জাবিতে সাংবাদিককে মারধরের প্রতিবাদে মানববন্ধন

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত সাংবাদিককে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা মারধর ও লাঞ্ছিত করার প্রতিবাদে মানববন্ধন করেছেন ক্যাম্পাসে কর্মরত সাংবাদিকরা। বুধবার দুপুর দেড়টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনার সংলগ্ন সড়কে এই কর্মসূচি পালন করেন তারা। এতে সংসহতি জানিয়ে উপস্থিত ছিলেন বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষকবৃন্দ।

মানববন্ধনে বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের অধ্যাপক কামরুল আহসান বলেন, ‘শুধু সাংবাদিকই নয় একজন সাধারণ শিক্ষার্থী নির্দয়ভাবে কোনও শিক্ষার্থী বা সংগঠনের নেতাকর্মীদের দ্বারা আহত হওয়াটা খুবই ন্যাক্ক্যারজনক ঘটনা। বিশ্ববিদ্যালয়ে এরকম ঘটনা প্রায়ই শোনা যায়। কিন্তু আমরা লক্ষ্য করি এসব কর্মকাণ্ডের কোনও সঠিক বিচার হয় না। সাংবাদিকদরা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়াচডগ হিসেবে কাজ করে। আমাদের মূল্যবোধের অবক্ষয়ের শেষ সময়ে আলো হয়ে এই মানববন্ধনে দাঁড়িয়েছি আমরা। জানিনা এর সুষ্ঠু বিচার প্রশাসন আদৌ করতে পারবে কিনা। আমাদের দাবি এই ঘটনার সুষ্ঠু বিচার হোক।’

ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের অধ্যাপক মো: শামছুল আলম সেলিম বলেন, ‘সাংবাদিকরা আজকে আরও একবার অপকর্মের বিরুদ্ধে সাহস নিয়ে এখানে দাঁড়িয়ে প্রমাণ করেছে তারা প্রতিবাদের বিরুদ্ধে অনন্য। আমরা দেখি সাংবদিকরা কথা বলতে গেলেই বিভিন্ন আইন প্রণয়ন করে তাদে মুখ বন্ধ করার চেষ্টা করা হয়।  আমরা এই মুহূর্তে একটি ভীতিকর অবস্থার মধ্যে অবস্থান করছি। উপাচার্য মহোদয় বলেছেন এই ঘটনায় জড়িত কাউকে ছাড় দেওয়া হবেনা। তবে তিনি কতটুকু এর বাস্তবায়ন করতে পারবেন সেটি নিশ্চিত নয়। দ্রত সময়ের মধ্যে সুষ্ঠু তদন্ত করে জড়িতদের সর্বোচ্চ শাস্তির আওতায় আনা হোক।’

দৈনিক যায়যায় দিনের বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি শিহাব উদ্দিন বলেন, একজন সাংবাদিকের উপর কোনও কারণ ছাড়াই পূর্বপরিকল্পিতভাবে হামলা করার প্রতিবাদের আমরা এখানে উপস্থিত হয়েছি। আমরা লক্ষ্য করেছি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষমতাসীন ছাত্র সংগঠন নানা অপকর্মে জড়িত থাকলেও প্রশাসন তাদের বিরুদ্ধে কার্যকর কোনও ব্যবস্থা গ্রহণ করে না। আমাদের উদাত্ত আহ্বান প্রশাসন দ্রুত এই ঘটনার সুষ্ঠু বিচার করুক।’

দৈনিক ইত্তেফাকের বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি আরিফুজ্জামান উজ্জ্বল বলেন, ‘সাংবাদিক আসিফ আল মামুনের সাথে ছাত্রলীগ যে ন্যাক্যারজনক আচরণ করেছে তার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। আমরা দেখেছি ছাত্রলীগ একটার পর একটা অপকর্ম করে কৌশলে পার পেয়ে যায়। এই প্রশাসনের পৃষ্ঠপোষকতা পায় বলেই তারা অপকর্মে লিপ্ত হওয়ার সাহস পায় এবং সহজে দায়মুক্ত হতে পারে। প্রসাশন তাদেরকে কৌশলে নামমাত্র শাস্তি প্রদান করে দায়মুক্তি দিয়ে থাকে। দশজনের জায়গায় একজনে শাস্তির আওতায় আনে। এই ক্ষমতার প্রয়োগ করে দায়মুক্তির অপসংস্কৃতি থেকে প্রশাসন বেরিয়ে এসে সুষ্ঠু বিচার করতে হবে। দ্রুত সময়ের মধ্যে এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে বিচার করতে হবে।’

এর আগে গত বুধবার (২১ আগস্ট) রাতে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলে বার্তা সংস্থা ইউনাইটেড নিউজ অব বাংলাদেশ (ইউএনবি) এর ক্যাম্পাস প্রতিনিধি আসিফ আল মামুনকে মারধর ও লাঞ্ছিত করে শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। হলের অতিথি কক্ষে র‍াজনৈতিক আলোচনা চলাকালে বাইরে থেকে ভিডিও করছিল এই সন্দেহে ভুক্তভোগীকে মারধর করা হয়। ভুক্তভোগী আসিফ আল মামুন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা ও গণমাধ্যম অধ্যয়ন বিভাগে অধ্যয়নরত ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের (৪৬ ব্যাচ) শিক্ষার্থী।