়ে কোনও সমস্যা দেখি না।’
এনআইডি স্বরাষ্ট্রের অধীনে গেলে ভোটার তালিকার কী হবে, এমন প্রশ্নের জবাবে ইসি সচিব বলেন, ‘ভোটার তালিকার জন্য পৃথক আইন আছে। দুটো সম্পূর্ণ ভিন্ন বিষয়। ভোটার হালনাগাদ নির্বাচন কমিশনই করবে। রাষ্ট্রই ইসিকে এনআইডির দায়িত্ব দিয়েছিল। আবার আইন করে নিয়ে যাচ্ছে। আইনের পর এখন বিধিমালা হবে। এরপর অফিস, জনবল নিয়োগ করতে হবে। এরপর এনআইডি নেবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।’
ইসি পৃথক আইনে ভোটার তালিকা প্রণয়নের কথা বললেও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেছেন ভিন্ন কথা। সংসদে বিলটি তোলার দিন ৫ সেপ্টেম্বর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘ভোটার তালিকার ক্ষেত্রে এই আইন কোনও বাধা হবে না। যখন নাগরিকের বয়স ১৮ বছর হয়ে যাবে, তখনই তিনি ভোটার হয়ে গেছেন বলে নোটিশ পেয়ে যাবেন। তার নাম ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবে।’
আইনে বলা হয়েছে, নির্বাচন কমিশনের চাহিদা মোতাবেক নিবন্ধক প্রয়োজনীয় তথ্য-উপাত্ত প্রদান করবে। এ জন্য নিবন্ধকের কার্যালয়ের অধীন একটি সেল থাকবে। এই সেলে নির্বাচন কমিশনের এক বা একাধিক কর্মচারী দায়িত্ব পালন করবেন।
জনবল নিয়োগ, অফিস স্থাপনসহ যাবতীয় কার্যক্রম শেষ করে ইসির হাত থেকে এনআইডি স্বরাষ্ট্রে যেতে ২০২৫ সাল লেগে যাবে বলে নির্বাচন কমিশন ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে। আইন পাসের বেশ আগেই ইসি ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি যৌথ প্রতিবেদনেও এমনটা জানানো হয়েছিল।
এনআইডি সার্ভার বন্ধ করার বিষয়ে সচিব বলেন, ‘কখনও শাটডাউন হয়ে যায়, কখনও করতে হয়। এটি আগাম জানানো সম্ভব হয় না। ইলেকট্রনিক ডিভাইস যেকোনও সময় শাটডাউন হতে পারে। যেখানে তথ্য ভাণ্ডার থাকে, সেখানেই সাইবার হামলার ঝুঁকি থাকে। ঝুঁকি থাকলে সুরক্ষার জন্য নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়ার অধিকার সবার থাকে।’
অনেক সেবাগ্রহীতা থাকায় কোনও আগাম ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগ আছে কিনা, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘ডাটাবেজ একটা। ঝুঁকি তো থাকবেই। এটা আসলে করার কিছু নেই। আগে বুঝতে হবে বিপদ বা রেগুলার রক্ষণাবেক্ষণ এ জাতীয় বিষয়গুলো। ঝুঁকি সবসময় থাকে। যখন যে পরিস্থিতি আসবে সে অনুযায়ী প্রতিরক্ষা করতে হবে। একটা ব্যাংকের যেমন যেকোনও সময় ঝুঁকি থাকে, তেমন এত বড় ডাটাবেজ, আমাদেরও ঝুঁকি আছে।’
তিনি বলেন, ‘এটা মূল্যবান একটা সম্পদ। এটা প্রতিনিয়ত আপডেট করা হচ্ছে। এটা গতানুগতিক কাজ। আর একদিন-দু’দিনের জন্য সার্ভার অফ সারা দুনিয়ায় হয়।’
সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতির বিষয়ে মো. জাহাংগীর আলম আরও বলের, ‘ইসির নির্দেশনা অনুযায়ী, ভোটের প্রস্তুতি রোডম্যাপ অনুযায়ী এগিয়ে নিচ্ছি। আমরা পিছিয়ে নেই। প্রশিক্ষক তৈরির প্রশিক্ষণ চলছে, গত ২ সেপ্টেম্বর শুরু হয়েছে। তারা ১০ লাখ ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ দেবে।’
সচিব জানান, এরপর ইউএনও, জেলা নির্বাচন কমিশনার, জেলা প্রশাসক, বিভাগীয় কমিশনার, পুলিশ সুপার, আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা, পুলিশ কমিশনারদের প্রশিক্ষণ অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহ থেকে শুরু হবে। চারটা ব্যাচে ১০০ জনকে প্রশিক্ষণ দেবো।
আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘অনলাইনে মনোনয়নপত্র জমা, আইন সংশোধন ইত্যাদি সম্পর্কে ব্রিফিং হবে। নভেম্বর মাসব্যাপী প্রশিক্ষণ চলবে।’
ইসি সচিব বলেন, ‘সংসদ নির্বাচনে রিটার্নিং কর্মকর্তা কে হবেন, তা এখন সিদ্ধান্ত হয়নি। তফসিলের সিদ্ধান্তও হয়নি। কমিশনের বৈঠকে কমিশন সিদ্ধান্ত নেবে। ডিসেম্বরের শেষ অথবা জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে ভোটগ্রহণ হবে।’
ভোট বিতর্কিত না করার জন্য বার্তা কী, এমন প্রশ্নের জবাবে জাহাংগীর আলম বলেন, ‘মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে একটা পত্র দেওয়া হয়েছে। তারা মাঠ পর্যায়ে এটা জানাবে। আমরা টাইম লাইনের মধ্যে ঢুকে গেছি। একটা সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনের জন্য কমিশন যখন যে সিদ্ধান্ত দেবে, সে অনুযায়ী সব অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ নিয়ে আমরা কাজ করবো।’