বঙ্গবন্ধু কন্যাকে বরণ করতে প্রস্তুত রংপুর

প্রধানমন্ত্রীকে শুভেচ্ছা ও স্বাগত জানিয়ে শতাধিক তোরণ আর ব্যানার-ফেস্টুনে সাজানো হয়েছে নগরী। বঙ্গবন্ধু কন্যার আগমনের উপলক্ষে, নতুন রং আর তুলির ছোঁয়া পেয়েছে নগরীর প্রতিটি সড়ক। রংপুর জিলা স্কুল মাঠে নৌকার আদলে নির্মাণ করা হয়েছে সভামঞ্চ।

আগামী বুধবার (২ আগস্ট) তিনি রংপুর জিলা স্কুল মাঠে আওয়ামী লীগের বিভাগীয় জনসভায় বক্তব্য দেবেন। জনসভায় ১০ লাখের বেশি মানুষের সমাগম হতে পারে বলে দলীয় নেতারা প্রত্যাশা করছেন। প্রধানমন্ত্রী রংপুরে ২৭টি উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন এবং ৫টি প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন। সঙ্গে নতুন প্রতিশ্রুতির ঘোষণাও দিতে পারেন তিনি।

এদিকে, প্রধানমন্ত্রীর আগমনকে কেন্দ্র করে উজ্জীবিত আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা। বিভাগীয় জনসভায় ১০ লাখের বেশি জনসমাগমের প্রস্তুতি নিচ্ছেন তারা। এজন্য জেলা-উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে চলছে প্রচার-প্রচারণা। কেন্দ্রীয় একাধিক নেতা রংপুরে অবস্থান করছেন। তারা বিভাগীয় জনসভার স্থান, মঞ্চসহ উপস্থিতির বিষয়ে তদারকি করছেন।

সোমবার সকালে রংপুর জিলা স্কুল মাঠে বিভাগীয় জনসভাস্থল পরিদর্শন করেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক, নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, সাংগঠনিক সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী, এস এম কামালসহ দলের অন্য নেতাকর্মীরা। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে সফরসূচি প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রীর একান্ত সহকারী সচিব ইসমাত মাহমুদা। এ সফরসূচি থেকে জানা যায়, প্রধানমন্ত্রী কাল বেলা সাড়ে ১২টায় তেজগাঁও বিমানবন্দর থেকে হেলিকপ্টারে রংপুরের উদ্দেশে রওনা দেবেন। প্রধানমন্ত্রীর হেলিকপ্টার দুপুর ২টায় রংপুর ক্যান্টনমেন্ট হেলিপ্যাডে অবতরণ করবে। পরে ২টা ৫মিনিটে ক্যান্টনমেন্ট হেলিপ্যাড থেকে সড়ক পথে রংপুর সার্কিট হাউজের উদ্দেশে রওনা দেবেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী ২টা ১৫ মিনিটে সার্কিট হাউজ মিলনায়তনে বিভাগীয় পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় করবেন। ৩টায় প্রধানমন্ত্রী রংপুর জিলা স্কুল মাঠের বিভাগীয় জনসভার উদ্দেশে রওনা দেবেন। সেখানে তিনি রংপুর বিভাগের উন্নয়নে বিভিন্ন প্রকল্পের উদ্বোধন করবেন। পরে বিকেল ৫টা ২০ মিনিটে জনসভায় বক্তব্য শেষে তিনি ক্যান্টনমেন্ট হেলিপ্যাডের উদ্দেশে সড়কপথে রওনা দেবেন। পরে সেখান থেকে হেলিকপ্টারে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

রংপুর জেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক একেএম ছায়াদত হোসেন বকুল বলেন, মহাসমাবেশে ১০ লাখের বেশি মানুষের সমাগমের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। রংপুর বিভাগের ৫৮টি উপজেলার প্রতিটি উপজেলা থেকে ৩ থেকে ৪ হাজার মানুষকে আনার প্রস্তুতি রয়েছে।

মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক আবুল কাশেম বলেন, জনসভা সফল করতে আওয়ামী লীগের বিভাগীয় বর্ধিত সভাও করা হয়েছে। দলের শীর্ষ নেতারা ছাড়াও এমপি ও মন্ত্রীরা সবাই রংপুরের এই সমাবেশ সফল করতে বিভিন্নভাবে দিকনির্দেশনা দিচ্ছেন।

রংপুর মহানগর আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক ডা. দেলোয়ার হোসেন বলেন, দীর্ঘদিন পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাদের মাঝে আসছেন। নিশ্চয়ই তিনি এখানে উন্নয়নমূলক কর্মসূচির ঘোষণা দেবেন। আমরা সেই অপেক্ষায় আছি।

রংপুরে ২৭ প্রকল্পের উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রংপুরে এক হাজার ২৪০ কোটি টাকার ২৭ প্রকল্পের উদ্বোধন এবং নতুন করে আরও ৫টি প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন। রংপুর জেলা প্রশাসন সূত্র জানিয়েছে, ২৭ প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে-শেখ রাসেল মিডিয়া সেন্টার, শেখ রাসেল ইনডোর স্টেডিয়াম, শেখ রাসেল সুইমিং পুল, পীরগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন জলাশয়ের জলাবদ্ধতা নিরসন শীর্ষক প্রকল্প, বিভাগীয় মহিলা ক্রীড়া কমপ্লেক্স, পালিচড়া স্টেডিয়াম, নলেয়া নদী পুনঃখনন, আলাইকুমারী নদী পুনঃখনন ইত্যাদি। এছাড়াও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নভোথিয়েটার নির্মাণ, রংপুর জেলায় বিটাক কেন্দ্র স্থাপন, বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন সচিবালয়ের রংপুর আঞ্চলিক কার্যালয়, রংপুর কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অফিস ভবন এবং লেডিস হোস্টেলের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন।

দিনাজপুর থেকে অংশ নেবেন ১ লাখ নেতাকর্মী : দিনাজপুর প্রতিনিধি জানান, জেলা থেকে অন্তত ১ লাখ নেতাকর্মী রংপুরে প্রধানমন্ত্রীর জনসভায় যোগ দেবেন। এ জন্য ব্যবস্থা করা হয়েছে একটি বিশেষ ট্রেন, ৩১৬টি বাস ও কয়েকশ মাইক্রোবাস। এছাড়াও প্রায় ৩০ হাজার মোটরসাইকেল নিয়ে রংপুরে যাবেন নেতাকর্মীরা। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন দিনাজপুর জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ফারুকুজ্জামান চৌধুরী মাইকেল।

বাংলাদেশ রেলওয়ে পশ্চিমাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক অসীম কুমার তালুকদার জানান, রংপুর বিভাগের প্রতিটি জেলার আওয়ামী লীগের নেতারা যোগাযোগ করেছেন। ভাড়া প্রদান সাপেক্ষে বুধবার আটটি ট্রেন তারা ব্যবহার করবেন। অন্যান্য ট্রেনের সময়সূচিতে যেন কোনো ব্যঘাত না ঘটে সেভাবেই সাজানো হয়েছে।